ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া অজ্ঞান পার্টি
জহির উদ্দিন মিশু
ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অজ্ঞান পার্টি। রাজধানীসহ দেশ জুড়ে সরল লোকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে সবকিছু। রাজধানীতে গত এক মাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে কেবল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ১৫০ জন। প্রায় প্রতিদিনই ১০ থেকে ১৫ জন অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
প্রতিদিনই নগরীর কোথাও না কোথাও তারা সাধারণ মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে। তাদের হাতে অনেকে প্রাণও হারাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের তথ্যমতে, রাজধানীর কমপক্ষে ৪০টি স্পটে অজ্ঞান পার্টির অর্ধশতাধিক সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। ঢাকার রাজপথের পাশাপাশি তারা ভাড়াটিয়া সেজে বাসা-বাড়িতেও লুটতরাজ চালাচ্ছে। পুলিশের নজরদারি, নিয়মিত অভিযান কোনো কিছুতেই তাদের প্রতিহত করা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন তারা আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।
বিল্লাল হোসেন দুবাই যাবার জন্য চাচাকে সাথে নিয়ে বাসে করে ঢাকায় আসছিলেন। সাথে ছিলো এক লাখ টাকা। ইফতারের সময় বাসের আরেক যাত্রী অনেক অনুরোধ করে খেজুর খেতে দেয়। সেই খেজুর খেয়ে চাচা ভাতিজা দুজনেই গভীর ঘুমে তলিয়ে যান। যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন দুজনেই হাসপাতালে আর সাথে থাকা টাকা মোবাইল কিছুই নেই।
বিল্লালের ঘুম ভাঙলেও তার চাচার অবস্থা আশংকাজনক। কোনভাবেই চেতনা ফিরছে না তার।শুধু বিদেশ যাত্রীই নয়,ব্যবসায়ী,চাকুরিজীবি, সিএনজি চালক, কেউই বাদ পড়েননি অজ্ঞান পার্টির কবল থেকে। রমজান শুরুর পর থেকে প্রায় প্রতি রাতে ১০ থেকে ১৫ জন অজ্ঞান পার্টির শিকার হয়ে ভর্তি হচ্ছেন ঢাকা মেডিকেলে। কারো পরিচয় মিলছে কারো মিলছেনা। এদের অনেকের অবস্থা আশংকা জনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
অপরদিকে গত ২৭ মে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ৫ লাখ টাকা হারান দুই ব্যবসায়ী। পরে অসুস্থ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দুই ব্যবসায়ী হলেন মো. মহিউদ্দিন (২৮) ও হারুনুর রশিদ (৩০)। তাদের দুজনেরই নরসিংদী সদরে কাপড়ের দোকান রয়েছে। ওই দুই ব্যবসায়ীর বন্ধু অনীক জানান, তারা তিনজন নরসিংদী থেকে ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় এসেছিলেন দোকানের মালামাল কিনতে। যাত্রাবাড়ী আসার পর হকারের কাছ থেকে হালুয়া কিনে খান মহিউদ্দিন ও হারুন। এটা খেয়েই হয়তো তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
শুধু রাজধানীতেই এই চক্রের অর্ধশতাধিক গ্রুপ নানাভাবে সক্রিয় বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতারকদের তৎপরতা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি পিছিয়ে নেই। ইতোমধ্যে অজ্ঞান পার্টির একাধিক নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও অনেকেই জামিনে কারাগার থেকে বের হয়েছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তারপরও আমাদের অভিযান ও তৎপরতা থেমে নেই। পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, অজ্ঞান করে সাধারণ মানুষের ধন-সম্পদ লুট করে নিয়ে যাওয়ায় সাধারণত ৩২৮ ও ৪২০ ধারায় মামলা করা হয়। ৩২৮ ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এ ধরনের (অজ্ঞান পার্টি) অপরাধীর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করা সম্ভব হয় না। আইনের ফাঁকে তারা ১৫ দিন না হয় এক মাসের মধ্যে সহজে বের হয়ে যায়।
সাধারণত ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতীয় অনুষ্ঠান সামনে রেখে এরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠান উপলক্ষে রাজধানীতে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার সুযোগটিকেই কাজে লাগায় এরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের চোখ এড়িয়ে খুব সহজেই এরা ওইসব ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষদের ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব কেড়ে নেয়।