টুইন টাওয়ার হামলার ১৪ বছর আজ
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
যে কোনো সন্ত্রাসী হামলাই দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। কারণ সন্ত্রাসী হামলার ফলে যারা আক্রান্ত হয় তাদের বেশিরভাগই থাকে নিরীহ মানুষ। বিনা অপরাধে কারও ওপর হামলা করা ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক অপরাধ। যে ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেন কিংবা যে মতাদর্শেরই ধারক বা বাহক হোক না কেন, বিনা কারণে তার প্রতি অত্যাচার করা, তাকে হত্যা করা মহা অন্যায়।২০০১ সালের ১১ ই সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল তা-ও এই দৃষ্টিকোণ থেকে একইভাবে অগ্রহণযোগ্য।
কিন্তু এমন একটি দিন দেখতে হল যুক্তরাষ্ট্রের সেদিনের আবহাওয়া ছিল অনেক সুন্দর, আকাশ ছিল নীল। মানুষ ধীরে ধীরে কর্মস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। সকাল ৮:৪৫ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৬৭ বিমানটি প্রায় বিশ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারে ৮০তম তলায় বিমান আঘাত করে আঘাত করে। । মুহূর্তের মধ্যে কয়েকশ’ মানুষ মারা যায়। বহু মানুষ আটকা পড়ে ওপরের তলাগুলোয়। এই ভবন এবং টুইন টাওয়ারের অপর ভবন টাওয়ার সাউথ টাওয়ার থেকে লোকজন সরিয়ে নেয়া শুরু হয়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে।
১৮ মিনিটের মাথায় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের আরেকটি বোয়িং ৭৬৭ বিমান সাউথ টাওয়ারের ৬০তম তলায় ঢুকে পড়ে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয়, ভবনের বিভিন্ন অংশ খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে আশপাশের ভবনগুলোর ওপর ছড়িয়ে পড়ে। তখনই প্রথম বোঝা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ শুরু হয়েছে।
মানুষের চোখ যখন টুইন টাওয়ারের দিকে তখনই ৯:৪৫ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের আরেকটি বিমান বোয়িং ৭৫৭ আঘাত করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদরদপ্তর পেন্টাগনের পশ্চিম অংশে।
এ হামলার ১৫ মিনিটের মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের সাউথ টাওয়ারটি ধ্বসে পড়ে। ধূলা আর ধোঁয়ার মেঘ তৈরি হয় সেখানে। আশেপাশের এক ডজনের বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয় বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
টাওয়ার দু’টির কাঠামো তৈরি হয়েছিল মজবুত ইস্পাতে, যা ঘন্টায় ২০০ মাইল বেগের বায়ু প্রবাহ, এমন কি বড় মাত্রায় অগ্নিকান্ড সহ্য করার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু জেট ফুয়েল সৃষ্ট উত্তাপ সামলে নিতে পারেনি ইস্পাতের এই কাঠামোটি। সকাল ১০:৩০ মিনিটে ধসে পড়ে অপর টাওয়ারটিও।
চতুর্থ বিমানটি উড়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশ্যে। ৪০ মিনিটের মধ্যেই বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। কিন্তু বিমানটি যাত্রা করেছিল নির্ধারিত সময়ে চেয়ে দেরিতে। টেলিফোন আলাপে অনেক যাত্রীই জেনে যান টুইন টাওয়ারে হামলার বিষয়টি। তখন যাত্রীরা বাধা দেন ছিনতাইকারীদের, ১০:১০ মিনিটে পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে আছড়ে পড়ে বিমানটি।
১৯৪১ সালে মার্কিন পার্ল হার্বর পোর্টে জাপানি হামলার পর এটাই ছিল আমেরিকায় বড়ো ধরনের কোনো হামলা। টুইন টাওয়ারে হামলায় সব মিলিয়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। ওই হামলার ঘটনা মনে হলে মানুষ এখনো শিউরে ওঠেন। ওসামা বিন লাদেনের জঙ্গী সংগঠন আল কায়দা এ হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছিল। হামলার পর মানুষদের উদ্ধারে প্রথম এগিয়ে গিয়েছিলেন অগ্নিনির্বাপককর্মীরা।ওই ঘটনার দিন ৩৪৩ জন অগ্নিনির্বাপককর্মী নিহত হন।উদ্ধার হওয়া মানূষ গুলোর মধ্যে অন্তত এক হাজার লোক ধ্বংসাবশেষর বিষাক্ত ধূলিকনায় অসুস্থ হেয় মারা যায়।
প্রতিক্ষণ/এডি/এএইচকে