ফারাজরাই হোক বাংলাদেশ

প্রকাশঃ জুলাই ৪, ২০১৬ সময়ঃ ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:২৯ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

b699a64ded814e79f7a6399f3ba640ef-5778fc41289f1

বয়স মাত্র বিশ হয়েছিল ফারাজ হোসেনের। সামনে পড়ে ছিল অনন্ত সম্ভাবনা, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি। বাংলাদেশের অন্যতম ধনী পরিবারের সন্তান ফারাজ পড়তো বিশ্বের সেরা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই ফারাজকে প্রাণ দিতে হলো জঙ্গিদের নৃশংসতায়।

কিন্তু ফারাজ শুধু জঙ্গি হামলায় নিহত এক তরুণই নয়, ফারাজ এক অসম সাহসিকতার নিদর্শন। নিদর্শন বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও মানবিকতার। কারণ ফারাজ হোসেন তার দুই বন্ধুর জন্য প্রাণ দিয়েছে। এমনকি জঙ্গিরা তাকে চলে যাওয়ার অনুমতি দিলেও।

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিদের হামলায় নিহতের মধ্যে ফারাজ আইয়াজ হোসেন ও অবিন্তা কবীর ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার এমোরি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। আর এ হামলায় নিহত যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভারতীয় তরুণী তারুশি জৈন ছিলেন তাদের বন্ধু। পিতার কর্মসূত্রে ঢাকায় অবস্থানকালে তারুশি একসময় ফারাজদের সঙ্গে একই স্কুলে পড়তেন। গ্রীষ্মের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকায় এসেছিলেন ফারাজ ও অবিন্তা। তারুশি বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা শিক্ষানবিশ বৃত্তি নিয়ে ঢাকায় আসেন। ৩ বন্ধু ফারাজ, অবিন্তা আর তরুশি নিজেদের মধ্যে দেখাসাক্ষাতের পর গুলশানের অভিশপ্ত হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে গিয়েছিলেন। সেখানেই মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয় তাদের।

কিন্তু জঙ্গিরা মূলত বিদেশীদেরই টার্গেট করেছিল। জিম্মিদশা থেকে বেরিয়ে আসা একাধিকজনের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানায়,  জঙ্গি আরো বেশ কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে ফারাজ আইয়াজ হোসেনকেও মুক্তি দেয়। এমনকি অন্য বাংলাদেশিরা নিজেরা বেরিয়ে যাওয়ার সময় ফারাজকে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য ডাকাডাকিও করেন। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে, ফারাজ জঙ্গিদের প্রশ্ন করে, আমার এই দুই বন্ধুর কী হবে?

জঙ্গিরা আগেই জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছিল, আবিন্তা কবির এসেছেন আমেরিকা থেকে আর তারুশি জৈন ভারতীয়। ফারাজকে জঙ্গিরা জানায়, ওদের ছাড়া হবে না। তখন ফারাজ বলেন, দুই বন্ধুকে ফেলে রেখে আমি যাব না।পর দিন ফারাজ হোসেনের লাশ পাওয়া যায়।

বন্ধুত্বের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন ফারাজ হোসেন। তার বন্ধুদের একজন ভিন্ন ধর্মের ও ভিন্ন দেশের ছিলেন। তবুও কোন কিছু তাকে মানবিকতার বোধ থেক পিছু হটাতে পারেনি।

অথচ যে জঙ্গিরা এই নারকীয় হত্যাকান্ড চালিয়েছে তারাও বাংলাদেশের সন্তান। কিন্তু তাদের একটাই সমস্যা ছিল। তাদের মধ্যে শুভ বোধ, মানবিকতার বোধ পুরোপুরি লুপ্ত হয়েছিল। কিন্তু এদেরকেই যাতে আমরা বাংলাদেশ ভেবে ভুল না করি, এদেরকেই যাতে আমরা বাংলাদেশ হয়ে উঠতে না দেই। ফারাজ হোসেন আমাদের সামনে উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক, আমাদের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়াক। ফারাজরাই হোক বাংলাদেশ। যারা অন্যের জীবন নেয় না, বরং অন্যের জন্য জীবন দিতে পারে।

উল্লেখ্য, ফেসবুক ফারাজ হোসেনের আইডি রিমেম্বারিং করেছে। সেই সাথে তার দুই বন্ধু অবিন্তা ও তারুশি এবং হামলায় নিহত আরেক বাংলাদেশী ইশরাত আকন্দের ফেসবুক আইডিও রিমেম্বারিং করেছে।

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G