ইইউ প্রশ্নে ব্রিটেনে গণভোট আজ
প্রকাশঃ জুন ২৩, ২০১৬ সময়ঃ ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণপ্রতিক্ষণ ডেস্কঃ
শেষ হয়েছে শেষ মূহুর্তের প্রচারণা। আর মাত্র এক ঘণ্টা পরেই ব্রিটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে থাকবে কি থাকবে না এ প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশটিতে।
ব্রিটেন ২৮টি দেশের জোট ইইউর সঙ্গে থাকবে, নাকি ৪০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে একলা চলবে- সে প্রশ্নে রায় দেবেন প্রায় ৪৬ মিলিয়ন ভোটার । বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় এই ভোটগ্রহণ শুরু হবে, তা একটানা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। শুক্রবার সকাল (বাংলাদেশ সময় বিকাল) নাগাদ ফল আশা করা হচ্ছে।
জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ প্রশ্নে এমন দ্বিধায় আর কখনও ভুগতে দেখা যায়নি যুক্তরাজ্যবাসীদের। বিভিন্ন জনমত জরিপের ফলগুলোর ফল বলছে, দুই পক্ষই সমান-সমান অবস্থায় রয়েছে।
‘ইইউতে থাক’ আর ‘ইইউ ছাড়’- দুই পক্ষের প্রচারের ডামাডোলেও কিছু ভোটার এখনও দ্বিধায় রয়েছেন বলে সব জরিপেই উঠে এসেছে। ডেইলি মেইলের এক জরিপের দেখা গেছে এই হার ১১ শতাংশ। দ্বিধায় থাকা এই ভোটাররাই জয়-পরাজয় নির্ধারণের নিয়ামক হবেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ব্রিটিশ, আইরিশ ও কমনওয়েলথ নাগরিকদের মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বা তার বেশি এবং বিদেশে অবস্থানরত যুক্তরাজ্যের যেসব নাগরিকের নাম অন্তত ১৫ বছর ধরে ভোটার তালিকায় আছে- তারা এই গণভোটে অংশ নিতে পারবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উভয় পক্ষের ব্যাপক প্রচার থাকলেও কত সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন, তার ওপরও ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করছে।
৪১ বছর আগে ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটিতে (ইইসি) যোগ দেওয়ার প্রশ্নে গণভোটে ৬৭ শতাংশ পক্ষে ভোট দিয়েছিল। ইইসিই পরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউতে রূপ নেয়।
কত শতাংশ ভোটার ভোট দিতে যাচ্ছেন, তার কোনো আভাস পাওয়া যায়নি। বুথফেরত জরিপেও স্পষ্ট কোনো ধারণা মিলবে না বলে মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ফল পাওয়ার জন্য শুক্রবার সকাল নাগাদ ম্যানচেস্টার টাউন হলের ঘোষণার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।
সারাদেশের ৪০ হাজার ভোট কেন্দ্র থেকে ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়া হবে ৩৮২টি কেন্দ্রে। সেখানে গণনার পর ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে আঞ্চলিক ফল ঘোষণা হবে। সবগুলো সমন্বয় করে চূড়ান্ত ফল হবে ম্যানচেস্টার থেকে।
২৮ জাতির ইইউ জোটের সঙ্গে চার দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করে নতুন পথে হাঁটার প্রশ্নে যুক্তরাজ্যের এই গণভোটকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে ‘ব্রেক্সিট’।
ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে যারা প্রচার চালাচ্ছেন, তাদের আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে অভিবাসনের বিষয়টি। আর যারা ইইউতে থাকার পক্ষে বলছেন, তাদের প্রচারের ভিত্তি হল অর্থনীতি।
‘ভোট লিভ’ এর প্রচারকরা অভিবাসীদের ব্রিটেনে আসা বন্ধ করতে চায়। বিশেষ করে ইউরোপ থেকে কেউ যাতে অবাধে যুক্তরাজ্যে এসে বসবাস করতে না পারে, সে দিকেই সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন তারা।
অন্যদিকে ‘রিমেইন গ্রুপ’ বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এলে ৫০ কোটি মানুষের বাজার হারাবে ব্রিটেন। তাতে অর্থনীতিতে আবার ‘ধ্বস’ নামবে, যা এক যুগেও কাটিয়ে ওঠা যাবে না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে ভোট দিলে তা হবে ‘একটি বিরাট ভুল’ এবং তা দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে।
বিরোধী লেবার পার্টির নেতারাও ইইউতে থাকার পক্ষে ভোট দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী ও টিউলিপ সিদ্দিকও রয়েছেন।
ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, সাবেক দুই উপ প্রধানমন্ত্রী মাইকেল হেজেলটাইন ও নিক ক্লেইগও সানডে অবজারভারে প্রকাশিত এক যৌথ চিঠিতে ইইউতে থাকার পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ইইউ ত্যাগের পক্ষের অন্যতম নেতা কনজারভেটিভ পার্টির মাইকেল গোভ প্রধানমন্ত্রীর আশঙ্কা নাকচ করে জনগণকে বলছেন, ‘ভোট ফর হোপ’।
‘ভোট লিভ’ পক্ষের অন্যতম নেতা ইউনাইটে কিংডম ইনডিপেনডেন্স পার্টির নাইজেল ফারাজ এমন কথাও বলেছেন যে, গণভোটের রায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে গেলে অভিবাসীদের মাধ্যমে ব্রিটিশ নারীদের ‘যৌন নিপীড়ন বাড়বে’।
যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় জোট থেকে বের করে আনার লক্ষ্যে কিছু ডানপন্থি রাজনীতিবিদের উদ্যোগে ১৯৯১ সালে গঠিত হয় ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টি। ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠা দলটি ২০১৩ সালে স্থানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে সাফল্য পায় এবং প্রতিনিধিত্বের বিচারে যুক্তরাজ্যের চতুর্থ শক্তিশালী দলে পরিণত হয়।
ইনডিপেনডেন্স পার্টির এই উত্থান কনজারভেটিভ পার্টির জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে অনেকটা চাপের মুখেই ইইউ প্রশ্নে গণভোটের প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হন কনজারভেটিভ নেতা ডেভিড ক্যামেরন, যদিও তিনি নিজে এখন ব্রেক্সিটের বিরোধিতা করছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ডেভিড ক্যামেরনের রাজনৈতিক জীবনে এটাই সম্ভবত ‘সবচেয়ে বড় জুয়া’। ২৩ জুনের ভোটের ওপর তার এবং তার দলের অনেক কিছুই নির্ভর করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গণভোটের ফল যাই হোক, ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাক বা না থাক, এই ভোটের প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। ব্রিটেনের আগামী প্রজন্ম, আগামী দিনের রাজনীতিও হয়ত পাল্টে দেবে এই ভোট।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রশ্নে ব্রিটেনে গণভোটের টুকিটাকি –
মোট ভোটার– ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৯৯ হাজার ৫৩৭
ভোট কেন্দ্র– ৪০ হাজার
ভোট গণনা কেন্দ্র– ৩৮২টি
ফল ঘোষণা– ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে
পূর্ণাঙ্গ ফল ঘোষণা– ম্যানচেস্টার টাউন হল থেকে
প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া