ফসলী জমিতে কাঠ পোড়ানোর উৎসব!

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৬ সময়ঃ ৪:২৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:২৫ অপরাহ্ণ

আল-মামুন (খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি)

indexখাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলার ইটভাটাগুলোতে চলছে পাহাড়-ফসলী জমি কেটে জ্বালানী কাঠ পোড়ানোর মহাউৎসব। আর ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ উপেক্ষা করে লাইসেন্সবিহীন ২৯ ইটভাটায় প্রকাশ্যেই জ্বলছে সংরক্ষিত এবং ব্যাক্তি মালিকানাধীন বনাঞ্চলের গাছ। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা লংঘন করে প্রাকৃতিক পাহাড়ের মাটি, চাষের জমির উর্বর মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে ইট তৈরিতে।

পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী রবিউল ইসলাম বলেন, ইট প্র¯‘ত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ৬ ধারায় বলা হয়েছে, ইট ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে  জ্বালানী হিসেবে কোন জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা নিষেধ এবং পাহাড় কেটে ইট ভাটা তৈরি নিষেধ থাকলেও প্রকাশ্যে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চলছে জেলার ইট ভাটাগুলো। ইট ভাটাগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় দুষিত হচ্ছে পরিবেশ, একদিকে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল এবং অন্যদিকে পরিবেশ হারাচ্ছে তার জীব বৈচিত্র।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার মাটিরাঙ্গা, রামগড়, কমলছড়ি, পেরাছড়া, মহালছড়ি, মানিকছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় স্থাপিত ইট ভাটায় ১২০ ফুট উ”চতার চিমনির পরিবর্তে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ফুট উ”চতার ড্রামের চিমনি ব্যবহার, চুল্লীতে প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে পাহাড়ী বনের কাঠ। এদিকে, খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি মহালছড়ির মহাসড়কের পাশে মুড়াপাড়া এলাকায় প্রকাশে কাঠ পোড়ানো হলে নিরব স্থানীয় প্রশাসন। পাহাড়ের মাটি কেটে ফসলি জমিতে তৈরি হচ্ছে ইট।

ইট ভাটা মালিক এসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, একটি ইট ভাটায় এক দফা ইট পোড়াতে ১২-১৫ দিন সময় লাগে। এ হিসাবে ইটের মৌসুমে (ডিসেম্বর-এপ্রিল) প্রায় ১০ দফা ইট পোড়ানো যায়। এক দফায় একটি ইট ভাটায় ইট পোড়াতে ৮-১০ হাজার মন জ্বালানী কাঠ প্রয়োজন হয় আর ১০ দফায় একটি ইট ভাটায় গড়ে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মন পর্যন্ত গাছ পোড়ানো হয়।

আরেক পরিবেশ কর্মী শহিদুল ইসলাম বলেন, মাটিরাংগা এবং মহালছড়ি উপজেলার সাত ইট ভাটায় পাহাড় কেটে মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক ইট ভাটায় ব্যবহার হচ্ছে চাষের জমির উর্বর অংশ। ফলে একদিকে পাহাড় অন্যদিকে ফসলী জমি ধবংস হচ্ছে। প্রতি বছর এতে করে উৎপাদন কম হচ্ছে অথচ জেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

indখাগড়াছড়ি বার এসোসিয়েশনের সদস্য এডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রন আইন, ২০১৩ এর ৪ ধারায় বলা আছে, লাইসেন্স ব্যতিত কোন ব্যক্তি ইটের ভাটা স্থাপন করতে পারবে না এবং ৬ ধারায় বলা আছে ইট পোড়াতে জ্বালানী কাঠ ব্যবহার করা যাবে না। অথচ খাগড়াছড়ি জেলায় লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ৩৩টি ইট ভাটা আর সকল আইনের পাশ কাটিয়ে সবগুলোতেই জ্বালানো হচ্ছে কাঠ।

অনুমতিবিহীন ইট ভাটা এবং বনাঞ্চলের কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোমিনুর রশীদ জানান, ইট ভাটা চালানোর অনুমতি দেওয়া তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। প্রতিটি রেঞ্জ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে আদেশ দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ইটভাটা গুলোর অবস্থানগত দিক বিবেচনা করে ২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারী জেলার সব কয়টি ইট ভাটাকে অবৈধ ঘোষণা করে এগুলোর বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠি দিই। কিš‘ দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত তার কোন প্রতিফলন ঘটেনি।  

এদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্রগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন হতে কোন নির্দেশনা পাইনি তবে আমি পরিচালক স্যারকে বিষয়টি অবগত করব এবং আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G