মহাশূন্যের ঘ্রাণ!
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
এই পৃথিবীতে সবকিছুরই নিজস্ব গন্ধ বা ঘ্রাণ রয়েছে। কিছু জিনিসের সুবাস আমাদের মন মাতিয়ে দেয়। আবার কিছু জিনিসের গন্ধ এতটাই বাজে যে সবাই সেটি থেকে দূরে থাকতে চায়। কিন্তু কেউ যদি আপনাকে এসে জিজ্ঞেস করে যে, পৃথিবীর বাইরেই যে মহাশূন্য তার কি কোন বিশেষ গন্ধ বা ঘ্রাণ রয়েছে? থাকলে সেটা কি ধরণের?
শুনতে কিছুটা অদ্ভুত হলেও এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মহাশূন্যের পরিবেশের ঘ্রাণ বা গন্ধটি হচ্ছে গলিত ধাতু, পোড়া ডিজেল আর বার্ব-ই-কিউ এর মিলিত গন্ধ! আর এই গন্ধের উৎস হচ্ছে মৃতপ্রায় বা ধ্বংসের মুখে থাকা নক্ষত্রগুলো। এই নক্ষত্রগুলো এদের জীবন কালের শেষ পর্যায়ে এসে পুড়ে গিয়ে পলিসাইক্লিক এরোমেটিক হাইড্রোকার্বন নামে এক ধরণের তীব্র গন্ধ যুক্ত যৌগ উৎপন্ন করে। আর এই যৌগের অণুগুলোকে মহাশূন্যের সব খানেই পাওয়া যায়। আর এই অণুগুলো মহাজাগতিক ধূলা, উল্কা আর ধূমকেতুর মাধ্যমে মহাশূন্যের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভেসে বেড়ায়।
মনে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, মহাশূন্যে তো স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। আর নেয়া গেলেও সেটা হবে চরমভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। মানুষের পক্ষে মহাশূন্যের প্রতিকূল পরিবেশে নিঃশ্বাস গ্রহণ করে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক মহাশূন্য সংস্থার নভোচারীরা যখন স্টেশন থেকে বের হয়ে মহাশূন্যে আসলেন, বিভিন্ন ধুলাবালি তাদের স্পেস-শ্যুটে লেগে গেল। আর সেগুলো এতোটাই জোরে ভেসে এসে তাদের গায়ে এসে লাগতো যে শেষ পর্যন্ত নভোচারীরা মহাশূন্য স্টেশনে ফিরে আসতে বাধ্য হন। পরে তারা জানান, মহাশূন্যে তারা পোড়া মাংস, পেট্রল বা ডিজেল পোড়ানোর গন্ধের মত গন্ধ অনুভব করেছেন।
মহাশূন্যের গন্ধ এতোটাই অসহনীয় যে নাসাকে শেষ পর্যন্ত সুগন্ধি নির্মাতাদের শরণাপন্ন হতে হয়। সম্প্রতি তারা চাঁদের পরিবেশের ঘ্রাণ নিয়েছেন। এটা অনেকটা গান-পাউডারের গন্ধের মত। মহাশূন্যের পরিবেশের গন্ধ কেন এতটা তিক্ত ও উগ্র? কারণ, এখানে কার্বনের পরিমাণ অনেক বেশি কিন্তু অক্সিজেন একদমই নেই। আর এই পরিবেশে বিভিন্ন ধরণের গন্ধের সৃষ্টি হয়।
বিজ্ঞানীরা আরো জানান, যদি কেউ আমাদের পরিচিত ছায়াপথ থেকে আরো দূরে যায় তবে সে নানা ধরণের চমৎকার কিন্তু অদ্ভুত ঘ্রাণের মুখোমুখি হবে। বিশাল মহাশূন্যের এখানে-ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরণের জটিল সব রাসায়নিক যৌগ। যেগুলোর কারণে একজন নভোচারী মহাশূন্যে চিনির মিষ্টি সুগন্ধ থেকে সালফারের পচা ডিমের মতো গন্ধ, সবই অনুভব করতে পারবেন।
মহাশূন্যের ঘ্রাণ নিয়ে এই গবেষণাটি করেছেন লুইস এলামন্ডা। তিনি NASA Ames Research এর জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা ও জ্যো্তি-রসায়নবিদ্যা গবেষণাগারের পরিচালক।
প্রতিক্ষণ/এডি/এসএবি