জনগণের উপর অন্যায্য ‘কর’ নির্যাতন

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫ সময়ঃ ২:০০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:০৩ অপরাহ্ণ

এম. জাকির হোসেন খান

kor‘আগামী অর্থ বছরে (২০১৫-১৬) ৩০ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখনকার এনবিআর এ জন্য প্রস্তুত’- ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৩০% বেশি রাজস্ব আয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের বিপরীতে অর্থ মন্ত্রী এভাবেই তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। উল্লেখ্য, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এনবিআর ২,০৮,৭৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে। তখন প্রশ্ন ছিলো, কোন আলাদীনের চেরাগের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৩০% রাজস্ব আয় করা আদায় সম্ভব হবে? প্রশ্নের উত্তর তখন তিনি না দিলেও এখন বোঝা যাচ্ছে, সরকারের ক্রমবর্ধমান অযৌক্তিক ব্যয় নির্বাহে আইন এবং করারোপ নীতি অমান্য করে প্রত্যক্ষ করের তুলনায় অধিক পরোক্ষ করের দায় জনগণের কাঁধে চাপাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। অথচ এ্যাডাম স্মিথের মতে, ‘কর হলো কর প্রদানকারীর জন্য এক ধরনের সম্মানজনক অবস্থা- যা তাকে দাসত্ব নয় স্বাধীনতা প্রদান করে’।

করারোপের ক্ষেত্রে নাগরিকদের ইচ্ছা, সামর্থ্য এবং প্রতিনিধিত্বশীল সরকার থাকা করারোপের প্রধান শর্ত। ভোটারবিহীন স্বনির্বাচিত সরকারের আমলে কর ব্যবস্থা সুষম না হয়ে বৈষম্যমূলক হবে এটাই বাস্তবতা। অথচ রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকদের সামাজিক চুক্তির আওতায় জনগণের উপার্জিত অর্থের একটা অংশ করারোপের মাধ্যমে সংগ্রহ করার কথা। আর এর মাধ্যমে যাতে নাগরিকদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠায় সম্পদ একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে আবর্তিত না হয়ে সকলের কল্যাণে ব্যয়িত হয়। অর্থনীতির তত্ত্ব মতে, কর ব্যবস্থায় কাম্যতা এমনভাবে অর্জন করতে হবে যেন তা দক্ষতা এবং সমতা, উৎপাদন এবং ভোগ, বন্টন এবং পুন:বন্টন এবং সামজিক কল্যাণের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করবে। পাবলিক ফিন্যান্স’র মতে, পরোক্ষ কর-ভার শেষ পর্যন্ত গরিব ও মধ্যবিত্তের ওপর পড়ায় প্রত্যক্ষ করের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হয়। এ প্রেক্ষিতেই উন্নত দেশগুলো সংগৃহীত করের প্রায় পুরোটাই নাগরিকদের কল্যাণে ব্যয় করে এবং সেসব দেশের রাজস্বে আয় কর প্রধান অবদান রাখে; যেমন, সুইডেনে আয় কর ৫৬.৬ শতাংশ, ডেনমার্কে ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ও জাপানে ৫০ শতাংশ এবং চীনে সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী যখন সুষম কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় প্রত্যক্ষ কর প্রধান ভূমিকা রাখছে, তখন বাংলাদেশে কর ফাঁকি বন্ধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা না রেখে উল্টো পরোক্ষ করের বোঝা জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে ‘কর নির্যাতন’করা হচ্ছে।

গত ৪০ বছরে বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৩.৪% এ দাড়িয়েছে, অথচ ভারতে তা ১৭.৭%, শ্রীলংকায় ১৫.৫% এবং পাকিস্তানে ১৪.৬%। এ দেশগুলোতে প্রত্যক্ষ করের অবদান ৩৩%-৩৫%; অথচ বাংলাদেশে এনবিআর সংগৃহীত কর রাজস্বের প্রায় ৭৬ শতাংশের যোগান পরোক্ষ কর (মূসক এবং শুল্ক পণ্যের দামের সাথে যুক্ত থাকে) থেকে আসে। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে প্রতিটি নাগরিককে, এমনকি একজন ভিক্ষুককেও গড়ে প্রায় ৩১০০ টাকা পরোক্ষ কর বা ভ্যাট প্রদান করতে হয়েছে। বাংলাদেশে ভ্যাটের হার ভারত (২-১২.৫%), মালয়েশিয়া (০%), সিঙ্গাপুর (৭%), এমনকি কানাডার (৫%) চেয়েও বেশি। অধিক পরোক্ষ করের ফলে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় নাগরিকদের প্রকৃত আয় কমে তাদের জীবন মানের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।

জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার না থাকার প্রভাব কর নীতিতে স্পষ্ট। এটা স্পষ্ট যে, রাষ্ট্র সাধারণ নাগরিকদের কল্যাণের চেয়ে কিছু স্বার্থান্বেসী মহলের অনৈতিক কর-সুবিধা প্রদানেই নজর দিচ্ছে। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক (রাজনীতিবিদ, সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী) সহ একটি শ্রেণী অসম এবং অনৈতিক এ কর ব্যবস্থার উপকারভোগী। দেশের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানি করে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে। তারা ও প্রভাবশালীরা মিলে প্রকৃত আয় গোপন করে বিদেশে বিশেষকরে ‘কর-স্বর্গ’সুবিধাপ্রাপ্ত দেশে অর্থ জমা, বিনিয়োগ ও সম্পদ ক্রয় করে সম্পদের পাহাড় গড়ে সামাজিক বৈষম্য প্রকট করছে। ১০ম সংসদ নির্বাচনে ইচ্ছুক প্রার্থীদের প্রকাশিত হলফনামায় বিগত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এবং সাংসদ সদস্যদের ‘আলাদীনের চেরাগে’স্বল্প সময়ে কয়েকশ গুণ সম্পদ বৃদ্ধির ঘটনা ঘটলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তাদের সম্পদের উৎস অনুসন্ধান বা সঠিক করারোপের এখতিয়ার প্রয়োগ করে নি। অথচ বেসরকারি পর্যায়ে বেতনভুক্ত মধ্যবিত্তের স্বল্প আয় থেকে উচ্চ হারে কর আদায় করছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০১৪ সালে ০-১০০ পয়েন্ট স্কেলে ২৫ পয়েন্ট পেয়ে ২০১৩ সালের তুলনায় তালিকার উচ্চক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের ৯ ধাপ অবনতি হওয়ায় এটা পরিস্কার যে, কর ফাঁকি বা বিভিন্নভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই সম্ভব হচ্ছে। যার ফলে উপযুক্ত কারণ ছাড়াই অস্বচ্ছভাবে শত কোটি টাকার প্রকল্প কয়েকগুণ খরচ বাড়িয়ে সমাপ্ত হচ্ছে, নামে বেনামে ব্যয়ের মাধ্যমে জনগণের করের টাকা আত্মসাৎ হলেও দুদক সবাইকে গণহারে দায়মুক্তি দিচ্ছে। এনবিআর সেগুলো না ধরে বরং বিরোধী রাজনীতিকদের দুর্নীতি ধরার নামে জনগণের সাথে জাতীয় প্রতারণা করছে।

১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ৩৩ লাখ নাগরিকের টিআইএন থাকলেও ২০১৫ অর্থ বছরেও কমবেশি ১২ লাখ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর দেয়। সরকারের অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহের চাপ যে বিদ্যমান আয়কর দাতা অর্থাৎ উৎসে আয়কর দাতাদের ওপর বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই। সৎ করদাতাদেও ওপর সরকারের এ অন্যায় চাপ কতখানি যৌক্তিক, বিশেষকরে চাকরিজীবিদের সামান্য আয়ের ওপর অন্যায়ভাবে অধিক করের বোঝা চাপিয়ে দিলেও কোটিপতিরা থাকছে ধরাছোয়ার বাইরে। এনবিআর’র বার্ষিক প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ২ কোটি টাকার ওপর সম্পদ থাকা মাত্র ৫,৩২৯ জন কর প্রদান করেছে। অথচ ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রত্যেকের কমপক্ষে ১ কোটি টাকা ৩৭,১৭৭ জন। অথচ সর্বোচ্চ শত কোটি টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত আছে যার সর্বমোট পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা (বণিকবার্তা, ২০১৪)। এটা নির্দিদ্ধায় বলা যায়, করের আওতা বাড়িয়ে ধনীদের ওপর প্রগতিশীল হারে কর আদায় বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান আর্থিক মন্দার শিকার হলেও সুষম কর নীতি প্রয়োগ না করায় কোম্পানি বন্ধ হয়ে নাগরিকরা চাকরি হারাচ্ছে। অন্যদিকে, অথনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলো ১০০ বিলিয়ন ডলার উন্নয়ন সহায়তা দিলেও উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে এদের মালিকাধীন বহুজাতিক কোম্পানি সমূহ প্রায় ১৪০ বিলিয়ন ডলারের সমাপরিমাণ অর্থ কর ফাঁকির মাধ্যমে নিজ দেশে ফেরত নিয়ে যায় (অ্যাকশনএইড, ২০১৪)। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ থেকেই মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির নামে ওভার-ইনভয়েসের মাধ্যমে দেশের বাইরে বিশেষ করে ‘কর-স্বর্গ’বলে পরিচিত দ্বীপ রাষ্ট্রে অর্থ পাঁচার হয়। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন ২০১২ অনুযায়ী, ২০০১ থেকে পরবর্তী ১০ বছরে প্রায় ১৪.০৬ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাঁচার হলেও শুধুমাত্র ২০০৯-২০১৪ সময়কালে বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা পাঁচার হয়, যা থেকে সরকার কমপক্ষে ৩৯ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল। সুতরাং রাজস্ব সংগ্রহের জন্য ভাট আরোপ যে এক ধরনের প্রতারণা তা এখন পরিস্কার।

অর্থ পাঁচার এবং কর ফাঁকির অবাধ সুযোগ রেখে পরোক্ষ করের বোঝা চাপানো শুধু অনৈতিক নয়, অসাংবিধানিক বটে। বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ১০ নাগরিক প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা (জাতীয় বাজেটের প্রায় ৪ ভাগের এক ভাগ) অর্থ সম্পদের মালিক – যার মধ্যে ২ জন ক্ষমতাসীন সরকারের ২টি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। প্রশ্ন হলো তারা কত টাকা কর প্রদান করেছেন? সর্বোচ্চ আয়কর দাতাদের মধ্যে তার কি রয়েছেন? ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ আয়কর দাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশই সরকারি প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ জনগণের কাঁধে মূসকের বোঝা চাপিয়ে সর্বোচ্চ কর সংগ্রহের বাহাবা নিচ্ছে। আর বিদেশি শেভরন কোম্পানি অন্যায্য চুক্তির মাধ্যমে জনগণের গ্যাস সম্পদ আত্মসাৎ করে সবচেয়ে বেশি কর প্রদানকারীর তকমা নিচ্ছে।

শুধুমাত্র শীর্ষ ৪ সেলফোন কোম্পানি রিপ্লেসমেন্টের নামে নতুন সিম বিক্রি করে ৩০১০ কোটি টাকা এবং ব্রিটিশ আমেরিকা টোবাকো কোম্পানি মূল্য স্তরে অসত্য ঘোষণা দিয়ে ১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে বলে এনবিআর অভিযোগ করেছে। এনবিআর এর বৃহৎ করদাতা ইউনিটে নিবন্ধিত ১৩৭ টি প্রতিষ্ঠানই ২০১৪ সালে প্রায় ১০ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার মূসক এবং শুল্ক আত্মসাতের সাথে জড়িত বলে জানা যায়। ডেসটিনি গ্রুপের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল? আয়কর বিভাগের তথ্যমতে, এসব টাকা কারো নামে জমা হয়নি। এনবিআর বা দুদক কি জানেনা কারা এ কোটিপতি। এটা কোন অসাধু আঁতাতের ফলে ঘটেছে? অথচ রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষমাত্রা পূরণের নামে হঠাৎ করেই ৩৩ গুণ বাড়ানো হলো ট্রেড লাইসেন্স ফি। গত বছর ৯০০ টাকা ফি থাকলেও এবার তা ১১ হাজার টাকায় নির্ধারণ সহ বিভিন্ন কর বসানোর ফলে মহাবিপাকে পড়েছে দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্্র, মাঝারি ও প্রান্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। একমাত্র কমেছে শুধু মদ ও বেভারেজের আওতায় থাকা পানীয়ের ফি। এ হলো সরকারের নাগরিক বান্ধব করারোপ নীতি!

