৫ টাকা এখন তৃতীয় সরকারি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
পাঁচ টাকা মূল্যমানের মুদ্রা (নোট ও কয়েন) তৈরির ক্ষমতা এখন সরকারের তত্ত্বাবধানে। এই ক্ষমতাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ছিল।
এ ব্যাপারে মুদ্রা আইন সংশোধন সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এটি আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপনের মাধ্যমে কার্যকর হয় । ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেয়া সরকারের ঋণ পর্যায়ক্রমে প্রায় ৭৯০ কোটি টাকা হ্রাস পাবে। এতদিন ১ টাকা ও ২ টাকার মুদ্রা ছাপানোর কর্তৃত্ব ছিল সরকারের হাতে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, দেশে ৯৬ হাজার ২৮০ কোটি টাকার নোট ও কয়েন রয়েছে। এর মধ্যে দশমিক ৮৩ শতাংশের কর্তৃত্ব সরকারের হাতে রয়েছে। বাকি ৯৯ দশমিক ১৭ শতাংশই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। যদিও স্বাধীনতার পর মোট মুদ্রায় সরকারের কর্তৃত্ব ছিল ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির কারণে পর্যায়ক্রমে তা এক শতাংশের নিচে নেমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে মোট মুদ্রার ওপর সরকারের কর্তৃত্ব বিলুপ্ত হওয়ার শংকা দেখা দিয়েছে বলে দাবি অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের।
৫ টাকার নোট ও কয়েন সরকারি মুদ্রায় রূপান্তর হওয়ায় সরকারকে উল্লেখিত ঋণ করতে হবে না। টাকা ছাপানোর ব্যয় বাদে অবশিষ্ট অর্থ সরকারের আয় হিসেবে থাকবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের মধ্যে আলাদা কোনো সত্ত্বা নেই। তবে ৫ টাকার নোট সরকারি মালিকানায় নেয়া হলে এই পরিমাণ অর্থ সরকারকে ঋণ নিতে হবে না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ১৯৭৪-৭৫ সালে এক টাকার যে ক্রয়ক্ষমতা ছিল, বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৪৫ টাকা। অর্থাৎ বর্তমান ১২ দশমিক ৪৫ টাকা দিয়ে যে জিনিস ক্রয় করা যায় তা ওই সময়ে এক টাকা দিয়ে ক্রয় করা যেত। টাকার মূল্যমান কমছে মূল্যস্ফীতির কারণে। কারণ স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। ফলে সরকারি নোটের ক্রয়ক্ষমতা পর্যায়ক্রমে কমে আসছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে রাষ্ট্র থেকে সরকারি নোটের প্রচলন বিলুপ্ত ঘটবে। পাশাপাাশি সরকারের লিগ্যাল টেন্ডারের ক্রয়ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। যে কারণে সরকার ৫ টাকার মুদ্রা তৈরির কর্তৃত্ব নিয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমান বাজারে সরবরাহকৃত মোট মুদ্রার পরিমাণ হচ্ছে ৮৯ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ টাকা নোটের সংখ্যা হচ্ছে ৭৭ কোটি ৯০ লাখ পিস। এর মূল্য হচ্ছে ৩৮৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর ৫ টাকার কয়েনের সংখ্যা হচ্ছে ৮০ কোটি ৫০ লাখ পিস। যার মূল্য হচ্ছে ৪০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যার পুরোটাই থাকবে সরকারের মালিকানায়।
জানা গেছে, ১৯৭২ সালে দ্য বাংলাদেশ কয়েন অর্ডার জারির দীর্ঘ ১৭ বছর পর ১৯৮৯ সালে ২ টাকার নোট ও কয়েনের মালিকানা সরকার নিজের কাছে নিয়েছিল। এর আগে সর্ব প্রথম এক টাকা নোটের মালিকানা সরকারের হাতে ছিল। দীর্ঘ ২৬ বছর পর ২ টাকার ক্রয়ক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক হ্রাস পেয়েছে। যে কারণে ওই আইন আরও সংশোধনের মাধ্যমে ৫ টাকা নোট সরকারি মুদ্রায় রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়, দেশের অর্থনীতির আকার বাড়ছে। ১৯৭৪-৭৫ সালে বাজারে সরবরাহকৃত টাকার পরিমাণ ছিল ৩১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সেখানে সরকারি নোট ও কয়েনের পরিমাণ ছিল ৩৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বাকি ২৮২ কোটি ৯০ লাখ টাকা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। ওই সময় একশ’ টাকা মূল্যমানের নোটের বিপরীতে সরকারি নোটের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, স্বাধীনতার পর দেশজ মোট জিডিপির আকার ছিল ১২ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। বর্তমান জিডিপির আকার হচ্ছে ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা। ওই হিসাবে জিডিপির আকার বেড়েছে একশ’ গুণের বেশি। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নোট ও কয়েনের পরিমাণ বেড়েছে ৩৪০ গুণ।
এছাড়া ১৯৭৪-৭৫ সালে জিডিপিতে দশমিক ২৭ শতাংশ, মুদ্রা সরবরাহে ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও বাজেট অনুপাত ৩ দশমিক ২১ শতাংশ ছিল। কিন্তু মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য কারণে এই অনুপাত পর্যায়ক্রমে কমে বর্তমান জিডিপিতে দশমিক ০৬ শতাংশ, মুদ্রা সরবরাহে দশমিক ১১ শতাংশ ও বাজেটে সরকারি নোটের অনুপাত দাঁড়িয়েছে দশমিক ৩১ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, সরকার ৫ টাকার নোট ও কয়েনকে নিজেস্ব মুদ্রায় পরিণত করলে দেশে মোট অর্থ সরবরাহ অপরিবর্তিত থাকবে। বাজারে ১ টাকা ও ২ টাকার মুদ্রা প্রচলন থাকবে। এর ফলে নতুন করে মূল্যস্ফীতি বাড়বে না। পাশাপাশি ৫ টাকা নোটের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক না লিখে তখন লেখা হবে বাংলাদেশ সরকার। এই নোটে স্বাক্ষর থাকবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের।
প্রতিক্ষন/এডি/ইমতিয়াজ