আত্মহত্যা ঠেকাতে কফিন চিকিৎসা!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পৃথিবীর অনেক দেশে আত্মহত্যার হার দিনদিন বাড়ছে। যে দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার এখন সবচেয়ে বেশি, দক্ষিণ কোরিয়া তার মধ্যে একটি। সেখানকার কর্মীদের কাজের অতিরিক্ত চাপকে এই আত্মহত্যার একটি কারণ হিসেবে ধরা হয়।
তাই সেদেশের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের জীবনের মূল্য উপলব্ধি করানোর জন্য বিভিন্ন চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো কফিন চিকিৎসা। কর্মীদের কফিনে শোয়ানোর মাধ্যমে তাদের জীবনের মূল্য উপলব্ধি করানো হয়।
কফিনে শোয়ার আগে সাদা পোশাকে আবৃত অবস্থায় কর্মীরা তাদের প্রিয়জনের কাছে শেষ চিঠি লিখেন। প্রথমে ভেজা-ভেজা চোখ এবং পরে কান্না করতে করতে লিখেন ঐ চিঠি। এরপর তারা উঠে দাঁড়ান এবং খোলা কফিনে প্রবেশ করেন। কফিনের পাল্লা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং ১০ মিনিট ঘোর অন্ধকারে কাটানোর পর কফিনের পাল্লা খুলে আবার তাদের আলোর মাঝে আনা হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের একটি আধুনিক অফিসের কর্মী কফিন থেকে বেরুনোর পর নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন এইভাবে, “আমি বুঝতে পারছি যে আমি জীবনে অনেক ভুল করেছি। আমি ভবিষ্যতে যাই করি না কেন, তাতে আরো বেশি মনোযোগ দিতে চাই।”
এই কার্যক্রমের প্রধান, পার্ক চুন উং বলেন, ‘আমার কোম্পানি সবসময় কর্মীদের তাদের চিন্তার ধরণ পরিবর্তনের উৎসাহ দিয়েছে। কিন্তু সত্যিকারের কোন পরিবর্তন আনা সম্ভব হচ্ছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছে একটি কফিনের ভেতর সময় কাটানো মানুষের মনে এমন একটি ধাক্কা দেবে যে, সে তখন তার আচরণ সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে উদ্বুদ্ধ হবে।’
দক্ষিণ কোরিয়ার চাকরিজীবীদের কাজের চাপ নিয়ে আগে থেকেই অনেক অভিযোগ রয়েছে। যেমন, একটি অলিখিত নিয়ম হচ্ছে, কর্মীরা সবসময় বসের আগে অফিসে ঢুকবে এবং বস বেরিয়ে যাবার পর অফিস থেকে বের হবে। সম্প্রতি সিউল শহর কর্তৃপক্ষ কর্মীদের জন্য দুপুরবেলা একঘণ্টা ঘুমের সময় বরাদ্দ করেছে। কিন্তু এখানেও সমস্যা হলো যে, সেই সময়টা পাবার জন্য তাদের হয় একঘণ্টা আগে আসতে হবে কিংবা এক ঘণ্টা পরে অফিস থেকে বেরুতে হবে।
এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার একটি নতুন আইন প্রস্তাব করেছে, যাতে চাকরিজীবীদের পদচ্যুত করাটা আরো সহজ করা হবে। এই আইনের প্রতিবাদে হাজার হাজার ইউনিয়ন সদস্যরা রাস্তায় বিক্ষোভও করেছে। অফিসে শরীরচর্চা হয়তো কর্মীদের সুস্থ রাখতে পারে। কিন্তু ভালো বেতন, কাজের সময় কমানো এবং চাকরির নিরাপত্তাটাই হয়তোবা তাদের কাছে বেশি কাম্য।
প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি