তিনি একজন আইন প্রণেতা!
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
সুন্দরগঞ্জের সরকার দলীয় এমপি গুলি করে আহত করেছে একটি শিশুকে। এখানেই শেষ নয়, আহত শিশুটিকে যাতে হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়া যায় সেজন্য এমপির সাগরেদরা রাস্তা আটকে দিয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমত, পুলিশী হস্তক্ষেপে শিশুটি অবশেষে হাসপাতালে পৌঁছে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। এ বিষয়ে এমপির স্ত্রীর ব্যাখ্যাটি (পত্রিকায় প্রকাশিত) চমকপ্রদ। তার ভাষায়, সুন্দরবন-বামনডাঙ্গা সড়কে কিছু লোক আমার স্বামীর গাড়ি ঘিরে ধরেছিল। জামায়াত-শিবির ঘিরে ধরেছে মনে করে আমার স্বামী গুলি ছুঁড়েছে। ঐ গুলিতে শিশু আহত হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। এই চমকপ্রদ ব্যাখ্যাটির সাথে সুন্দরগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বক্তব্যে কোন মিল নেই। তারা জানাচ্ছেন, এমপি দিনের বেলায় ঘুমোন এবং রাতে মাতাল হয়ে গাড়ি চালান। এর আগেও তিনি হাসপাতালে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়েছেন এবং বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা ও নাগরিকদের পিটিয়ে জখম করেছেন। তাদের মতে, সে সময়ে তাকে যদি নিবৃত্ত করা যেত তাহলে আজকে এই শিশুটি গুলিবিদ্ধ হত না।
এই হচ্ছে বাংলাদেশের একজন মাননীয় সংসদ সদস্য বা আইন প্রণেতার চেহারা। তাদের কেউ কেউ শিশুকে গুলি করেন, শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক জাফর ইকবালকে জুতা মারতে চান, কলেজ অধ্যাপককে বিবস্ত্র করে রাস্তা প্রদক্ষিণ করান, সরকারী কর্মচারীদের অবলীলায় পেটান। মাদক ব্যবসা ও মানব পাচারের সাথে যুক্ত থাকায় তাদের নাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকায় থাকে, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন এবং প্রয়োজনে বিদেশে পার করে দেয়, কারো সন্তান মধ্যরাতে মাতলামী করে গুলির বহ্নুৎসোবে মানুষ খুন করে- এরাই জনপ্রতিনিধি? আইন ও বিচার এদের নাগাল খুব কমই পায়। কোন দৃষ্টান্ত না থাকায় মেনে হতে পারে কেউ কেউ আইন- বিচারের উর্ধে চলে গেছেন। সুন্দরগঞ্জের ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আলাপ করার পর- এটি জানা গেছে গত রোববার সংবাদ সম্মেলনে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে।
গত সোমবার পর্যন্ত ঘটনার ৭২ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে, শিশু সৌরভকে আহত করার দায়ে মামলা হলেও গ্রেফতার হয়নি এমপি লিটন। জেলা প্রশাসন অবশ্য তার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে আশস্ত করেছেন, ‘আওয়ামী লীগ বিশাল সংগঠন, সেই সংগঠনে অনেক কিছু ঘটতে পারে। কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি কিনা সেটাই বড় কথা। আমরা কিন্তু ঘটনা ধামাচাপা দেইনা। প্রশ্রয়ও দেই না। কাল আসার পরে স্বরাষ্টমন্ত্রী এটা নিয়ে আলাপ করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি বললাম, এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে’।
সংবাদ সম্মেলনে বড় অর্জন বাদ দিয়ে ছোট-খাট দুর্ঘটনা নিয়ে বেশি সংবেদনশীল না হতে এবং মানসিক দৈন্যে না ভুগতে প্রধানমন্ত্রী যে পরামর্শটি দিয়েছেন সেটির সাথে সকলের একমত পোষণ করা উচিত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় ছোট-খাট দুর্ঘটনা ব্যক্তি বা সাধারনের জন্য কত বড় বিপর্যয় বয়ে আনে তা নিশ্চয়ই তাঁর চেয়ে ভাল কেউ বোঝেন না। অসংখ্য উদাহরনের প্রয়োজন নেই, আইনের শাসনহীনতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে তিনি যদি রাষ্ট্র-সরকারকে বের করে নিয়ে আসেন, তাহলেই কেবল ছোট-খাট দুর্ঘটনা নিয়ে সংবেদনশীলতা কমে আসবে। মানসিক দৈন্যের বদলে জনগণ ঘুরে দাঁড়াবে, যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য।
আমাদের বুধবার
সবাই যা পড়েছে
বিএসএফের গুলিতে ৫ বাংলাদেশি আহত
৩ দিনের রিমান্ডে ক্রিকেটার শাহাদাত
বিদেশি খুনের ঘটনা গুরুত্বের সাথে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র