বাঘে মানুষে মিতালীর টাইগার টেম্পল
সিফাত তন্ময়
যদি কল্পনা করা হয়, বাঘের মত হিংস্র প্রাণীকে জড়িয়ে ধরে কিছু মানুষ আদর আলিঙ্গন করে তার মুখে চুমু দিচ্ছে। আবার থেমে থেমে হালুম হালুম করে ডেকে ওঠা সে বাঘ জিহ্বা দিয়ে লেহন করছে মানুষের মুখ, হাত!! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও থাইল্যান্ডের টাইগার টেম্পলে এটি একটি অতি স্বাভাবিক ঘটনা ।
থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুরি প্রদেশের সাইয়ক জেলা। মিয়ানমার সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৮ কিঃ মিঃ উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত টাইগার টেম্পল যা আঞ্চলিক ভাষায় বলে ওয়াট ফা লুয়াং টা বুয়া।
স্থানীয় ভাষায় ‘থেরাভাদা বৌদ্ধ মন্দির’ নামেও পরিচিত পশ্চিম থাইল্যান্ডের এই মন্দিরটি। সেখানে গেলে দেখা যায় বাঘ এবং মানুষের সখ্য। ১৯৯৪ সালে জঙ্গলের মন্দির হিসেবে আবিষ্কার করা হয় এ ধর্মীয় স্থানটি।
প্রবেশ পথে বিশাল আকৃতির বাঘের মুখচ্ছবি। দেখে মনে হবে যেন জীবন্ত দানব। কিন্তু না, আসলে সেটি বিশালাকার বাঘের ভাস্কর্য। নির্মাণাধীন এ ভাস্কর্যের সামনেই থামছে পর্যটকদের নিয়ে আসা গাড়িগুলো। লাল নুড়ি আর পাথুরে মাটির রাস্তায় ৫-৭ মিনিট পায়ে হেঁটে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। চলার পথেই দেখা মেলে হরিণ, ভারতীয় মহিষ, লম্বা হাতওয়ালা বানরের এদিক-সেদিক ছুটোছুটি।
বন্য জন্তুদের আবাসনের জন্য এটি একটি বিখ্যাত জায়গা। বিশেষত বিভিন্ন ধরণের বাঘের আবাসনের জন্য এ স্থানটি জনপ্রিয়। এখানে বেশিরভাগ বাঘই ইন্দো-চীনা প্রজাতির।
১৯৯৯ সালে এক গ্রামবাসী একটি বাঘ শাবক নিয়ে আসেন মন্দিরে। তার কিছুদিন পরেই শাবকটি মারা যায়।
এরপর গ্রামবাসীরা বিভিন্ন সময় বাঘ শাবক নিয়ে এসেছে- দুষ্কৃতকারীদের হাতে মা- বাঘ মারা যাওয়ার পরে।
এই বাঘগুলো বড় হতে থাকে মানুষের সংস্পর্শে, বৌদ্ধ মঙদের (ধর্মগুরু) ভালবাসায়। ২০০৭ সাল পর্যন্ত ২১টিরও বেশি বাঘ শাবক জন্ম নেয় এই মন্দিরে। বর্তমানে ১০০টির বেশি বাঘ রয়েছে এ মন্দিরে। এখানে বাংলাদেশের মেক জাতের বাঘও রয়েছে।
শংকারায়নের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে ম্যালায়ন জাতের বাঘ। এখানে গ্রামবাসীরা ধর্মগুরুদের হাতে তুলে দেয় হরিণ, গরু, মহিষ, ময়ূর প্রভৃতি প্রাণী। ধীরে ধীরে মন্দিরটি হয়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম জীবজন্তুর নিরাপদ আশ্রয়স্থল। মানুষ আর প্রাণীকূলের সহাবস্থানের কেন্দ্র ।
রক্ষণশীল আদর্শে গড়ে ওঠা পাহাড়ঘেরা এ আশ্রমে রয়েছে ধর্মগুরুদের ধ্যানের আলাদা স্থান। সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নেই। আশ্রমে প্রবেশের জন্য মেয়েদের কাঁধ থেকে হাত পর্যন্ত ঢাকা জামা ও লম্বা প্যান্ট পরতে হয়। প্রবেশে টিকেট কিনতে হয় ৬০০ বাথ (থাই টাকা ) দিয়ে।
এই অর্থ ব্যয় করা হয় পশুপাখির রক্ষণাবেক্ষণে। প্রতিদিন ৪০০-৫০০ পর্যটক এ মন্দিরে আসে বাঘের সঙ্গে সময় কাটাতে। আন্তর্জাতিক ও থাই পশুপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কিছু সদস্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন বাঘসহ অন্য পশুদের সেবায়।
প্রতিক্ষণ/এডি/এস. টি.