রাঙ্গামাটি নৈসর্গিক পরিবেশের আধার

প্রকাশঃ জানুয়ারি ৩১, ২০১৫ সময়ঃ ১:৪২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:৪২ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম

6ষড় ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। সময়ের আবর্তনে আসে বিভিন্ন ঋতু । প্রকৃতিও সাজে তেমনি বিভিন্ন রূপে। তবে এই শীতে বেড়ানোর জন্য অনেকে ছুটে যান নৈসর্গিক প্রকৃতির সান্নিধ্যে।

এই মৌসুমই হলো বেড়ানোর প্রকৃত সময়। সেই বেড়ানোর জায়গাটা যদি পাহাড় আর অরণ্যে ঘেরা কোনো স্থান হয় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। তেমনই একটি স্থান রাঙ্গামাটি ।

রাঙ্গামাটি বেড়াতে এসে কখনো মন খারাপ করে বাড়ি ফেরে না কেউ। প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে এই অঞ্চল।শীতের হিমেল পরশে সজীব হয়ে ওঠে পার্বত্য প্রকৃতি। আর সেই দৃশ্য নয়নভরে উপভোগ করতে বেড়াতে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা।

ফলে শত শত গাড়ির যান্ত্রিক কোলাহলে ধ্যান ভাঙে গুরুগম্ভীর বুদ্ধ সন্ন্যাসীদের শহর রাঙ্গামাটি। শীত মৌসুমজুড়ে যেন উৎসব লেগে থাকে এই ছোট্ট পাহাড়ি শহরটিতে। ১০টি ভাষাভাষীর ১১টি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক কৃষ্টির সংস্পর্শে আসতে হলে আপনাকে শীত মৌসুমেই আসতে হবে রাঙ্গামাটি ।

রাঙ্গামাটি বেড়াতে এলে হাতে অন্তত দুই দিন সময় নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে ভ্রমণ অপূর্ণ রাখার যন্ত্রণা নিয়েই ফিরতে হবে। এখানে আসা পর্যটকদের মূল আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতু। নয়নাভিরাম হরেক রংয়ের এই সেতু দুইটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। হেঁটে সেতু পার হবার সময় সৃষ্ট কাঁপুনি আপনাকে এনে দেবে ভিন্ন দ্যোতনা। এখানে দাঁড়িয়েই কাপ্তাই হ্রদের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করা যায়। ও-পাড়ে রয়েছে আদিবাসী গ্রাম। ইচ্ছে হলেই দেখতে পাবেন আদিবাসী জীবনযাপনের ক্ষয়িষ্ণু চালচিত্র।

রাঙ্গামাটি এসে চাকমা রাজবাড়ি এবং রাজবনবিহার দেখতে ভুলবেন না। চাকমা রাজার পুরনো বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য এবং রাজবন বিহারের মুগ্ধকর নির্মাণশৈলী দেখে আপনি অবাক হবেন বৈকি! এখানে এসে ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ ভিক্ষুদের দেখা পাবেন। গেরুয়া রংয়ের কাপড় পরিহিত নির্জনতা প্রিয় ভিক্ষুদের জীবনাচারণ অনুসরণযোগ্য। রাঙামাটি শহর থেকে আধঘণ্টা দূরত্বে অবস্থিত আরণ্যক পিকনিক স্পট বালুখালী কৃষি ফার্ম, পেদাতিংতিং ও টুকটুক ইকো ভিলেজও দেখার মতো।

হ্রদ, পাহাড় এবং স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রামে অনিন্দ্যসুন্দর প্রকৃতির মধ্যে গড়ে ওঠা এক আবাস রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্ট। এটি শুধু রিসোর্ট নয়। এখানে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, স্থানীয় সংস্কৃতি, লোকজ পরিবেশের পাশাপাশি আধুনিক সুবিধা আপনাকে মুগ্ধ করবে।

index১১কাপ্তাই হ্রদবেষ্টিত অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত জীবতলি রিসোর্ট। এক পাশে কর্ণফুলী নদী আরেক পাশে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। প্রকৃতি যেনো তার রূপ সৌন্দর্য দুটোই উজার করে দিয়েছে এখানে।

সকালের সূর্য যখন উঁকি দেয় তখন সোনালি আলোক ছটায় লেকের পানিতে বর্ণিল রূপ ফুটে ওঠে। পাহাড় আর হ্রদের সাথে যেন এখানে সূর্যের দারুণ মিতালী।

দুপুর হতেই রোদের প্রখরতা যেন লেকের পানিকে আরো ঝলমল করে তোলে। পড়ন্ত বিকেলের আলোকরশ্মি আরো মোহনীয় দেখায়। পাল্টে যায় লেকের পরিবেশ।

এখানে এসে সুভলং ঝরনা দেখবেন না তা হয় না। পর্বতপ্রেমী পর্যটকরা যেতে পারেন সুভলং অভিমুখে। পাহাড় হ্রদের নিবিড় নৈকট্যে আপনার মনেও সৃষ্টি হতে পারে ভিন্ন এক অনুভূতি। কিন্তু একটাই সমস্যা, শীত মৌসুমে পাহাড়ি ঝরনা যেন মৃতপ্রায়। বর্ষায় আবার এই ঝরনারই আরেক রূপ। এ ছাড়াও আপনি রাঙ্গামাটি যেসব স্থান ঘুরে দেখতে পারেন তা হলো, উপজাতীয় জাদুঘর, ডিসি বাংলো, পলওয়েল পর্যটন, বনবিথী,  বেতার কেন্দ্র, টেলিভিশন উপকেন্দ্র, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র (অনুমতি সাপেক্ষে)।

কীভাবে যাবেন:

আপনি বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন রাঙামাটি আসতে হলে চট্টগ্রাম হয়ে আসতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে আধ ঘণ্টার ব্যবধানে পাহাড়ীকা ও লোকাল বাসগুলো যাতায়াত করে। ভাড়া ১২০- ৮৫টাকা। সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। এছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি  রাঙ্গামাটি বাস সার্ভিস রয়েছে।

কোথায় থাকবেন :

এখানে পর্যটকদের থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে। হোটেল সুফিয়া, নীডস হিল ভিউ, মোটেল জর্জ, হোটেল গ্রীন ক্যাসেল, টুকটুক ইকো ভিলেজ, হোটেল আনিকা অন্যতম। ভাড়া দিন প্রতি ৫০০- ২০০০টাকা পর্যন্ত। চাইলে কম দামের হোটেলও পাবেন। এ ছাড়া পর্যটনের রয়েছে নিজস্ব মোটেল। ভাড়া ১২০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত। রয়েছে ছোট ছোট কটেজ। কটেজগুলোর প্রতি রাতের ভাড়া ৩০০০-৫০০০ টাকা।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G