বেলাই বিলের জলরাশিতে !
জহির উদ্দিন মিশু
‘‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’’, কবি জীবনানন্দ দাশের এ উক্তি নিছক কবি-বন্দনা নয়। এদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। তাইতো এদেশের মানুষের কণ্ঠে শোনা যায় ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা, তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা।’ আর এ দেশ কেন এত সেরা তা উপলব্ধি করতে হলে নিজের চোখে সে সৌন্দর্যকে দেখতে হবে। সে সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে হবে। চলুন ঘুরে আসি রূপ-সৌন্দর্যে ভরপুর এমনই এক অনন্য বিল থেকে। গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের কানাইয়া। এ কানাইয়াকে দেশের ভমণ অনুরাগী মানুষের কাছে পরিচিত করেছে নয়নাভিরাম বেলাই বিল!
বিশাল এই বিলটির কোনো কোনো স্থানে প্রায় সারা বছরই পানি থাকে, তবে বর্ষায় এর রূপ বেড়ে যায় অনেক। বর্তমানে বিলটি আট বর্গমাইল এলাকায় বিস্তৃত হলেও একসময় এটি আরও বড় ছিল। বাড়িয়া, ব্রাহ্মণগাঁও, বক্তারপুর ও বামচিনি মৌজা গ্রামঘেরা বেলাই বিল। আজ থেকে ৪০০ বছর আগে বেলাই বিলে কোনো গ্রামের অস্তিত্ব ছিল না। খরস্রোতা চেলাই নদীর কারণে বিলটিও খরস্রোতা রূপে বিরাজমান ছিল। বর্ষা মৌসুমে জেলেরা বিলের চারপাশে মাছ ধরার জন্য ডাঙ্গি খনন করে। আর শুষ্ক মৌসুমে বিলটি হয়ে ওঠে একফসলি জমি। তাতে চাষ হয় বোরো ধান।
পড়ন্ত বেলায় কানাইয়া বাজারের কাছে তৈরি হওয়া নতুন সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সামনে তাকাতেই সব ক্লান্তি উধাও। শাপলা-শালুকে ভরা বেলাই বিলের মোহ দেখে কেবল তাকিয়েই থাকতে মন চাইবে। হয়তো চোখে পড়বে শস্য ঝাড়াইয়ের দৃশ্য! যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই নারীরা এ কাজটি করে। বাতাসে উড়ে তুষের গুঁড়া আর ধুলো। আশপাশের সব চড়ুই পাখিরা, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শস্যদানা খুঁটে খুঁটে খায়। ছবির মতো সুন্দর সে দৃশ্য। বিলের বুকে স্বচ্ছ টলটলে পানি! খুব বেশি চওড়া নয় চেলাই নদী, তবে গভীরতা একেবারে কম নয়। এখানে ইঞ্জিনচালিত আর ডিঙ্গি নৌকা দুটোই পাওয়া যায়। যেটাতে মন চায় উঠে পড়ুন। যেদিকে তাকাবেন কেবলই বেলাই বিলের বিস্তৃত জলরাশি। বিলের চারপাশে দ্বীপের মতো গ্রাম। বামচিনি মৌজা বেলাই বিলের তেমনি একটি দ্বীপগ্রাম। এর বিশেষত্ব এক মৌজায় এক বাড়ি। গাজীপুরে এই বামচিনি মৌজা ছাড়া এমন নজির দেশের অন্য কোথাও আছে বলে জানা নেই।
বেলাই বিলে সাদা ও নীল শাপলার ছড়াছড়ি। বিলের নতুন পানিতে ছোট ছেলেমেয়েরা নৌকায় ঘুরে বেড়ায় আপন মনে। তবে এখানকার গ্রামের মাটি লাল। লাল মাটিতে লাউ খুব ভালো জন্মে।রয়েছে সারি সারি তালগাছ। নৌকায় বসে দূরের তালগাছ দেখতে ভারি সুন্দর! সময় পেলে দলবেঁধে চলে যেতে পারেন বেলাই বিলে। যেভাবে যেতে হবে: ঢাকার যে কোন স্থান থেকে বাসে যেতে হবে গাজীপুর বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে জয়দেবপুর সদর। সদর থেকে রিকশা বা টেম্পোতে কানাইয়া বাজার। কানাইয়া বাজার ঘাটে সারি সারি নৌকা বাঁধা। দরদাম করে উঠে পড়ুন। চাইলে নিজস্ব বাহনেও যেতে পারেন দলবেঁধে। আর বর্ষায় বেলাই ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।