কোমল পানীয়তে বিপদ

প্রকাশঃ মে ১, ২০১৬ সময়ঃ ৬:০৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:০৭ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

soft-drinks

আমরা অনেকেই কোমল পানীয় অর্থ্যাৎ কোকাকোলা, পেপসি, সেভেন আপ, মিরিন্ডা প্রভৃতির চরম ভক্ত। গুরুভোজের পর কিংবা গলা শুকিয়ে গেলে মনের আনন্দে পান করি কোমল পানীয়। কিন্তু আমরা কি জানি, অত্যন্ত মজাদার এই পানীয়তে আসলে কত ধরণের বিপদ লুকিয়ে আছে?

আসুন শুনি, সেই বিপদের গল্প।

১। কোমল পানীয় পান করলে আপনার সাময়িক এনার্জি লেভেল বেড়ে যায় ৫ শতাংশ পর্যন্ত। এই এনার্জি আবার টাইপ টু ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় প্রায় ১৮ শতাংশ। শুধুমাত্র সোডা, সফট ড্রিঙ্ক বা কোমল পানীয় নয়, চা, কফিতে অতিরিক্ত চিনিও ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চিনি খেলে টাইপ টু ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে ১৪ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। আর কে না জানে, কোমল পানীয়র অবশ্যম্ভাবী উপাদান অতিরিক্ত চিনি। ভারতীয় বিজ্ঞানী নীরজ নায়েক বলছেন, এক বোতল কোকাকোলায় ১০ চা চামচ চিনি দেওয়া থাকে। মানুষের শরীর প্রতিদিন যতটা চিনি গ্রহণ করতে পারে, তার ১০০ গুন বেশি। এই পরিমাণ চিনি একবারে খেলে বমি অনিবার্য। কিন্তু কোকাকোলা খেলে তা হয় না। তার কারণ, কোকে থাকা অতিমাত্রায় ফসফেরিক অ্যাসিড।

২। বিজ্ঞানী নীরজ নায়েক গবেষণায় দেখান, কোক তথা কোমল পানীয় পান করলে প্রথম ১০ মিনিটেই শরীরে ১০ চা চামচ চিনি ঢোকে। পরের ২০ মিনিটে রক্তে সুগারের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে অতিমাত্রায় ইনসুলিন তৈরি হতে থাকে। লিভার ওই বিপুল পরিমাণ চিনি ফ্যাটে রূপান্তরিত করে দেয়। তারপরের ৪০ মিনিটে শরীর প্রচুর পরিমাণে ক্যাফিন গ্রহণ করে। এর ফলে চোখের মণি প্রসারিত হয়ে যায়, রক্তচাপ বেড়ে যায়, লিভার আরও চিনি রক্তে মেশাতে থাকে। একই সঙ্গে মস্তিষ্কে অ্যাডিনোসিন রিসেপ্টরগুলি ব্লক হয়ে যায়। ফলে তন্দ্রা ভাব আসে। ৪৫ মিনিট পর শরীর থেকে ডোপেমাইন হরমোন অতিমাত্রায় ক্ষরণ শুরু হয়। মস্তিষ্ক শিথিল হতে শুরু করে। এমনটা কিন্তু হেরোইনও করে। অথচ আমরা হেরতোইনের নাম শুনলে আঁতকে উঠি, কিন্তু কোমল পানীয় ভালোবেসে পান করি। যাই হোক, কোমল পানীয় পানের ৬০ মিনিট পরে শরীরে ফ্যাটের মাত্রা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। বেশি পরিমাণে কোকাকোলা খেলে ধীরে ধীরে রক্ত সম্পূর্ণ বিষাক্ত হয়ে যায়।

৩। কোমল পানীয় ক্যান্সারের কারণও হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডাঃ ফ্রান্সিসকো কন্টারাইজ জানান, অত্যধিক কোমল পানীয় পানের ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে আসে, যা মানব দেহের জন্যে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়!

৪। আপনি যদি ২৪ ঘণ্টা একটি দাঁতকে কোকাকোলায় ভিজিয়ে রাখেন তাহলে তা সম্পূর্ণ কালচে হয়ে যাবে এবং স্থানে স্থানে ক্ষয় দেখা দেবে। কোমল পানীয়তে থাকে সাইট্রিক এসিড, ফসফোরিক এসিডের মত উপাদান যা আমাদের দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আমাদের মুখের মাঝে থাকে Saliva বা লালা, যা দাঁতকে ক্ষতিকর পদার্থ থেকে রক্ষা করে ও সেগুলো পরিষ্কার করে দেয়ার চেষ্টা করে। তাই ক্ষতির পরিমাণ সরাসরি দেখতে পাই না আমরা, যেমনটা গবেষণায় কোমল পানীয়তে দাঁত ভিজিয়ে রাখলে দেখা যায়। কিন্তু আস্তে আস্তে ঠিক একই পরিনামের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি আমরা।
এছাড়া, অতিরিক্ত কোমল পানীয় পান হাঁড় ক্ষয়ের জন্যও দায়ী। দাঁত তৈরি হবার মূল উপাদান ক্যালসিয়াম, যা আমাদের হাড়েরও মূল উপাদান। একটি দাঁতের হাল যদি মাত্র ২৪ ঘণ্টা কোমল পানীয়তে থাকার পর এমন হতে পারে, তাহলে বুঝতেই পারছেন এতে আপনার হাঁড়ের কেমন ক্ষতি হতে পারে। কোমল পানীয় নিয়মিত পান করতে থাকলে অসটিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় সংক্রান্ত একটি মারাত্মক ব্যধিতে আপনার আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত।

৫। সাধারণত কোমলপানীয় ভর্তি ৫০০ গ্রামের একটি বোতলে কার্বন, ১৭০ ক্যালোরি সোডা এবং ১৫ চামচ চিনি ব্যবহার করা হয়। এইসবই মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। স্থুলতা, খিদে না পাওয়া, অবসাদ, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, দাঁতের ক্ষয়, বন্ধ্যাত্বের মতো রোগের ঝুঁকিও কোমল পানীয় থেকে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়।

তাই এত সব স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে যতটা সম্ভব কোমল পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন। সুস্থ্য থাকুন।

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G