নাইট ক্লাবে গুলিবর্ষণ, নিহত ৫০
প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডো শহরে সমকামীদের একটি নৈশক্লাবে এক বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫৩ জন। গুলি লেগে গুরুতর জখম হয়েছেন এক পুলিশ অফিসারসহ অর্ধশতাধিক। পুলিশের গুলিতে ওই হামলাকারী নিহত হয়েছে। রবিবার ভোররাতে দক্ষিণ ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো শহরের ভিড়ে ঠাসা ‘পাল্স ক্লাবে’ অতর্কিত আক্রমণ চালায় ওই হামলাকারী। এরপর পুলিশের গুলিতে বন্দুকধারী নিহত হবার আগ পর্যন্ত দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে হত্যালীলা। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের ভয়াবহতম ‘বন্দুক সন্ত্রাস’ হিসেবে উল্লেখ করেছে মার্কিন মিডিয়া।
হামলাকারীর পরিচয় সনাক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ বলছে, নিহত বন্দুকধারীর নাম ওমর সিদ্দিকী মতিন বেসরকারি সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করতেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অনুসারী ছিলেন বলে সন্দেহ করছে এফবিআই।
“খুব সম্ভবত হামলাকারী ইসলামিক স্টেটের অনুগত ছিলেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে,” রয়টার্সকে বলেছেন এফবিআই-র একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
নাইন/ইলেভেনের পর যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ভয়াবহ এই হামলার দায় স্বীকার করে আইএস বলেছে, “আমেরিকার ফ্লোরিডা স্টেটে গে নাইট ক্লাব লক্ষ্য করে সশস্ত্র হামলা, যাতে শতাধিক মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে তা একজন আইএস যোদ্ধা চালিয়েছেন।”
এদিকে, এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেছেন, এধরণের হত্যাকান্ড যে বা যারা চালিয়েছে তারা মানবতায় বিশ্বাস করে না। অন্যদিকে, এই ঘটনার পর ফ্লোরিডা প্রশাসন জরুরি অবস্থা জারি করে।
অরল্যান্ডোর পুলিশ প্রধান জন মিনা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে ক্লাবের ভিতরে গুলি চালাতে শুরু করে ওই বন্দুকধারী। অরল্যান্ডোতে সমকামীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাইটক্লাব পাল্স এ এদিন রাতে ‘ল্যাটিন ফ্লেভার’ ইভেন্ট। সন্ধ্যা থেকেই দলে দলে আসতে শুরু করেন অতিথিরা। কিন্তু তাদের কেউই দুঃস্বপ্নের এই রাতের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। জন মিনা জানিয়েছেন, ক্লাবের ভিতরে বন্দুকধারী গুলি চালাতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে তার জবাবে পাল্টা গুলি চালান ডিউটিরত এক পুলিশ অফিসার। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ঘটে যায়। এমন পরিস্থিতিতে সদস্যদের একাংশকে জিম্মি করার চেষ্টা করে ওই ঘাতক। এই সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। তাদের গুলিতে হামলাকারী নিহত হয়।
ভোর ৫টা নাগাদ ক্লাবের ভিতর থেকে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সাঁজোয়া গাড়ির সাহায্যে ক্লাবের একটি বন্ধ দরজা ভেঙে ফেলা হয়। সেখান দিয়ে অন্তত ৫০ জনের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
রীতিমতো পরিকল্পনা করেই হামলা চালানো হয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন, বন্দুকধারীর সঙ্গে একটি অ্যাসল্ট টাইপ রাইপেল, একটি হ্যান্ডগান এবং একটি অপ্রচলিত গোত্রের আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। আক্রমণের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তবে অরেঞ্জ কাউন্টি সেরিফ জেরি ডেমিংসের ধারণা, সম্ভবত ঘরোয়া ঝামেলার জেরেই নাইট ক্লাবে হামলা চালানো হয়েছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/আরএম