বনভোজনের আনন্দযজ্ঞে সিইউজেএডি পরিবার

প্রথম প্রকাশঃ জানুয়ারি ১৮, ২০১৬ সময়ঃ ১২:৩৯ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ

শারমিন আকতার:

11214262_10153487525238577_5448775728308772505_n

কিছু চেনা কিছু অচেনার ভিড়ে , অজস্র আকর্ষিক প্রাপ্তিতে; ঘুনে ধরা একঘেঁয়ে একপেশে প্রচ্ছন্ন আলো-আঁধারীর যান্ত্রিক খেলায়; হঠাৎ ফিরে এল প্রসন্ন আলোকোজ্জ্বল এক প্রশান্ত-চঞ্চল সারাবেলা। যেখানে কবি তার কাব্যের ফুয়ারায় মশগুল হতে ব্যাকুল, আর কিছু অস্থির চিত্র স্থিরচিত্রপটে স্থান করে নিতে আকুল। সেখানে রচিত হয়েছে অকাঙ্ক্ষিত এক বিশাল মহাকাব্য, যার ছায়াও পড়েনি কারও অন্তরলোকের মানসপটে; গভীর অচিন্তনীয় আশাতীত ভবিতব্য ছিল এই আনন্দযজ্ঞ । অবশেষে একপাল স্মৃতিকে অপরিস্ফুটিত শীতের আবছায়া আলো থেকে নিয়ন বাতির নগরে বয়ে নিয়ে চললাম বড় চেনা তবু কত অচেনা এক নির্দিষ্ট গন্তব্যলক্ষ্যে।

যদি বলি, চিটাগং ইউনিভার্সিটি জার্নালিজম এসোসিয়েশন ঢাকা (সিইউজেএডি) আয়োজিত বনভোজন ও পিঠা উৎসবের এই হল সারসংক্ষেপ? তবে দুকূলের কবিগণ কোনো আপত্তি করবে না জানি। তবুও চিরচেনা খচখচানিতো একটা থেকেই যায়। তাই তাদের জন্য বলছি, শুক্রবারের ছুটির দিনের প্রথম প্রহরে আমরা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে বনভোজন ও পিঠা উৎসবের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলাম গাজীপুরের রিভারী হলিডে রিসোর্টের দিকে। পথেপথে বারবার যাত্রাবিরতি, চেনা যাত্রীদের তুলতে হবে বলে। তবু বিরক্তির লেশমাত্র নেই কারো মুখে। একগাল হাসিমাখা মুখের অভ্যর্থনায়  মুখোরিত যাত্রাপথের সহযাত্রীরা।12510232_10153487406738577_8293503166062429654_n

কিছু মুখ চেনা আবার  কিছু মুখ অচেনা; তাতে কী যায় এসে। ক্ষণিক হেসে হাত বাড়িয়ে দেয় যে যার বেশে। এভাবে একেএকে শূন্যস্থানগুলো পূর্ণ হতে লাগলো। একসময় সম্পূর্ণ আর সম্পূর্ণা মিলে হল পরিপূর্ণ। সবই ছিল যাত্রাকালের বাসটিতে। তবুও কিছুটা নিস্তরঙ্গ নি:সঙ্গতা বিরাজ করছিল কিছু সময়ের জন্য।

হয়ত সেই হালের হাস্যরসিক পালের গোদা সদানন্দের দল চুপ ছিল বলেই আমাদের চলমান বাসের ভেতরকার পরিবেশটা ছিল একেবারেই স্থির ম্রিয়মান। অবশেষে জাগলো তারা জাগালো সাড়া, জন থেকে জনে প্রতি থেকে প্রীতিতে। এভাবে হাসি-আনন্দ আর রাগ-রাগিনীর গানে মনের আকুল টানে যেন এক ঘোরের ভেতর থেকে আর এক ঘোরের নেশায় অপেক্ষমান যাত্রীরা বিরাজমান কল-কল্লোলকে টেনে নিয়ে গেল নতুন আনন্দ আবাহনের মঞ্চে। সে এক নবপ্রাপ্তিযোগ!

হেয়ালীপনা থেকে নয় সত্যি বলছি, আমাদের বাস যখন গাজীপুরের রিভারী হলিডে রিসোর্টে এসে পৌঁছলো সবার চোখ তখন খুশিতে ছানাবড়া। ঢাকা শহরের এত কাছে গ্রামীণ বনেদীপনা কায়দায় শীতের সকালে সদ্য দুর্লভ হতে চলা খেজুরের রস দিয়ে অভ্যর্থনা আর এত এত খোলামেলা পরিবেশ দেখে আমরা যাপরনায় আহ্লাদে আচ্ছাদিত। তারই ছিটেফোঁটা আনন্দ ঝুমঝুম বৃষ্টির আদলে ঝরতে শুরু করেছিল প্রখর রৌদ্র পরিবেষ্টিত সকালে। সবাই স্বউল্লাসে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়ল। কেউ মেতেছে গভীর আড্ডায়, আবার একদল ব্যস্ত বালিশ খেলায়। আর কেউ নিশ্চুপ থেকে প্রবল মনোযোগ দিয়ে তা দেখছে। এ গেল এক পর্ব।

IMG_6852-333x250অন্য এক দল ব্যস্ত সুনিপুণ রানারের মতো; তবে তারা চিঠি পৌঁছে দিতে নয়, ছবি তুলতে ব্যস্ত। আমাদের এযুগের ছবিয়াল। ছবি তুলে দিয়েই তাদেরযত আনন্দ। দিনভর চলেছে ক্লিক ক্লিক ক্লিক ( লাইট-ওকে-এ্যাকশন)। এদিকে শুরু হলো আরেক খেলা; কোট পড়া ভদ্রলোকের ভো দৌঁড়। রেডি ওয়ান টু থ্রিইই। কী প্রাণান্তকর চেষ্টা ঐ লাল দড়িটি ছোঁয়ার আশায়। এরপর সোয়েটার পরিহিত জ্যানটেলমেনদের দৌঁড়। এটাও ছিল দেখার মতো। কেউ সব ছেড়ে ছুড়ে হঠাৎ দড়িছেঁড়া ষাঁড়ের মতো চেঁচাতে চেঁচাতে লাল দড়িটির দিকে ছুটছে। আবার কেউ কেউ হাঁটল ঠিক তার উল্টো পথে। অর্ধেক পথও শেষ হলোনা অথচ সন্দিহান পথিকের মতো মাঝপথে ঠাঁই দাঁড়িয়ে। কী হলো কিছুই বোঝা গেল না। অবশেষে জানা গেল অনভ্যস্থতার যাঁতাকলে পড়ে এই জীর্ণদশা।

বারে মাটির হাড়ি সারিসারি, ভাঙবো সবাই তাড়াতাড়ি। ঐ বলা পর্যন্তই!! বন্ধ চোখে অন্ধলোকে পাচালি পড়া আর এই হাড়িভাঙা, যেন দুই ভুবনের এক বাসিন্দা! তবুও  এই অন্ধকার রাস্তায় বীরত্বের সাথে কারো কারো হাড়িভাঙা দেখে উপস্থিত অনেকের একটু চক্ষুচড়কগাছ তো হয়েছিল বটে। দু’একবার অভিযোগের তীরবাণেও জর্জরিত হতে হয়েছে কাউকে। তবে তা নিস্ফল বৃথা আবেদন মাত্র। কোনো জয়কে পরাজয়ের কাঁটায় আবৃত করা সম্ভব হয়নি!

অবশেষে যে খেলায় খেলার সমাপ্তিরেখার ইতি টানলো তা হলো দড়ি টানাটানি খেলা। সে এক টানটান নবউদ্ভাসিত হিজিবিজি অবস্থা। দুপক্ষে ভাগ হলো: বিবাহিত বনাম অবিবাহিত। শুরু হলো এক দড়ি নিয়ে দুধারে হেচকা টানাটানি। হেইয়ো আরো জোরে হেইয়ো। একি ছেড়াবেড়া যবরজং কদাকার অবস্থা অবিবাহিত জনগোষ্ঠীর!! তাদের কিনা হেরে যেতে হলো বিবাহিত দম্পতিদের কাছে!! এদিকে বিজয়ীবেশে আকাশভেদী জয়োধ্বনী করে বেড়ালো বিবাহিত দম্পতিগণ।

15492621_10154319278723577_1222980529631353016_nদিনশেষে যখন পশ্চিমাকাশে লালসূর্য উদিয়মান, গোধুলীবেলা তার উজ্জ্বল আভা ছড়াতে শুরু করল; ঠিক তখন আমাদের দ্বিতীয় পর্বের আনন্দযজ্ঞ শুরু হলো বলে। শুরুতে ম্যাজিকবক্স পর্ব নিয়ে ক্ষাণিক সময় ধরে চলল চতুর্মুখী কথার ফুয়ারা আর রাশভারী রসালো রসিকতার অঞ্জলি।

রপর সেরা জুটি দম্পতি খুঁজে বের করার পালা। নানা প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে অবশেষে মিলল সেরা মানিক রতন জুটি। আর পরিশেষে মহাকাঙ্ক্ষিত নানা দিবা স্বপ্নে গাঁথা মনোপটে আঁকা স্বপ্নের র‌্যাফেল ড্র পর্ব। এক একজনের নাম উচ্চারিত হচ্ছে আর চারদিকে সেই নামে চলছে উচ্চোশিত প্রশংসা। 

কার ভাগ্য কতটা প্রসন্ন; আর কারো ভাগ্য আবছা আঁধারে বড় দুরভীসন্ধি লাগছে; এ  নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এখানে যেসব মানিকরতন জুটি উপস্থিত; তাদের সবার পরিচয়াকাশে যে সংবাদকর্মী নামক তকমা লাগানো আছে বড় সযতনে। তাই ঘটনার পেছনের ঘটনা খুঁজতে কেউ কেউ বড় ব্যস্ত!  

রিশেষে শেষ হয়েও হইল না শেষ। দুই সাবেক এর হৃদয়ছোঁয়া মুগ্ধ করা গান দিয়ে হইল সত্যিকারের শেষ। সুমন ভাই গাইলো সন্ধায় জোনাকির মতো আলো ছড়ানো এক গান : আবার এল যে সন্ধা শুধু দুজনে। আর তন্ময় দা যে গান গাইলো তা সবাই গভীর আবেশে তন্ময় হয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে শুনছিল।

এভাবেই বেলা শেষে অনেক অনেক রাঙা আলো আর মজার অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে ফিরে চলল নিজনিজ আলয়ে একঝাঁক ব্যস্ত নগরের আলোর দিশারী -চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীরা।

—–

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G