চার্জশিটে রাজন হত্যার নিষ্ঠুর বর্ণনা
জেলা প্রতিবেদক
সিলেট শহরতলীর কুমারগাঁওয়ে বহুল আলোচিত শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার দাখিলকৃত চার্জশিটে ঘাতকদের নিষ্ঠুর অত্যাচারের বিস্তারিত বর্ণনা উঠে এসেছে।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, নির্যাতনে রাজন যখন আর্তনাদ করছিলো তখন হত্যাকারীরা অট্টহাসিতে মেতেছিলো। প্রাণ ভিক্ষা চেয়েও শেষ পর্যন্ত রক্ষা পায়নি শিশু রাজন। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে রাজন পানি খেতে চেয়েছিলো। কিন্তু ঘাতকরা তাকে পানির বদলে ঘাম খেতে বলে।
ঘাতকদের নিষ্ঠুর অত্যাচার, নির্মম মারপিট ও লাঠির আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। আর খুনের ঘটনা আড়াল করতে ভ্যান চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল ঘাতকরা।
চার্জশিটে আরো উল্লেখ করা হয়, খুনের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আসামিরা মরিয়া হয়ে উঠে। আসামি কামরুল, তাঁর সহোদর আলী হায়দার, মুহিত আলম তড়িঘড়ি করে একটি গাড়িতে করে রাজনের মৃতদেহ গুম করার চেষ্টাকালে মুহিত আলম আটক হয় এবং অন্যরা পালিয়ে যায়।
এদিকে সোমবার চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার দাখিলকৃত চার্জশিটের ওপর শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সিলেট মহানগর হাকিম আদালত (আমলী-২) বেগম ফারহানা ইয়াছমিন এ তারিখ ধার্য করেন । এছাড়া চার্জশিটে এই হত্যা মামলার ১ নম্বর সাক্ষী রাখা হয়েছে হত্যা মামলার আসামিকে বিদেশ পালিয়ে যেতে সহায়তা ও দায়িত্ব পালনে গাফিলতির দায়ে বরখাস্তকৃত এসআই আমিনুল ইসলামকে।
রাজনকে নির্যাতন করে হত্যা এবং ইন্টারনেটে তার ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় গত রোববার সন্ধ্যায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার সিলেট মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। রাজন হত্যার এক মাস ৮ দিনের মাথায় দাখিল করা হয় এ চার্জশিট।
এতে সৌদি আরবে আটক কামরুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। চার পৃষ্ঠার এ চার্জশিটে মোট ৩৮ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। চার্জশিটে অভিযুক্তরা হচ্ছেন, জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের পুত্র মুহিত আলম (৩২), তার ভাই কামরুল ইসলাম (২৪), শামীম আলম (২০), পাভেল ইসলাম (১৮), আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪), চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না (৪৫), জালালাবাদ থানার টুকেরবাজার ইউনিয়নের পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের পুত্র ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ ওরফে নুর মিয়া (২০), দুলাল আহমদ (৩০), আয়াজ আলী (৪৫), তাজউদ্দিন বাদল (২৮), ফিরোজ মিয়া (৫০), আছমত আলী (৪২) ও রুহুল আমিন (২৫)।
তাজউদ্দিন বাদল ও রুহুল আমিন ছাড়া বাকি ৮ জন এ ঘটনায় আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন, তিনি তদন্তকালে নিহত শিশু রাজনের পিতার দেওয়া অভিযোগটিও একত্রে তদন্ত করেন। চার্জশিটে নিহত শিশু রাজনের কাপড়-চোপড়, মরদেহ বহনকৃত মাইক্রোবাসসহ ৯টি আলামতের কথা উল্লেখ করা হয়। মামলায় ৩৮ সাক্ষীর মধ্যে প্রথম সাক্ষী হচ্ছেন বাদি বরখাস্তকৃত এসআই আমিনুল ইসলাম।
এছাড়া, রাজনের পিতা আজিজুল ইসলাম আলমকে দ্বিতীয়, মা লুবনা বেগম ৩য়, চাচা আল আমিনকে ৪র্থ সাক্ষী করা হয়। হত্যাকারীদের বাঁচাতে চেষ্টা চালানোর অভিযোগে লাঞ্ছিত ইউপি সদস্য গিয়াস মিয়াকে মামলার ১৬ নম্বরর সাক্ষী ও এই মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার (ওসি তদন্ত) বরখাস্তকৃত আলমগীর হোসেনকে ৩৭ নম্বর সাক্ষী করা হয়েছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/তাফসির