মাটির নিচে ৫ হাজার বছরের পুরানো শহর আবিস্কার

প্রকাশঃ জানুয়ারি ১২, ২০১৫ সময়ঃ ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:১৫ অপরাহ্ণ

মাটির নিচে ৫ হাজার বছরের পুরানো শহর!

৫০০ হাজার বছর পূর্বে জাকজমকপূর্ণ একটি শহর যেখানে একটা সময় লোকের কোলাহল ছিলো, শিশুর কান্নার শব্দ ছিলো, যেখানে উৎসব হতো, হাসি আর চিৎকারের শব্দ ভেসে আসতো সেই শহর আজ শান্ত হয়ে চাপা পড়ে আছে মাটির নীচে । সাথে চাপা দিয়ে রেখেছে এর গল্প-ইতিহাসও !

তুরস্কের আনাতোলিয়ায় প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরানো এমনই এক ভূগর্ভস্থ শহর আবিস্কৃত হয়েছে কিছুদিন আগে । নেভশেহির প্রদেশের এই আবিষ্কারকে বিশ্বের এ যাবৎ কালের আবিষ্কৃত বৃহত্তম ভূগর্ভস্থ শহর বলেই ধারনা করা হচ্ছে ।

তুরস্কের কাপ্পাডোসিয়া অঞ্চলে এর আগেও বহু উপাদান খুঁজে পাওয়া গেছে । ওই এলাকার মাটির ধরনের জন্যেই ভূগর্ভস্থ শহর তৈরি করা হতো এমন প্রমাণও আগে মিলেছে । কিন্তু সদ্য আবিষ্কৃত শহর আয়তনে বিরাট । নেভশেহির শহরের মেয়র হাসান উনভের বলেছেন, নতুন শহরের সঙ্গে তুলনা করলে এযাবৎ যা পাওয়া গিয়েছিল সেগুলিকে নেহাত রান্নাঘর বলে মনে হচ্ছে ।

ওই অঞ্চলেই রয়েছে আগে খুঁজে পাওয়া মাটির তলার শহর ডেরিনকুইউ । ১৯৬৩সালে আবিষ্কৃত এই শহর দেখতে দলে দলে পর্যটকরাও যান । একটি আবাসন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে নতুন শহরের সন্ধান মিলেছে । তুরস্কের সরকার প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে । গত বছরে এমন একটি প্রাচীন শহরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা আঁচ করা গিয়েছিল ।

উপরিভাগের কিছু নিদর্শন থেকেই আন্দাজ করছিলেন, আরো একটি শহরের সন্ধান মিলতে পারে । কিন্তু এত বড় আকারের আবিষ্কারের জন্য তাঁরাও প্রস্তুত ছিলেন না । প্রাথমিক হিসাবে অন্তত সাত কিলোমিটার সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়া গেছে । কোনো কোনোটি এত প্রশস্ত যে গাড়ি যেতে পারে । অসংখ্য ঘর ও প্রাচীন বস্তুও উদ্ধার করা হয়েছে । খননকাজে জড়িত পুরাতাত্ত্বিকদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, নেভশেহির শহরের তলা দিয়ে কোনো জলের উৎসের সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিলো বলে ধারণা করা হচ্ছে ।

কাপ্পাডোসিয়া অঞ্চলে আগ্নয়েগিরি-তুল্য পাথুরে মাটি থাকায় সেখানের মাটি খুঁড়ে নির্মাণ করা সহজতর ছিলো । এখানের প্রাকৃতিক দৃশ্যও ওই পাথরের কারণেই নজিরবিহীন । সে কারণেই ইতিহাসের দীর্ঘ সময় ধরেই এই ধরনের ভূগর্ভস্থ শহর নির্মিত হয়েছিল । নেভশেহিরের ডেরিনকুইউ ১৮তলার স্তরবিশিষ্ট শহর । তারই আয়তন প্রায় কুড়ি হাজার মানুষের থাকার মতো ।

ডেরিনকুইউ খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর বলে চিহ্নিত হয়েছে । তবে গ্রিস থেকে বিতাড়িত খ্রিস্টানরা এমনকি ১৯২৩সালেও সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল । আরো কিছু এ ধরনের শহর এখানে পাওয়া গেছে যেখানে ধর্মীয় উপাসনাস্থল, ঘোড়াশাল, আবাসন ছিলো ।

বায়ু চলাচলের ব্যবস্থাও ছিলো । একসময়ে রোমান শাসনে থাকা কাপ্পাডোসিয়ায় এই ধরনের শহর তৈরি ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যায়নি । খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রিক লেখক জেনোফন এই শহরগুলির অস্তিত্বের কথা জানিয়েছিলেন । নতুন শহরটি ইতোমধ্যেই ৪৫ হেক্টর এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে বলে বোঝা গেছে । বিস্তার আরও বেশি হতে পারে বলে পুরাতাত্ত্বিকদের অনুমান । সময়ের দিক থেকেও নতুন শহর সবচেয়ে পুরানো ।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G