ক্ষমতায় ও আশেপাশে থাকা কতিপয় প্রভাবশালী শত শত কোটি টাকা নানাভাবে উপার্জনের দায়ে অভিযুক্ত হয়েও কর না দিয়ে দুদক এবং এনবিআর থেকে দায়মুক্তির সনদ নিচ্ছে। শুধু তাই নয় রাজস্ব আয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান না রাখলেও নিয়মিত আয়কর দাতাদের চেয়ে কম হারে কর প্রদানের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ শুধু অব্যাহতই রাখা হয়নি, বরং করের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও, জ্বালানি সংকটের অজুহাতে রেন্টাল বিদ্যৎ কেন্দ্রের চুক্তির ফলে শুধুমাত্র ২০১২-১৩ এবং ২০১৩-১৪ অর্থ বছরেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করতে হয় জনগণের করের টাকা থেকে। তাছাড়াও, অর্থ পাঁচারের প্রধান আকর্ষণ মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোম’, দুবাই, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য এবং ভারত। শুধু তাই নয় কর ফাঁকি দিতে করযোগ্য আয় ‘কর অবকাশ’খাতে বিনিয়োগ দেখিয়ে নির্বিঘ্নে, কোন কোন ক্ষেত্রে কর কর্মকর্তার সহায়তায় ব্যাপক কর ফাঁকি দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, ২০০৯ এ ক্ষমতাসীন মন্ত্রী, এমপিদেও সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করার কথা বললেও এখন পর্যন্ত ক্ষমতাসীনরা সম্পদের কোনো হিসাব প্রকাশ করেনি।

এ প্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীনরা মুখে না বললেও অবস্থাটা এরকম পর্যায়ে গেছে যে, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের মতো ‘যেহেতু আমাকে সমর্থন করোনা, তাই তোমরা আমার শত্রু এবং সব ধরনের করারোপ এবং ফি বাড়িয়ে তোমাদের শায়েস্তা করা হবে, আর তা না চাইলে দেশ থেকে বিতাড়িত হও’। অথচ উচ্চ বিত্তদের কর ফাঁকি মাত্র ১০% কমাতে পারলে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস দাম বাড়ানো বা মানুষের জীবন ধারণ বা জীবিকা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং শিক্ষা গ্রহণের ওপর আগ্রাসী পরোক্ষ করা তথা মূসক আরোপের প্রয়োজনই নেই। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৯৯২ সালে ভ্যাট প্রচলনের সময় ব্যবসায়ীদের ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল তৎকালীন বিরোধী দল ও বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

করের আওতা বাড়িয়ে ধনীদের ওপর প্রগতিশীল হারে কর আদায় বৃদ্ধি, কর ফাঁকি বন্ধ, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অর্থ আত্মসাৎকৃত ও বিদেশে পাচারকৃত তহবিল দেশে ফিরিয়ে এনে তার মাধ্যমে অতিরিক্ত উন্নয়ন তহবিলের যোগান দেওয়া সম্ভব। অথচ বাস্তবে একদিকে অবাধে অর্থ পাচারের সুযোগ করে দিচ্ছে সরকার আর অন্যদিকে অন্যায়ভাবে জনগণের কাঁধে অতিরিক্ত করের বোঝা চাপাচ্ছে। কোন যুক্তিতে অতিরিক্ত করের বোঝা জনগণের কাঁধে চাপানো হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা অবশ্যই জনগণের কাছে দিতে হবে। ক্ষমতায় থাকার পথ সুদৃঢ় করতে জনগণের উপর মাত্রাতিরিক্ত ও সীমাহীন করের বোঝা চাপিয়ে সেই টাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর এখতিয়ার জনগণ কাউকে দেয়নি। বাংলাদেশে বর্তমান উৎকট বৈষম্যেমূলক কর ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদ ওয়াল্টার ই, উইলিয়ামের মন্তব্য- ‘Government income redistribution programs produce the same result as theft. In fact, that’s what a thief does; he redistributes income. The difference between government and thievery is mostly a matter of legality’যথার্থ বললে অত্যুক্তি হবেনা।।
আমাদের বুধবার

এই লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজের। এখানে প্রতিক্ষণ ডট কমের কোন নিজস্ব বক্তব্য নেই

প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G