মেঘবিলাসী পাখি…
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:
‘মেঘ হও’ একটি নাম। দুই শব্দের একটি বাক্যও বলা চলে। শুনলেই মনে হয় এর মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক কাব্যিকতা। সাধারণরা নিশ্চয়ই ভাবছেন ‘মেঘ’ নিয়ে লেখা কোন কবিতা বা গল্প-উপন্যাসের শিরোনাম এটি। যাতে পাওয়া যাবে কবি বা সাহিত্যিকের শব্দের খেলা বা জীবনের নানা বাঁকের উত্থান-পতনের বর্ণনা, যা মেঘ হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশে। কিন্তু এর কিছুই নয়। এটি একটি মাছরাঙ্গা পাখির নাম। বাংলাদেশে এ নামের পাখিটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সুন্দরবনে। অন্যান্য স্থানেও দেখা যায়, তবে কম।
আমাদের দেশে যে সাত ধরনের মাছরাঙ্গা আছে, তার মধ্যে এ প্রজাতির পাখিটি সবচেয়ে বড় হয়। মেঘ হও মাছরাঙ্গার ইংরেজি নাম Stork-billed Kingfisher । তাকে ইংরেজি তে Mystery Bird বা Misleading Bird বলা হয় যদিও তার কারন জানা যায়নি । বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাছরাঙ্গা এই মেঘ হও। বৃহদাকৃতির ছোড়ার মত লাল ঠোঁট আর চোখে অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে বসে থাকে পুকুর, জলাধার ,বিল হালকা স্রোতের নদীর পাশের গাছে । সুযোগ পেলেই এত দ্রুত গতিতে মাছের উপর হামলে পরে যে মাছ কিছু বুঝে উঠার আগেই তার স্থান হয় গাছের ডালে মেঘ হও এর ঠোঁটে । মাছ ছাড়াও কাঁকড়া , ব্যাঙ , ইঁদুর, গিরগিটি তেও তার রুচির কমতি নেই । ঠোট দিয়ে শিকারকে গাছের ডালে আছড়ে আছড়ে শিকার যখন পটল তুলতে যায় তখন তা আরামের গলধঃকরন করে বৃহদাকৃতির এই মাছরাঙ্গা ।
পাখিটি নিভৃতচারী । একলাই থাকে বেশির ভাগ সময় । মেঘ হও দম্পত্তিকে এক সাথে দেখা না গেলেও তারা কাছাকাছি গাছেই থাকে। পিউ পিউ পিউ করে যদি কখনও তার ডাক শোনেন তাহলে মনে করবেন সে তার সঙ্গিনীকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে । বছরের প্রথম নয়টি মাসই তাদের প্রজনন কাল, বাকি সব মাছরাঙ্গার মত মাটির কোটরে বাসা বানায়, তবে গাছের ফোকরেও তাদের বাসা বানাতে দেখা যায় । সাদা রঙের ৪-৫টি ডিম পাড়ে । বাচ্চা বড় করতে পনের বিশ দিন সময় নেয় । তারা বড় হয়ে শিকার করা শিখে বাবা মার কাছ থেকে । তার পর পাক্কা শিকারি হয়ে উঠলে বসে থাকে গাছের ডালে মাছ ধরার জন্য । আর মাঝে মাঝে গম্ভীর ভাবে ডাকে ‘মেঘ হও মেঘ হও’ ।
প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল