পৃথিবী বিখ্যাত ভবিষ্যদ্বাণী?
প্রতিক্ষণ ডেস্ক :
আমাদের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে কৌতুহলের অন্ত নেই। আর ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হলেতো বিশ্বজুড়ে হইচই পড়ে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। বিভিন্ন সময় নানা ব্যক্তি মানব সভ্যতার এমনই কিছু পূর্বাভাস করেছিলেন যা পরবর্তীকালে হুবহু মিলে যায়। আজ পর্যন্ত রহস্যের মীমাংসা করতে পারেনি কোনও যুক্তি। দেখা যাক এমনই কিছু ঘটনা:
১. ওকলাহোমা বোমা বিস্ফোরণ
আমেরিকার আধ্যাত্মিক মিডিয়াম ট্যানাহয় দাবি করেছিলেন, অশরীরী আত্মারা তাকে অদূর ভবিষ্যতের বহু ঘটনার কথা জানিয়ে যান। ১৯৯৫ সালের এক লাইভ রেডিও অনুষ্ঠানে তিনি জানান, ওকলাহোমা শহরের এক বাড়িতে বিধ্বংসী বোমা বিস্ফোরণ ঘটাবে জঙ্গিরা। ঠিক ৯০ মিনিট পর প্রচণ্ড বিস্ফোরণে চুরমার হয়ে যায় ওকলাহোমার অ্যালপ্রেড পি মুরাহ ফেডেরাল বিল্ডিং। ঘটনার হোতা টিমথি ম্যাকভেই ও তার সঙ্গীরা পরে গ্রেপ্তার হয়।
২. হিটলারের জন্মের পূর্বাভাস
১৫৫৫ সালে পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংসতম একনায়ক অ্যাডল্ফ হিটলারের উত্থানের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ফরাসি ভবিষ্যদ্বক্তা নস্ত্রাদামু। নাত্সি শাসকের জন্ম বৃত্তান্ত ও নিষ্ঠুরতার কথা বলতে গিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘পশ্চিম ইউরোপের এক শিশু যে দরিদ্র ঘরে জন্ম নেবে এবং তার কথার মোহে আবিষ্ট হবে বহু মানুষ।’ এমনকি সেই শিশুর নামও লিখে গিয়েছেন নস্ত্রাদামু। তবে হিটলারের পরিবর্তে তিনি উল্লেখ করেছিলেন ‘হিসটার’।
৩.হিরোশিমা-নাগাসাকির বিস্ফোরণ
১৯১৪ সালে তার ‘দ্য ওয়ার্ল্ড সেট ফ্রি’ উপন্যাসে মানব ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম সর্বনাশের কথা লিখে গিয়েছিলেন সাহিত্যিক এইচ জি ওয়েলস। ঘটনার ৩০ বছর আগেই অ্যাটমিক বোমার আঘাতে গণহত্যার পূর্বাভাস করেছিলেন। তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, বিস্ফোরণের বহু বছর পরেও এই দুই জনপদ বাসযোগ্য হবে না।
৪. টাইটানিকের সলিল সমাধি
১৯ শতকের সাহিত্যিক মর্গ্যান রবার্টসন তার উপন্যাস ‘ফিউটিলিটি, অর দ্য রেক অফ দ্য টাইটান’ এর কাহিনিতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ট্রিপল-স্ক্রু প্রপেলার বিশিষ্ট জাহাজ উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে হিমশৈলে ধাক্কা মেরে ২৫০০ যাত্রীসহ ডুবে যায়। আশ্চর্যের বিষয়, উপন্যাস প্রকাশের ১৪ বছর পর আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তরে একইভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ডুবে যায় বিশাল যাত্রীজাহাজ আরএমএস টাইটানিক।
৫. অগ্নুত্পাত, সুনামি এবং হারিকেন ক্যাটরিনা
বেশ কিছুদিন আগে ভারত মহাসাগরে আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণ এবং সুমাত্রা ও ইন্দোনেশিয়া উপকূলে আছড়ে পড়া ভয়ঙ্কর জলোচ্ছাসের কথা জানিয়েছিলেন পামার। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া সহ বিশ্বের ১৪টি দেশে সুনামির তাণ্ডবে প্রাণ হারান ২,৩০,০০০ মানুষ। শুধু তাই নয়, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র সম্ভারের পূর্বাভাসও করেছিলেন তিনি। তবে ২০০৫ সালের হারিকেন ক্যাটরিনা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যাওয়ার পরেই জনপ্রিয় হন পামার।
৬. লিঙ্কন হত্যাকাণ্ড
আততায়ীর গুলিতে মৃত্যুর দুই সপ্তাহ আগে হত্যাকাণ্ডের গোটা দৃশ্য স্বপ্নে দেখেছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের আবহে প্রাত্যহিক মানসিক চাপে থাকা প্রেসিডেন্টের পক্ষে দুঃস্বপ্ন দেখা অস্বাভাবিক না হলেও ঘটনাটি বিস্ময় উদ্রেক করে। ঘুম থেকে উঠে তিনি জানিয়েছিলেন, স্বপ্নে নিজেকে একটি সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখেন। চারিদিকে মৃত্যুকালীন নীরবতা বিরাজ করছিল। শুধু কোথাও কারও ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ ভেসে এসেছিল বলেও তিনি জানান।
৭ .চন্দ্রাভিযানের পূর্বাভাস
মানুষ যে একদিন চাঁদে পা রাখবে তা ১৮৬৫ সালে ‘ফ্রম দ্য আর্থ টু দ্য মুন’ উপন্যাসে লিখেছিলেন বিশ্বখ্যাত কল্পবিজ্ঞান লেখক জুল ভার্ন। ১০০ বছর পর তার উপন্যাসে দেয়া চন্দ্রাভিযানের বর্ণনার অনেকটাই মিলে যায় যখন পৃথিবীর উপগ্রহের মাটিতে প্রথম ঘটে মানব পদক্ষেপ। মহাকাশযানের আকার, মহাকাশচারীর সংখ্যা, অভিযানের মোট সময় এবং ভরশূন্যতার খুঁটিনাটি তথ্য ভার্নের লেখায় আগেই পাওয়া গিয়েছিলো।
৮. লন্ডনের অগ্নিকাণ্ড ও নস্ত্রাদামু
১৫৫৫ সালে প্রকাশিত ‘লে প্রোফেতিস’ বইয়ে নস্ত্রাদামু লন্ডন শহরের ভয়ানক অগ্নিকাণ্ডের কথা লিখে গিয়েছিলেন। তার কথায়, ‘৬৬ সালে এই আগুনে লন্ডনের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের রক্ত পুড়বে। ১৯৬৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ রাজধানীতে ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
৯. মার্ক টোয়েন’র মৃত্যু
সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন নিজের মৃত্যুর দিন ও সময় সম্পর্কে তার ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলে যেতে দেখে হতবাক হয়েছিলেন সকলে। টোয়েন লিখেছিলেন, ১৮৩৫ সালে তার জন্মের সময় আকাশে হ্যালির ধূমকেতু দেখা গিয়েছিল। তিনি জানিয়েছিলেন, ধূমকেতুর পুনরাবির্ভাবের সময় তার মৃত্যু হবে। ১৯১০ সালে মার্ক টোয়েনের জীবনাবসানের সঙ্গে সঙ্গে রাতের আকাশে ফের দেখা দেয় হ্যালিস কমেট।
প্রতিক্ষণ/এডি/নূর/বাদল