সাংবাদিকদের বেহাল অবস্থা!
এক কোম্পানীর মালিক তিনি। তাকে হুমকি দিয়েছেন এক সাংবাদিক। বলেছেন ৫ লাখ টাকা যদি না দেন তাহলে তার কোম্পানী সম্পর্কে নেগেটিভ রিপোর্ট করবেন। তিনি ভয়ে আর আতঙ্কে দিন কাটালেন কয়েকদিন। অবশেষে অসহায়ের একমাত্র সম্বল হিসেবে হাজির হলেন আরেক সাংবাদিক। তার কাছে এ অভিযোগটি আসার সাথে সাথে ; তিনি ঐ অসাধু সাংবাদিককে ফোন দিয়ে বিষয়টির সত্যতা জিজ্ঞেস করলেন। তখন সে খুব বিনয়ের সাথে দু:খ প্রকাশ করলেন। আর বললেন, ভাই ক্ষমা করবেন; আমি বুঝতে পারিনি।তিনি( অসাধু সাংবাদকর্মী)কী বুঝতে পারেননি? আপনারা কি তা বুঝতে পেরেছেন? একেই বলে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা!!
অদম্য বাংলাদেশের সেই মজার স্কুলের ছেলে-মেয়েগুলোর কথাতো মনে আছে আপনাদের, তাই না? তাদের নিয়ে করা ভুল রিপোর্টটা নিয়ে সাংবাদিক মহলের অনেকেই খুব মানসিক কষ্টে ভুগেছেন। তাই সেইসব সংযমী এবং দায়িত্বশীল কর্মীরা এই ভুল রিপোর্টের বিরুদ্ধে নতুন করে সঠিক সংবাদটি প্রচারের জন্য অস্থির হয়ে গেলেন। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে ফোন করতে শুরু করলেন একজন একজন করে প্রায় সব চ্যানেলের রিপোর্টারকে।প্রায় সবার মতামত একটায়; সংশোধনটা নিজ দায়িত্বে তারা করবেন। এরমধ্যে একজন সাংবাদিক বলে বসলেন, ‘নিউজটা করলে কি টাকা পয়সা কিছু পাবো?’ বুঝলেন, মাঝরা পোকারা বের হতে শুরু করেছে্। বাকিটাও কি বিস্তারিত বুঝিয়ে বলতে হবে? আরও অজস্র অভিযোগ আছে, যা বলে শেষ করা যাবে না। লিখতে গেলেতো মহাকাব্য হয়ে যাবে। তাই ছাড়ুনতো।
সাংবাদিকদের কিছু বিষয় মাথায় রেখে সাংবাদিকতা করার কথাটা এখন ন্যয্য দাবি হয়ে গেছে। সব সীমা অতিক্রম হয়ে গেছে। এবার থামুন। আর বোঝার-জানার-শেখার চেষ্টা করুন। না হলে পালিয়ে যাবার রাস্তাটাও আর পাবেন না। এটুকু কথা শুনে চটে গেছেন!! জানতাম, আপনারাওতো মানুষ। তাহলে বাহুবল প্রদর্শন করার রাস্তাটাতো খোলা আছে, করেই ফেলুন। অস্ত্র হাতে নিয়ে যে সংযম আর দায়িত্বের পরিচয় দেয়া দরকার তার কিছুই কি দিচ্ছেন আপনারা? কথায় কথায় রিপোর্ট করার হুমকি!! আরও কত হম্বিতম্বি। নিজেদের মান কোথায় নিয়ে গেছেন, কোন রসাতলে গেছে সাংবাদিকের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ তার কি খবর রেখেছেন? একটা রিপোর্ট নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছে, ‘গুনে গুনে ঘুষ খান তিনি’ । কিন্তু যাদের কথা লিখেছেন, তাদের কাছ থেকে যা আয় করেন, তা কি গুনে নিচ্ছেন?
ধরুন, একটা মাছচাষের পুকুরে যে মাছ আছে সেগুলো নিরীহ মানুষগুলো। আর পুকুরটা হলো সাংবাদিকরা। এবার চোখ বন্ধ করে পুকুরের হালটা দেখুনতো। অনেকগুলো মরা মাছ ভেসে উঠেছে , কিছু যায়যায় অবস্থা; আর কিছু যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
নিজে একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার জ্ঞাতি ভাইবোনদের এহেন অপকর্মে দু:খ প্রকাশ করে আপনাদেরকে ভুলাতে চাই না। তাই এ লেখা দিয়ে যদি একজনেরও ঘুম ভাঙে; তবে বুঝবো এখনও সব শেষ হয়নি। কিছুতো বাকি আছে। আর যারা আছে তাদের ব্যতিক্রমের পাল্লায় ফেলতে হচ্ছে। দেখলেন, সময় এই ব্যতিক্রমী-সৎ সাংবাদিকদের কত কদর দিচ্ছে। চেষ্টা করুন, তাহলে আপনারাও পারবেন। তখন ব্যতিক্রম শব্দটি তুলে দিতে হবে। আমরাতো এটাই চাই, সত্যের মশাল জ্বলে উঠুক দাউদাউ করে।
শারমিন আকতার
নির্বাহী সম্পাদক, প্রতিক্ষণ ডট কম
[email protected]