ক্ষমা করুন স্যার, আমরা লজ্জিত

প্রথম প্রকাশঃ মে ১১, ২০১৫ সময়ঃ ৪:৩২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:২০ অপরাহ্ণ

মঈনুল ইসলাম রাকীব

jabiteacherশিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষক জাতির কারিগর। সেই কারিগরকে প্রহার করে আমাদের জাতির ইতিহাসে কলঙ্ক লেপে দিলো এক পুলিশ সার্জেন্ট। এই কলঙ্কিত ঘটনা নিয়ে লিখতে গিয়েও আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়।

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মেধাবী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁরা জাতির বিবেক। সেই বিবেককে দংশন করেছে ইমরান নামের পুলিশের এক সার্জেন্ট। তুচ্ছ একটি কারণে সরাসরি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাকিব আহমেদের গায়ে হাত তুলেছে এ পুলিশ সদস্য।

গত ৯ মে শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উত্তরার হাউস বিল্ডিং এলাকায় এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাকিব আহমেদ তার পিতামাতাকে ট্রেনে পৌঁছে দিতে ঐ এলাকায় যান। এসময় তার ব্যবহৃত গাড়ি আটকে দেয় ঐ সার্জেন্ট।

শিক্ষক রাকিব আহমেদ ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে বলায় ক্ষেপে ওঠে সার্জেন্ট ইমরান। এরপর ঐ শিক্ষক বলেন তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করান। কিন্তু এতে আরো অমানবিক হয়ে ওঠে সার্জেন্ট ইমরান। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কটূক্তি করে সে ঐ শিক্ষকের বাবা-মা নিয়েও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এর প্রতিবাদ করলে সে এসে রাকিব আহমেদের গলা চেপে ধরে। সাথে সাথে আরো কয়েকজন পুলিশ এসে মারতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষককে।

এসময় রাস্তার সাধারণ মানুষ এই বর্বর আচরণের প্রতিবাদ করে। পুলিশ তাদের কথা শোনেনি। এই হচ্ছে পুরো ঘটনার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে এভাবে মারধর করার ইতিহাস পৃথিবীতে আর আছে কি না আমরা জানিনা। এ আমাদের জাতীয় পরাজয়। আমাদের পুলিশ সার্জেন্টের মূল্যবোধের করুণ অবস্থার নির্মম উপস্থাপন।

এ ঘটনার পরপর ১০ মে দুপুর সাড়ে ১২ টা থেকে বেলা ৩ টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তারা সার্জেন্ট ইমরানকে স্থায়িভাবে চাকরিচূ্ত করার দাবি জানায়। এ ঘটনায় পুলিশ বিভাগ সার্জেন্ট ইমরানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে রাস্তা ছেড়ে দেয়া হয়। ১০ মে সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি প্রতিবাদ করে। ১১ মে জাবি শিক্ষক সমিতি ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সার্জেন্ট ইমরান একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের পরিচয় পেয়েও তার গায়ে হাত তোলার সাহস পেলো কোত্থেকে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক দেশের সবচেয়ে মেধাবী সন্তানদের অভিভাবক। তাদের হাতে গড়ে ওঠে জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাতারা। সেই শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা সার্জেন্ট ইমরান তাই একজন শিক্ষককে অপমান করেনি, সমগ্র শিক্ষক সমাজকে অপমান করেছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ এই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য অভিযুক্ত পুলিশকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে নির্দেশ প্রদান করুন। শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার মত ধৃষ্টতাপূর্ন আচরণ করে যদি পার পেয়ে যায় সার্জেন্ট ইমরান তবে তা জাতির জন্য লজ্জাজনক ঘটনা হবে এবং বিচার না পাওয়ার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হলে পুলিশ আরো আগ্রহ নিয়ে পেটাতে সাহস পাবে।

এই ঘৃন্য অপরাধী সার্জেন্টকে এখনি পুলিশ বিভাগ থেকে আজীবন বহিষ্কার করার জন্য অনুরোধ জানাই। যে সার্জেন্ট ইমরান একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতে পারে সে সার্জেন্ট ইমরান পুলিশের আইজিকেও লাঞ্ছিত করবেনা এর কোন গ্যারান্টি নেই। পাশাপাশি একজন নাগরিকের গায়ে হাত তোলার অপরাধে তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা হবে এমনই আশা।

রাকিব আহমেদ স্যার একজন মৃদৃভাষী শিক্ষক। সহকর্মী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তার সাবেক শিক্ষালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতদের কাছে তিনি খুবই সরল, শান্তশিষ্ট সজ্জন একজন ব্যক্তি। তাই এমন ঘটনা আমরা পুনর্বার দেখতে চাইনা প্রিয় বাংলাদেশে। আর কখনো পিতৃতুল্য শিক্ষকদের লাঞ্ছিত, অপমানিত হতে দেবোনা। এবারের মত আমাদের ক্ষমা করে দিন,স্যার। আমরা লজ্জিত, আমরা বিক্ষুব্ধ, জাতি রক্তাক্ত !

মঈনুল ইসলাম রাকীব
শিক্ষার্থী, চতুর্থ বর্ষ
সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতিক্ষণ/এডি/আরেফিন/বাদল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G