ফুনিকুলারে পাহাড় দেখা
সিফাত তন্ময়
ফুনিকুলার আসলে কি? সে পাহাড়ের উপরে যাওয়ার জন্যে এক বিশেষ ধরণের রেল, cable railway ও বলা যায়। ট্রামের মতো দুই কামরাকে পাহাড়ের উপরে এক পুলি ও কেবল দিয়ে জুড়ে দেওয়া হয়, এবং পাহাড়ের খাড়া ঢালু পথে ছোট্ট রেল লাইন ধরে ট্রামের কামরার মতো দুই কামরা ওঠা নামা করে – একটা কামরা যখন ওঠে আরেকটা কামরা নামে, এক কামরা আরেক কামরাকে ব্যালেন্স করে – সাধারণত একটা লাইন ধরেই ট্রেনের কামরা দুটো চলাচল করে, শুধু মাঝামাঝি এক জায়গায়, এক কামরা অন্য কামরাকে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়।
ইউরোপে এই এই ধরণের ঢালু রেল লাইনের ব্যবহার প্রায় কয়েকশো বছর ধরে হয়ে চলেছে – এমনকি, সেই প্রাচীন ফুনিকুলার গুলো এখনও সচল। সাধারণত প্রাচীন কালে পাহাড়ের উপরের ক্যাসল গুলোয় মাল সরবরাহ ও মানুষের যাতায়াতের জন্যে এই ধরণের রেলপথ ব্যবহার হোতো।
ইউরোপে সবচেয়ে পুরনো ফুনিকুলারের নিদর্শন – সেলজবার্গের Hohensalzburg Castle এর Reisszug ফুনিকুলার। ষোল শতাব্দীতে তৈরি সেই ফুনিকুলার, প্রাসাদে রসদ সরবরাহ করতো। অবশ্য, উনিশ শতাব্দীতে সেলজবার্গ ক্যাসলে টুরিস্টদের জন্যে আলাদা করে, Festungsbahn ফুনিকুলার রেলওয়ে তৈরি হয়েছিল।
ফুনিকুলারের একটা কামরার ভেতরেও ধাপ তৈরি করা – ভেতরে অনেকটা ঠিক গ্যালারিতে বসার মতো ব্যবস্থা। এমনকি ফুনিকুলার রেলের প্ল্যাটফর্মটিও সিঁড়ির মতো।
বার্সিলোনার Montserrat পাহাড়ের ঢালু পথে যে ফুনিকুলার চলাচল করে, ছাদটা সম্পূর্ণ কাঁচের, ভেতরে বসে উপরের দিকে তাকালে মনে হতে পারে, Montserrat পাহাড়ের চূড়াগুলো যেন ঝুঁকে পড়েছে।
ইউরোপে পাহাড়ের উপরের যে সৌন্দর্যের কাছাকাছি পৌঁছনো নানা বয়সের অনেক টুরিস্টদের পক্ষে শারীরিক ভাবে একটু কষ্টকর ছিল – ফুনিকুলার সেই কাজটা অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। তাছাড়া, পাহাড়ি পথে ফুনিকুলার টুরিস্টদের যথেষ্ট সময়ও বাঁচায়। আর তাই, ইউরোপের অনেক জায়গার নিজস্ব সৌন্দর্যের সঙ্গে সঙ্গে রেল, মানুষ, টেকনোলোজি – সব মিলে মিশে তৈরি করে এক সুন্দর ছবি।