পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যানকে গলা কেটে হত্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহম্মদ খিজির খানকে হাত-পা বেঁধে মধ্যবাড্ডার নিজ বাসায় গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এসময় পরিবারের সবাইকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাখা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ও র্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ডিবি ও সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। তবে কেন, কী কারণে বা কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানাতে পারেনি পুলিশ।
সোমবার মাগরিবের নামাজের পর সোয়া ৭টার দিকে বাড্ডা গুদারাঘাট সংলগ্ন মধ্য বাড্ডার জ-১০/১ বাড়ির দ্বিতীয় তলায় এ খুনের ঘটনা ঘটে। ছয় তলা নিজ বাড়ির তৃতীয় তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী খিজির খান। আর দ্বিতীয় তলায় রয়েছে রহমতিয়া খানকা শরিফ (ঢাকা শাখা)। এ খানকা শরিফের পীর ছিলেন তিনি। তার ছিল অনেক ভক্ত ও মুরিদ। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। তাদের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামে। খিজির খান ঢাকাস্থ কুষ্টিয়া জেলা সমিতির সভাপতি ছিলেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, ছয়-সাত দুর্বৃত্ত প্রথমে বাসার তৃতীয় তলায় উঠে খিজির খানের সঙ্গে কথা বলে। তিনি তাদের দোতলায় যেতে বলেন। একটু পর তিনি তৃতীয় তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় নামেন। এসময় দুর্বৃত্তদের একটি দল তিন তলায় উঠে তার পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে সবার হাত-পা বেঁধে ফেলে। অন্য একটি দল দোতলার খানকাহ শরিফের তিনজন গৃহকর্মীর হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলে। এরপর তারা খিজির খানকে খানকা শরিফে গলা কেটে হত্যা করে। এ ঘটনায় আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে, হত্যার কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা চলছে।
বাসার গাড়িচালক মোস্তফা জানান, দুর্বত্তরা তাকে দিয়ে বাসার দরজা খোলায়। এরপর তাকেও বেধে ফেলে। হত্যার পর খুনিরা দ্রুত চলে যায়। তবে বাসা থেকে কোনো মালামাল খোয়া গেছে কিনা বা ঘটনাস্থল থেকে হত্যার কোনো আলামত (সরঞ্জাম) উদ্ধার করা হয়েছে কি না তাও জানাতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ জানায়, হত্যার ধরন দেখে মনে হচ্ছে তরিকাপন্থি খিজির খানকে ধর্মীয় উগ্রপন্থিরা হত্যা করেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বাড়ির নিচতলায় গুদাম ভাড়া নেয়ার কথা বলে দুর্বৃত্তরা বাসায় ঢোকে।
বাসার ভেতরে আইন শৃখলা বাহিনীর লোক ছাড়া কাউকেই ঢুকতে দেয়া হয়নি। তাই রাতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলাও সম্ভব হয়নি। লাশ দেখতে ভক্ত-মুরিদ ও শুভাকাঙ্ক্ষীসহ এলাকার মানুষ ভিড় জমান।
এলাকাবাসী জানান, খিজির খান বিভিন্ন সময়ে ওরস ও মাহফিল করতেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তার ভক্তরা এসে খানকা শরিফে থাকতেন। নিচতলায় জিকির করতেন নারী ভক্তরা। আর খানকা শরিফে পুরুষরা জিকির করতেন। প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পরে এ জিকির হতো।
ছয়তলা ওই ভবনটি খিজির খানের নিজেরই বলে জানা গেছে। বাসার তৃতীয়তলায় স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে থাকতেন তিনি। তবে বাসার দ্বিতীয় তলা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, খানকাহ শরীফকে কেন্দ্র করে মতবিরোধের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে