কোন অভিবাসীকে ফেরায়নি মিয়ানমার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
শুক্রবারের পর তিনদিন পেরিয়ে গেলেও কোন অভিবাসন প্রত্যাশীকে স্থলভাগে ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার। গত শুক্রবার নিজেদের উপকূলীয় এলাকা থেকে একটি মাছ ধরার নৌকা থেকে ৭শ অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছিল দেশটি। সোমবার মিয়ানমারের নৌবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে।
নৌবাহিনী শুক্রবার সকালে মিয়ানমারের ধামিন রাজ্যের ইরাওয়াদ্দি বদ্বীপের পিয়োপন শহরের উপকূল থেকে একটি মাছ ধরার নৌকা উদ্ধার করেছে। এতে ৭২৭জন অভিবাসন প্রত্যাশী ছিলো বলে ওই সময় জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে ৪৫ শিশু ও ৭৪ নারী রয়েছে । নৌকাটিকে পরে নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল।
সরকারের মুখপাত্র ইয়ে হতুত বলেন, ‘সরকার তাদের পরিচয় যাচাই করছে এবং তারা কী করতে চায় ও কোথায় যাবে তা জিজ্ঞাসা করছে।’ তবে নৌকাটি এখনও কোথায় রয়েছে এ ব্যাপারে কিছুই জানাননি তিনি।
উদ্ধার হওয়া নৌকার যাত্রীরা অধিকাংশই বাংলাদেশি দাবি করে হতুত বলেন, ‘তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি। আমরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী আয়োজনের ব্যবস্থা করছি।’
চলতি মাসের শুরুতে নিজেদের সীমান্তে অভিবাসন প্রত্যাশীদের ৩২টিরও বেশি কবরের সন্ধান পায় থাইল্যান্ড। এরা সবাই মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা মুসলামন ও উন্নত জীবনের আশায় মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু বাংলাদেশি নাগরিক। মিয়ানমার অবশ্য রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। তাদের দাবি, রোহিঙ্গার অবৈধভাবে মিয়ানমারে অনুপ্রবেশ করেছে। এরপরই মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় থাইল্যান্ড। মানবপাচারকারীরা এরপর অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌকায় খাদ্য ও পানীয়বিহীন অবস্থায় থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া উপকূলে ফেলে রেখে চলে যেতে শুরু করে। ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া প্রায় আড়াই হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীকে সাময়িক আশ্রয় দিলেও সাগরে ভাসমান অন্যদের উদ্ধারে অস্বীকার জানায়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী এখনও সাগরে দুই হাজার ছয়শ অভিবাসন প্রত্যাশী ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। পরে আর্ন্তজাতিক চাপের মুখে তাদের অবস্থান থেকে সরে আসে দেশ দুটি। শুক্রবার অভিবাসন প্রত্যাশীদের এই সঙ্কট নিরসনে ব্যাংককে বৈঠকে বসে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলি। এতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের উদ্ধার ও অভিবাসন সঙ্কটের মূল সমস্যা চিহিৃত করতে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেয় মিয়ানমার।
এদিকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের দেখতে কোন সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মানবাধিকার কর্মীদের যেতে দেয়নি মিয়ানমারের নৌবাহিনী। রোববার তাদের ঐ নৌকার কাছে যেতে বাধা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এমনকি নৌকার খানিকটা কাছাকাছি যেসব সাংবাদিক যেয়ে ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে পেরেছেন তাদের কাছ থেকে ক্যামেরা কেড়ে নেয়া হয়েছে। পরে সেই ছবি ও ভিডিওগুলো মুছে ফেলেছে নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা। এমনকি সাংবাদিকদের দিকে রাইফেলও তাক করেছিল এক নাবিক।
এ সময় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার সদস্যদেরও প্রবেশ করতে পারেনি। এক পর্যায়ে তাদের নৌকাগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের বেশ কয়েকজন রাখাইন ভাষাভাষীর রয়েছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশের ভাষা রাখাইন। এ ভাষায় কোনো বাংলাদেশি কথা বলেন না।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর এ কর্মকাণ্ডে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থার ব্যাংকক শাখার উপ পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, ‘নৌকার যাত্রীদের বিষয়ে ব্যাংকক সম্মেলনের মাত্র কয়েকদিন পর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ লজ্জাজনকভাবে সম্মেলনে যে বিষয়ে এক মত হয়েছিল তা লঙ্ঘন করছে।’
তিনি অবিলম্বের অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছে আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলিকে যাওয়ার অনুমতি দিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর