নয় বার্ধক্যের কঙ্কাল মূর্তি
শারমিন আকতার
এমন কুসুম কাননে পুস্প পত্র পল্লবিত অনাচ্ছাদিত আচ্ছাদনে রাঙিয়াছে যে রমনী; জীবনের ভারে রজ্জু মস্তকাবনত। তবু হার নাহি মানে পড়ন্ত পুস্প শতদল। জ্বালায়ে সান্ধ্য বাতি, দূর হতে তোমা পানে লাগিল যে নেশার ঘোর। যাহা চাই তাহা পাই না, হে মোর বিদায় বেলার সাঁঝের আয়না। তুমি ধীরলয়ে চল, পেশিতে পাও না গতি; তবু কোথা হতে খুঁজি পাও শেষ জীবনের জ্যোতি?
একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা /চারি দিকে বাকা জল করিছে খেলা । পরপারে দেখি আকা তরুছায়ামসী-মাখা/ গ্রামখানি মেঘে ঢাকা প্রভাতবেলা । এ পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা ।ঠাই নাই, ঠাই নাই, ছোটো সে তরী /আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি । শ্রাবণগগন ঘিরে ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে, শূণ্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি ।
ক্লান্ত -শ্রান্ত- পরিশ্রান্ত থাকার দিন শেষ। এবার উজানে তরী ভেড়াবার পালা। বার্ধক্যকে সবসময় বয়সের ফ্রেমে বেঁধে রাখা যায় না। বহু যুবককে দেখিয়াছি যাহাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধক্যের কঙ্কাল মূর্তি। আবার বহু বৃদ্ধকে দেখিয়াছি- যাঁহাদের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যর মতো প্রদীপ্ত যৌবন। এ হল তার উৎকৃষ্টতম প্রকৃষ্টতর দৃষ্টান্ত।
মেঘলা আকাশে মেঘমল্লারে কে যেন ডাকে গুরুগম্ভীর স্বরে, সেদিকে চোখ পড়ে না তাদের; একজন সুদূরের পানে আনমনা কোহেলিকার মতো দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আছে যেন চোখ সরানোর জোঁ নেই। কী তার মনের কথা? সে কি ফিরতে চায় এ দু:গন্ধযুক্ত পথ থেকে? নাকি প্রতিদিনের চেনা পথ বড় অচেনা লাগছে তার কাছে। তবুও তুমি ধন্য, বরণ করেছো জল-জঞ্জালযুক্ত এ বন্য। তুমি যোগ্যতুল্য নারী , তাই তোমার হাতেই তুলে দিলাম সৃষ্টিশীল আগামীর উজ্জ্বল নিশান।
====