কক্সবাজারে উন্মুক্ত হচ্ছে দ্বিতীয় সুন্দরবন

প্রকাশঃ আগস্ট ৯, ২০১৫ সময়ঃ ৮:৫০ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

Untitledপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজারে উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে সৌন্দর্যের আর এক আকর্ষণ দেশের দ্বিতীয় ম্যানগ্রোভিয় বনাঞ্চল। অনেক সঙ্কট আর আশঙ্কাকে অবসান ঘটিয়ে অবশেষে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

দুই পাশে বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত ও এক দিকে বাঁকখালী নদীর মোহনা। এর মাঝে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে রাইন, কেওড়াসহ নানা প্রজাতির শ্বাসমূলী উদ্ভিদের (ম্যানগ্রোভ) বন। গাছের মাথা ছুঁয়ে উড়ে যাওয়া বকের সারি, পরিযায়ী পাখি কিংবা বন্য শূকর দেখে মনে হবে, এ বুঝি আরেক সুন্দরবন। এ বনকে পর্যটকদের কাছে আকৃষ্ট করতে বনের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে পর্যেবক্ষণ টাওয়ার ও বিনোদন কেন্দ্র। কক্সবাজার, মহেশখালী-কুতুবদিয়া ও সোনাদিয়া উপকূলে যাওয়ার পথে বাঁকখালী নদীর মোহনায় দেখা মেলে এ বনের।

রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে কক্সবাজারে এই সুন্দরবন। বনের ভেতর গড়ে তোলা পর্যেবক্ষণ টাওয়ারটি উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে এ ঘোষণা দেবেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমদ। এসময় উপস্থিত থাকবেন পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক রইসুল আলম মন্ডলও। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ঘোষণার পর অনেকটা সুন্দরবনের আদলে গড়ে ওঠা এ বনে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পর্যটকরা আসতে পারবেন।

পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ ধ্বংসের কারণে গত কয়েক বছরে বহু প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। এ কারণে এমন বন সৃজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দু-তিন বছর পর গাছের উচ্চতা আরো বাড়লে সুন্দরবনের রূপ ও সৌন্দর্যও বাড়বে।

তিনি আরো বলেন, প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সাড়ে ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বনের পাশে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করেছে পরিবেশ অধিদফতর। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে এ বনে নির্মাণ করা হবে কয়েকটি ছোট ছোট বিনোদন কেন্দ্র এবং বনের আয় দিয়ে যাতে পরে এ বনকে রক্ষা করা যায়, দ্বিতীয় এ সুন্দরবন যেন উজ্জীব থাকে সে জন্য এখানে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে নামমাত্র টিকিটের মূল্য নেয়া হবে। তিনি আরো জানান, এ নব সৃজিত প্যারাবনে ২০৬ প্রজাতির পাখির বিচরণ রয়েছে। এর মধ্যে দেশি ১৪৯ ও ৫৭ প্রজাতির অতিথি পাখি রয়েছে। বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় অনেক পাখিও সোনাদিয়ায় দেখা যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিবেশ অধিদফতরের উদ্যোগে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে উপকূলীয় এলাকার মানুষকে রক্ষার জন্যই মূলত এ বন গড়ে তোলা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সমাজভিত্তিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন নামের প্রকল্পের আওতায় একটি বেসরকারি সংস্থা কক্সবাজার উপকূলে শ্বাসমূলী উদ্ভিদের বন সৃষ্টির কাজ করেছে।

কক্সবাজার শহর থেকে লঞ্চ অথবা স্পিডবোটে যাওয়া যায় এ বনে। বনের এ এলাকা থেকে স্পিডবোটে উত্তর দিকে আরো পাঁচ মিনিট গেলে নজরে পড়ে সোনাদিয়ার সবুজ প্যারাবন। প্রায় সাড়ে সাত হাজার একর বিশিষ্ট সোনাদিয়ার বনে কেওড়া, বাইনসহ নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে। সামুদ্রিক কাছিম, কাঁকড়াসহ নানা জাতের বন্যপ্রাণীর দেখা মেলে এ বনে।

শনিবার বাঁকখালীর মোহনায় গিয়ে দেখা যায়, ইংরেজি ইউ অক্ষরের আকৃতির ছোট খালের দুই পাশের চরে লাখ লাখ কেওড়া ও বাইনগাছের সারি। বক ও পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখরিত গোটা এলাকা। জোয়ারের সময় খালের পানি বাড়লে পুরো বন ডুবে যায়। তখন পানির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে কেবল গাছের ডালপালা।

পরিবেশ অধিদফতর সুত্রে জানা গেছে, এ বনে (প্যারাবন) ১২ হাজারেরও বেশি প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে উদ্ভিদ রয়েছে ৫৬৭ প্রজাতির। শামুক-ঝিনুক রয়েছে ১৬২ প্রজাতির, কাঁকড়া ২১, চিংড়ি ১৯, লবস্টার দুই, মাছ ২০৭, উভচর ১২ ও ১৯ প্রজাতির সরীসৃপ।

প্রতিক্ষণ/এডি/ইমতিয়াজ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G