ব্লগার হত্যার বিচারে অগ্রগতি নেই
২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫ জন ব্লগারকে হত্যা করা হলেও একটি বাদে অন্য কোনও মামলার অগ্রগতি তেমন লক্ষ্য করা যায়নি । আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে একটি মামলা। সেটির বিচার কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি।
পুলিশ জানান, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিহত প্রথম ব্লগার আহমেদ রাজিব হায়দার হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম অচিরেই শেষ হবে।
আহমেদ রাজিব হায়দার:
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচার ও ফাঁসীর দাবীতে উত্তাল শাহবাগের আন্দোলন, তখন ১৫ই ফেব্রুয়ারি এই শাহবাগ আন্দোলনেরই এক কর্মী আহমেদ রাজিব হায়দার দুর্বৃত্তদের চাপাতির আঘাতে নিহত হন।
পরে প্রচার করা হয় ‘থাবা বাবা’ নামে পরিচিত হায়দার ছিলেন একজন নাস্তিক এবং তিনি ইসলাম ও এই ধর্মের নবী মোহাম্মদ সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ব্লগ লিখতেন। এই হত্যাকাণ্ডটিই ছিল ব্লগে লেখালেখির অপরাধে বাংলাদেশে প্রথম কোনও হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনায় সন্দেহের ভিত্তিতে সাতজনকে আটক করে পুলিশ এবং তদন্ত শেষে হত্যাকাণ্ডের এগারো মাস পর আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
ঢাকায় পুলিশের মুখপাত্র মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, আদালতে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষের পথে। অল্প সময়ের মধ্যে এই মামলার রায় পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
অভিজিৎ রায়:
অভিজিৎ রায় একজন মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশী। তিনি মুক্তমনা নামে একটি ব্লগ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন যেখানে বিজ্ঞান বিষয়ক নানা লেখালেখি করা হত।
এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে আসেন তিনি এবং ২৬শে ফেব্রুয়ারি স্ত্রীকে নিয়ে বাংলা একাডেমির বইমেলা দেখে ফেরার পথে আক্রমণের মুখে পড়েন। হামলায় অভিজিৎ প্রাণ হারান। তার স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদও মারাত্মক আহত হন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শফিউর রহমান ফারাবী নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ।
ওই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের একটি প্রতিনিধিদল তদন্তের জন্যে ঢাকায় আসে।
পুলিশ বলছে, মোট ৭ জন হামলাকারীকে চিহ্নিত করা গেছে।
তবে পুলিশ বলছে ‘এদের সবাই ছদ্মনামে পরিচিত। কাউকে এখনো আটক করা যায়নি। মামলাটির তেমন অগ্রগতি নেই বললে চলে ।
ওয়াশিকুর রহমান:
অভিজিৎ রায়কে হত্যার এক মাসেরও কম সময়ের মাথায় ৩০শে মার্চ ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানকে ঢাকার তেজগাঁও এলাকার একটি সড়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসময় হামলাকারীদের দুজনকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে প্রত্যক্ষদর্শীরা। এদের একজন পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ।
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ বা ডিবি মামলাটির তদন্ত করছে। তবে এখনো কোনও অভিযোগ-পত্র দিতে পারেনি। তার লেখালেখির অন্যতম একটি বিষয় ছিল ইসলামসহ নানা ধর্মের সমালোচনামূলক প্রসঙ্গ।
অনন্ত বিজয় দাস:
গত ১২ই মে, সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যা করা হয় । ঢাকার বাইরে এটাই একমাত্র ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। তিনি বাসা থেকে বের হয়ে একটি ব্যাংকে যাবার পথে হামলার শিকার হন। তিনি মুক্তমনা নামে একটি ব্লগে লিখতেন এবং সিলেট থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞান বিষয়ক একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহের ভিত্তিতে ইদ্রিস আলী নামে একজন স্থানীয় ফটো সাংবাদিককে আটক করা হয় গত জুন মাসে। তবে আটক আলীকে পনেরো দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এ মামলার আর কোনও অগ্রগতির খবর এখনো জানা যায়নি। মামলাটি এখন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডি’র অধীনে রয়েছে।
নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায়:
লেখালেখির অভিযোগে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের সর্বশেষ সংযোজন নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায়। গত ৭ই অগাস্ট দুপুরে বাড়িতে ঢুকে হত্যা করা হয় তাকে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি।
প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডই বলছে, নিহতদের দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করা হয়েছে। প্রত্যেককেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনার পরই ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনের নামে দায় স্বীকার করা হয়েছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচারহীনতার কারণে দেশে এ ধরণের হত্যাকাণ্ড থামানো যাচ্ছে না।
প্রতিক্ষণ/এডি/এমএস