মাছে ভালো থাকবে স্বাস্থ্য
প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ
বলা হয়ে থাকে মাছে-ভাতে বাঙালি। সে হিসেবে বাঙালির পাতে মাছ থাকা তো খুবই স্বাভাবিক ঘটনা হওয়ার কথা। কিন্তু খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে আজকাল অনেকেই, বিশেষ করে কিশোর-তরুণরা মাছ খেতে চায় না। কিন্তু মাছ খাওয়া উপকারিতা অনেক। এসব উপকারিতা জানা থাকলে নিশ্চিতভাবেই আপনি মাছের স্বাদ পছন্দ না করলেও খাদ্যতালিকায় মাছ রাখার চেষ্টা করবেন।
হার্ট ভালো রাখে –
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় ৫৪৯০০০ মহিলার উপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে যে সকল মহিলারা প্রতি সপ্তাহে একবারও মাছ খান না, যারা অন্তত একবার মাছ তাদের তাদের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি হার্ট এটাকের ঝুঁকি রয়েছে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েসন সপ্তাহে কমপক্ষে দুবার মাছ খাওয়ার পক্ষে । বোস্টনের হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে মোটামুটি পরিমাণ মাছ খেলে হৃদরোগের কারণে মৃত্যুঝুকি ৩৬ শতাংশ কমে।
উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি কমায় –
লাল মাংসের তেল খারাপ হলেও মাছের তেল স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। মাছের তেলে থাকা ওমেগা থ্রি নামক অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড যা রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল LDL ও VLDL কমায় এবং উপকারী কোলেস্টেরল HDL বাড়িয়ে দেয়, ফলে হার্টের রক্তনালিতে চর্বি জমতে পারে না এবং রক্তনালি পরিষ্কার, সংকীর্ণমুক্ত থাকায় রক্ত চলাচল ভালো থাকে। এটি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায় এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা হ্রাস করে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ওমেগা থ্রি রক্তের অণুচক্রিকাকে জমাট বাঁধতে দেয় না, ফলেরক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে সৃষ্ট স্ট্রোক হতে পারে না। সুতরাং হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক প্রতিরোধে আমাদের খাদ্য তালিকায় তৈলাক্ত মাছ থাকা উচিত।
ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে কাজ করে –
চর্বি জাতীয় মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটের বিরাট উৎস। ওমেগা-৩ কার্ডিওভ্যাসকুলারের সুস্থ্যতার জন্য কাজ করে। তাছাড়া, বাত, ডায়াবেটিস, মানসিক চাপ এবং কিছু ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করে।
সাধারণত ঠাণ্ডা পানির মাছে বেশি ওমেগা-৩ থাকে। যেমন: সামুদ্রিক পোনা মাছ, হেরিং, স্যামন, ম্যাকেরল এবং ট্রাউট মাছ।
চুল ভালো রাখে –
চুলের গঠনের মূল উপাদান হলো প্রোটিন। তাই চুলপড়া রোধে আমিষজাতীয় খাবার সাহায্য করবে এটা খুবই স্বাভাবিক! আমিষের উৎস হিসেবে বিভিন্ন ধরনের মাছ অতুলনীয়! আমিষজাতীয় খাবারের মধ্যে মাংসও রয়েছে। তবে মাংসে উপকারী উপাদানের পাশাপাশি অপকারী উপদানের উপস্থিতিও রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। তাই চুলের যত্নে মাংসের তুলনায় মাছই বেশি খান!
ত্বক ভালো রাখে –
চুলের মতো ত্বকও ভালো রাখে মাছ। মাছের ওমেগো-৩ ত্বকের কোষের গঠন ঠিক করে, সানবার্ন থেকে ত্বককে রক্ষা করে। তা ছাড়া মাছের ফ্যাট ত্বকের জন্য হেলদি ফ্যাট, এই ফ্যাট ত্বকের জেল্লা বাড়ায় আর জল ও খাবারের পুষ্টি ত্বকের ভিতরে গিয়ে টক্সিন বের করে দেয়। তবে, বেশি ভাজা মাছে এই ফ্যাটের গুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই বেক বা গ্রিল করার মাছ অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।
চোখ ভালো রাখে –
মাছে থাকে উচ্চ মাত্রার ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। এটা প্রমাণিত যে, ড্রাই আই সিনড্রোম প্রতিরোধে মাছ ভারি কার্যকর। প্রতিদিন মাছ খাওয়া খুবই ভালো। সেটা সম্ভব না হলে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মাছ খেতে হবে নিয়ম করে। এতে করে চোখের দৃষ্টি শক্তিও ভালো থাকবে।
স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করে ও মস্তিষ্ক কর্মক্ষম রাখে –
মাছ বাচ্চাদের মগজের বিকাশে সহায়ক ও স্মৃতি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া, মাছের তেলে থাকা ডকসা হেক্সোনিক অ্যাসিড এবং এলকোসা পেন্টাএনোইক অ্যাসিড মগজের বিকাশ ঘটায়। অকল্যান্ডের একটি শিশু হাসপাতালে এই গবেষণাটি চালানো হয়। গবেষকেরা বলেন, আমাদের ত্বকে উৎপন্ন ভিটামিন ডি এবং সামুদ্রিক মাছ থেকে পাওয়া ওমেগা-থ্রি একত্রে মিলে মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই সেরোটোনিনই দেহের কর্মকাণ্ড এবং মস্তিষ্কের কর্মমতা বাড়ায়।
কিডনি ভালো রাখে –
মাছকে বলা হয়ে থাকে নিরাপদ প্রোটিনের উৎস। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাংসের চেয়ে মাছের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি মাছের ওমেগা৩ কিডনির বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী। নিয়োমিত মাছ খেলে কিডনি ভালো থাকে।
ক্যানসার প্রতিরোধ করে –
সুইডেনের বিশেষজ্ঞদের গবেষণা অনুযায়ী, মাছ না খেলে ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ মাছ খাওয়া লোকদের চেয়ে দুই বা তিন গুণের বেশি । কিন্তু শুষ্ক মাছ সবসময় খেলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে । শুধু টাটকা মাছ খেলে ক্যাসার প্রতিরোধ করা যায় ।
প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া