বাঁশি, ডুগডুগিতে নববর্ষ উদযাপন

প্রকাশঃ এপ্রিল ৯, ২০১৬ সময়ঃ ৬:০৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:৫৯ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

1959502_250282161821595_695478292276011145_n (1)

পহেলা বৈশাখ। যা ১৫৮৪ সালে প্রথম সম্রাট আকবরের বাংলা সাল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবর্তন করার মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করে। তবে একথাও অনস্বীকার্য যে , হাজার বছর ধরেই বাংলার কৃষিজীবি জনতা নতুন ফসল বোনার মৌসুম হিসেবে বৈশাখকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে উদযাপন করে আসছে। কিন্তু কী অদ্ভূত ব্যাপার দেখুন! বাঙালির নিজস্ব এই সংস্কৃতির মধ্যে কীভাবে যেন ঢুকে গেল আফ্রিকা থেকে আমদানি করা ভুভুজেলা।

বিদেশী সংস্কৃতি গ্রহণের মধ্যে আপত্তিকর কিছু নেই, যদি তা ক্ষতিকর না হয়। কিন্তু ভুভুজেলা ছিল শব্দ দূষণের এক অসহনীয় উৎস। বিগত ৪-৫ বছরে নববর্ষের দিনগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে ভুভজেলার অত্যাচারে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।

সৌভাগ্যের বিষয়, এই বছর নারী নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে ভুভুজেলা নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমাদের সংস্কৃতিতে রয়েছে চমৎকার সব বাদ্যযন্ত্র যার মাধ্যমেই আমরা আনন্দমুখর ও স্বাস্থ্যকর পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে পারি। আসুন দেখে নিই এমনই কিছু বাদ্যযন্ত্র।

IDEA0009675

ডুগডুগি- ডুগডুগি একটি অতি পরিচিত লোকবাদ্য। গ্রামীণ সংস্কৃতিতে এর উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। যদিও আমরা শহরের লোকজন ডুগডুগি দেখতে পাই, তাদের মাধ্যমে সাধারণত যারা বানর বা সাপের খেলা দেখায়; এটি তৈরি করতে নিচের অংশ সরু এমন দুইটি ছোটো আকারের পাটি বিপরীত মুখে একত্র করলে যেমন দেখায়, সে ধরণের কাঠের খন্ড প্রয়োজন হয়। দুই প্রান্ত চামড়া দিয়ে ঢাকা থাকে এবং খোলের মাঝখানে এক খণ্ড সুতা বেঁধে তাতে এক টুকরা সিসা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ডুগডুগিটি হাতে নিয়ে নাড়লে সিসার টুকরাটি খোলের গায়ে আঘাত করে এবং শব্দের সৃষ্টি হয়। ডুগডুগি ডমরু নামেও পরিচিত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভগবান শিবের বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ডমরু পরিচিত।

ঢোল – যে বাদ্যযন্ত্রটি বাজিয়ে আগেকার দিনে রাজ-রাজড়ারা বিভিন্ন ঘোষণা দিত, তার নাম ঢোল। কিন্তু ঢোল আসলে রাজ-রাজড়াদের ঐতিহ্য নয়, এটি গ্রামবাংলার এক সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। ছোট পিপার মতো দেখতে এই বাদ্যযন্ত্রটি ছাড়া কোন লোকসঙ্গীতের আসরের কথা কল্পনাই করা যায় না। গ্রামীণ বৈশাখী মেলায় ঢোল ছাড়া কি চলে ? এমনকি ভুভুজেলার প্রাদুর্ভাবের পরও শহরের মেলাগুলোতেও ঢোলের ব্যবহার লক্ষ্যনীয় ছিল। এছাড়া নৌকাবাইচ, কুস্তি, কবিগানের আসর, জারিগান, সারিগান, গম্ভীরা, ছোকরা নাচ, গাজনের গান, বাউলগান, মহররমের শোভাযাত্রা, যাত্রাগান, টপ্পাগান, আলকাপ গান, হোলি খেলা, এমনকি বিয়ের বরযাত্রাতেও ঢোল বাজানো হয়।

hagsdf

বাঁশি –

প্রেমিকের বাঁশির সুরে প্রেয়সীর মন চঞ্চল হয়ে ওঠার গল্প বাংলার লোকসাহিত্য সমৃদ্ধ করে আছে। বাঁশিও গ্রামীণ এবং প্রাচীন বাংলার একটি অনবদ্য বাদ্যযন্ত্র। ৭টি, মাঝে মাঝে ৮টি ছিদ্রযুক্ত এই বাদ্যযন্ত্রটি বাজানো বেশ কঠিন । যে বাংলার মাটিতে জন্মেছে সে বাঁশির সুরে মন হারায় না তা একরকম অসম্ভব। বাঁশি সাধারণত তরলা বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়।

একতারা – এক তার বিশিষ্ট বলে এই বাদ্যযন্ত্রটি একতারা নামে পরিচিত। বাড়তি লাউয়ের খোলের নিচ দিকে থাকে চামড়ার আচ্ছাদন এবং লাউয়ের খোলের উপরিভাগে উলম্ব আকৃতির দুই বাহুবিশিষ্ট কোণ সদৃশ দুইটি বাঁশের পাত সংযুক্ত থাকে এবং লাউয়ের খোলের ঠিক ভিতরের দিক হতে দ্বিভুজের সাথে একটি তার সংযোজিত হয়ে একতারা তৈরি হয়। এটিকে তাই লাউও বলা হয়ে থাকে। বাউলসঙ্গীতসহ যে কোন লোক সঙ্গীতে একতারার ব্যবহার খুব চোখে পড়ে। বাঙ্গালীর উৎসব-আনন্দকে পরিপূর্ণতা দেয় একতারার বাজনা।

এই বাদ্যযন্ত্রগুলো ছাড়াও প্রচ্রুর বাদ্যযন্ত্র রয়েছে আমাদের দেশে যা বাংলার মানুষের নিজস্ব আবিষ্কার। এই বাদ্যযন্ত্রগুলোর সাহায্যেই পহেলা বৈশাখের নান্দনিক উদযাপন সম্ভব। এখনো তো গ্রামবাংলায় এই বাঁশি, ডুগডুগিই নববর্ষ উৎসবের অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শহুরে মানুষ যখন দাবি করে যে, তারা নববর্ষ পালনের মাধ্যমে মাটির স্পর্শ পেতে চায়, তখন মাটির ছোঁয়া লেগে থাকা এই সব বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে নববর্ষ উদযাপনটাই বোধহয় কাম্য।

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

==========

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G