বীরশ্রেষ্ঠের ছেলে দিন মজুর !!!

প্রকাশঃ ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫ সময়ঃ ১:০৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:৪৯ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা’গো,
এমন করে আকুল হয়ে আমায় তুমি ডাক।।
তোমার কথায় হাসতে পারি,
তোমার কথায় কাঁদতে পারি।।
মরতে পারি তোমার বুকে ।।’

আমরা ধন্য হয়েছি, মায়ের আকুল ডাকে সাড়াও দিয়েছি, এই মায়ের জন্য হেসেছি আবার কেঁদেছিও, মায়ের জন্য জীবনও দিয়েছি। এতকিছু করলাম এই মায়ের জন্য কিন্তু বিনিময়ে কী পেলাম? আদৌ কী কিছু পেয়েছি? অর্জনের তালিকায় কি শুধু বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে পেয়েছি? যারা এদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন তাদের জন্য কি আমাদের কিছুই করার ছিল না?

মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। বিজয়ের আনন্দ যে বুকে কেমন অনুভূতি জাগায় সেটাও অনুভব করা হয়নি। তাতে কী হয়েছে? দেশের স্বাধীনতার অংশ নাহয় হতে পারলাম না কিন্তু এদেশকে যারা মুক্ত করেছেন তাদের জন্য বা তাদের পরিবার-পরিজনদের জন্যও যদি কিছু করতাম, সেটাই বা কম কিসে? তখন হয়তো মনে হতো, যাক, কিছুতো করতে পেরেছি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সমতুল্য না হলেও, কোনো অংশে কম নয় এ অবদান।

কিন্তু হায়! কিসের অবদান? কিসের অনুভূতি? এ সোনার বাংলাকে যারা স্বাধীন করেছেন, দেখা যাচ্ছে তারাই আজ সবচেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেক মুক্তিযোদ্ধাই আজ বহু কষ্টে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। এমনকি বীরশ্রেষ্ঠের ছেলে এখন দিনমজুর! বিষয়টি একবার ভেবে দেখুনতো। আপনার হৃদয়কে কি একটুও নাড়া দিয়েছে? নাকি দেয়নি? আর যদি দিয়েই থাকে তাহলে কি আমাদের মতো মানুষের এদেশে অভাব পড়েছে? হয়তো আসলেই অভাব পড়েছে। নাহলেতো স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও আজ আমাদের এ তথাকথিত স্বাধীন দেশে বীরশ্রেষ্ঠের ছেলে দিন মজুর হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো না।

এদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সংগঠনগুলো স্বাধীনতা অর্জন নিয়ে অনেক কথা বলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গর্ব করেন এবং তাদের দেখাশোনা করার ব্যাপারেও অনেক কিছুই বলে থাকেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেটা শুধু বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবারের খোঁজ আর কেউ রাখে না।
 
প্রিয় পাঠক, আজ আমরা জানবো বিজয়ী বীরশ্রেষ্ঠের জীবনযুদ্ধে পরাজিত এক ছেলের কথা।

showkot-2

বাংলাদেশের সাত বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে অন্যতম বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন। তার ছেলে শওকত আলী পাটোয়ারী নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার বাঘপাঁচড়া গ্রামে বসবাস করেন। বাবা বীরশ্রেষ্ঠে হলেও শওকত যেন হেরে যাচ্ছেন জীবনযুদ্ধে। দারিদ্র্র্যের সঙ্গে লড়াই করে স্ত্রী ও একমাত্র শিশুকন্যাকে নিয়ে কোনও রকমে বেঁচে আছেন শওকত। কখনও করাত কলে গাছ টেনে কখনো চায়ের দোকানের পানি টেনে আবার কখনো মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। এমনকি জিনিস-পত্র ফেরি করেও তাকে জীবন চালাতে হচ্ছে। ৪০ বছর বয়সী শওকত স্ত্রী রাবেয়া আক্তার (৩০) ও মেয়ে বৃষ্টিকে (৭) নিয়ে তার বাবার ভিটেতেই আছেন।

showkot-final-2

নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে শওকত আলী বলেন, ‘বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাই। বীরদের মধ্যে বাবা শ্রেষ্ঠ হয়েছেন— সেই গর্বে সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকি।’

অর্থকষ্টের কারণে মংলা বন্দরে গিয়ে বাবার সমাধিটিও দেখার সৌভাগ্য হয়নি বলেই কেঁদে ফেলেন শওকত।

showkot-final-1

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন একাডেমির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম প্রতিক্ষণ ডট কমকে বলেন, খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ছেলে। তার বোনেরা বাবার টাকা উত্তোলন করে নিজেরাই ভোগ করেন আর স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে শওকত আলী মানুষের বাড়িতে কাজ-কর্ম করে জীবনধারণ করছেন।

জাহাঙ্গীর আলম এই বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের জন্য সরকারের কাছ থেকে সাহায্য দাবি করেন।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G