নিয়ন্ত্রণে রাখুন ট্রমাজনিত রোগ

প্রকাশঃ এপ্রিল ১০, ২০১৬ সময়ঃ ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:১৮ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

PTSDজীবন সব সময় সুন্দর নয়। হাসি, আনন্দ, সুখ, সাফল্যের সাথে সাথে জীবনে রয়েছে দুঃখ-যন্ত্রণা, অপমান, ব্যর্থতা। আলো আর আঁধার – এই দুই নিয়েই জীবন। কিন্তু কিছু কিছু অন্ধকার এত বেশি তীব্র ও ভয়াবহ হয় যে তা একজন মানুষের জীবন তছনছ করে দিতে পারে।

জীবনের কিছু দুঃখজন ও ভীতিকর ঘটনা থাকে যা হয়তো দীর্ঘদিন পরও এর শিকার ব্যক্তির পক্ষে ভোলা সম্ভব হয় না, যার ফলে ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। একে আমরা অতীত ট্রমা হিসেবে চিনে থাকি।

মনোবিজ্ঞানে একটি মানসিক অবস্থা রয়েছে যাকে বলা হয় পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, সংক্ষেপে পিটিএসডি। পিটিএসডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা ,বিষণ্নতা, বিষণ্নতাজনিত সমস্যা, ডিলিওশন অথবা হ্যালুসিনেশন, ঔষধের অপব্যবহার, অতিরিক্ত রাগ, মেজাজজনিত সমস্যা, অতিরিক্ত মদ্যপান, হীনমন্যতায় ভোগা, আক্রমণাত্মক আচরণ, ভয় এবং আতংক প্রভৃতির মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন। সাধারণত অন্য কোনো ব্যক্তির মৃত্যু, মারাত্মক আঘাত বা যৌন নিপীড়নের মতো আতঙ্কজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে গেলে ব্যক্তির পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কোন ব্যক্তি যদি এই মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয় তাহলে তার দীর্ঘ মেয়াদে মানসিক চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু তারপরও পিটিএসডি আক্রান্ত ব্যক্তি কিছু অভ্যাস তৈরির মাধ্যমে ট্রমার প্র্ভাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে তারা কিছু টিপস দিয়ে থাকেন –

১। পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি একাকী ও বিচ্ছিন্ন বোধ করেন। এ সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আত্নীয়-বন্ধু ও সামাজিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকার প্রবণতা লক্ষ্যনীয়। কিন্তু ট্রমা আক্রান্ত ব্যক্তির উচিত স্বাভাবিক জীবনযাপনে সচেষ্ট হওয়া ও ইতিবাচক মনোভাবসম্পন্ন কাছের মানুষদের সঙ্গে থাকা। তবে লক্ষ্যনীয়, এ সময় কোনভাবেই এমন মানুষের সাথে থাকা যাবে না যারা ব্যক্তির মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।

২। পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল নিজের উপর বিশ্বাস রাখা, নিজের অসহায়ত্বকে মোকাবেলা করা। ট্রমার কারণে নিজেকে আপনার দুর্বল মনে হবে। আপনার মনে রাখা প্রয়োজন যে, এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক শক্তি ও দক্ষতা আপনার আছে।

৩। অতীতের দুঃসহ স্মৃতি মাদকের দিকে আপনাকে টেনে নিয়ে যতে পারে। আপনি অবশ্যই বিপর্যস্ত। ভেঙ্গে পড়ার অধিকার আপনার রয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে মাদক কোন সমস্যার সমাধান নয়। নেশাজাতীয় দ্রব্য সাময়িকভাবে আপনাকে স্বস্তি দিলেও পরবর্তীতে তা পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারকে আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যায়। পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের চিকিৎসাও এ কারণে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

৪। নিজেই নিজেকে উৎসাহ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে যে আপনিই আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু।

৫। নিজের জীবনের অর্জনগুলো মনে করতে হবে। আর মনে রাখতে হবে আপনার যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতার জন্য আপনি দায়ী নন। তাই কখনোই কোন আত্ন-বিধ্বংসী কাজকর্ম যেমন হাত কাটা, আত্নহত্যার চেষ্টা করা প্রভৃতি কাজ করবেন না।

আর অবশ্যই পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। মনে রাখবেন, একটি সুস্থ্য-সুন্দর জীবনের অধিকার আছে আপনারও।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G