হুমকির মুখে বিশ্ব আশ্চর্য চীনের মহাপ্রাচীর
চাঁদ থেকে দেখা যাওয়া পৃথিবীর একমাত্র স্থাপনা চীনের মহাপ্রাচীর। চীনের বেইজিংয়ে অবস্থিত মহাপ্রাচীরটি মানুষের হাতে গড়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থাপত্য। ইট-পাথর দিয়ে তৈরি এ প্রাচীর প্রায় ৫ থেকে ৮ মিটার উঁচু এবং ৬,৫৩২ কিলোমিটার লম্বা। এই প্রাচীরটি চীনের সাংহাই পাস থেকে শুরু হয়ে লোপনুর নামক স্থানে শেষ হয়েছে। এটি নির্মিত হয় ২২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে। চীনের প্রথম সম্রাট শিং হুয়াং শত্রুর হাত থেকে নিজের সাম্রাজ্যকে রক্ষার জন্য এ দীর্ঘ প্রাচীর গড়ে তোলেন। দেয়ালটিতে নিয়মিত বিরতিতে পর্যবেক্ষণ চৌকি আছে, যা অস্ত্র সংরক্ষণ ও সেনাবাহিনীর আবাসনের জন্য ব্যবহৃত হতো। এ ছাড়া দীর্ঘ বিরতিতে রয়েছে সেনাঘাঁটি ও প্রশাসনিক কেন্দ্রসমূহ। ২৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীন বিভক্ত ছিল খণ্ড খণ্ড রাজ্যে আর প্রদেশে। এদের মধ্যে একজন রাজা শি হুয়াং-টি, তিনি অন্যান্য রাজাদের সংঘবদ্ধ করে নিজে সম্রাট হন। চীনের উত্তরে গোবি মরুভূমির পূর্বে বসবাসরত দুর্ধর্ষ মঙ্গলদের লুটতরাজ এর হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য সম্রাটের আদেশে চীনের প্রাচীর তৈরির কাজ আরম্ভ হয়। শত্রুদের আন্দোলন সম্পর্কে সাবধান থাকা এবং দলকে শক্তিশালী করা ছিল গ্রেট ওয়ালের
সীমানার মধ্যে সেনা ইউনিটগুলোর প্রধান কাজ। দেখার সুবিধার জন্য পাহাড়সহ অন্যান্য উঁচু স্থানে সংকেত টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছিল। প্রাচীরটি চীনের প্রাকৃতিক বাধাগুলো ছাড়াও অঞ্চল পাহারার কাজে ব্যবহার করা হতো। এভাবে ধীরে ধীরে তৈরি করা হয় চীনের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীরটি। ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো ঘোষিত এই মহাপ্রাচীরের ৩০ শতাংশই গায়েব হয়ে গেছে বলে চীনের সংবাদসংস্থা বেইজিং টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। কীভাবে গায়েব হল এই বিশাল অংশ? অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রাকৃতির বিপর্যয় ও প্রাচীর থেকে স্থানীয়দের ইট চুরি।ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মহাপ্রাচীরে গায়ে আগাছা জন্মানোয় এর ক্ষয় আরও তরাণ্বিত হয়েছে। এর টাওয়ারগুলোর বেশিরভাগেরই অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, মহাপ্রাচীর থেকে ইট চুরি করলে ৫ হাজার ইউয়ান (৬২ হাজার ৬৭২ টাকা) জরিমানার আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। ফলে স্থানীয়দের ইট চুরি দিন দিন বেড়েই চলেছে।বর্তমানে বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি চীনের এই মহাপ্রাচীর। প্রতিদিন বিশ্বের হাজারো দর্শণার্থী ছুটে আসে এই স্থানটিতে। মানবের সৃষ্ট এই প্রাচীর দেখে অতীত ইতিহাসের সান্নিধ্য লাভ করে তারা।
প্রতিক্ষণ/এডি/এস. টি.