বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে!
প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিয়ে। তাও সেটি যদি হয় ব্যাঙের জন্য, কি খুব হাস্যকর মনে হচ্ছে? মোটেও হাস্যকর নয় এটি। ছায়ামণ্ডপ, পুষ্পমাল্য, গায়েহলুদ, আশীর্বাদ, ধান-দূর্বা, ভোজন—সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা থেকে শুরু করে সকল আয়োজনের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হয় এ বিয়ে। সম্প্রতি এমনই ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের বিরল উপজেলায়।
শুধুমাত্র অনাবৃষ্টি থেকে বাঁচতেই দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ভারাডাঙ্গী বেতুরা পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা শনিবার হিন্দুরীতিতে ধুমধামের মধ্যে দিয়ে দুই ব্যাঙের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে।
জানা যায়, রীতি অনুযায়ী যখন অনাবৃষ্টির যখন দেখা দেয় ঠিক তখন পূর্ব-পুরুষদের নিয়ম কানুন মেনে বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে দেন তারা।“রামায়নে বর্ণিত বৃষ্টির দেবতাকে খুশি করার জন্য সে সময় ব্যাঙের বিয়ের প্রচলন ছিল।
সেই ধারা অনুসারে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করে থাকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের বিশ্বাস ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টির দেবতা খুশি হয়ে বৃষ্টি দেন।” শনিবার দুপুরে ভারাডাঙ্গী বেতুরা পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা একদল কনেপক্ষের আর আরেকদল বরপক্ষ হয়ে বিয়েতে অংশ নেন।
দেখা গেছে, গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ জড়ো হয়ে দু’টি ব্যাঙকে বিয়ে দিতে গায়েহলুদের আয়োজন করেছে। তার পাশেই চলছে খাওয়া দাওয়ার জন্য রান্নার আয়োজন। বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে ঢাকঢোলের বাজনার সঙ্গে চলছে কিশোর-তরুণদের দল বেঁধে নাচ।
এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা চলে কয়েকটি পর্যায়ে। প্রথমে হয় গায়ে হলুদ, এরপর ব্যাঙ দুটিকে তেল-সিঁদুর মেখে গোসল করিয়ে বসানো হয় বিয়ের পিড়িতে, এরপর মালা বদল, তারপর চলে আশীর্বাদপর্ব। বর-কনেকে একটি স্থানে বসানোর পর বর ও কনেপক্ষ ধান-দুর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করেন ব্যাঙদম্পতিকে।
এরপর অনেকেই নগদ অর্থসহ নানা উপহার দেন। সবশেষে বাড়ির আঙ্গিনায় ধানের চারা রোপণ করার মাধ্যমে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার সমাপ্তি ঘটে।
এলাকার অশীতিপর বৃদ্ধা তেনিয়া বর্মণের ভাষ্য, তাঁর জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই এই ধরনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা তিনি দেখে আসছেন। তাঁর বাবা যখন বেঁচে ছিলেন, তিনিও তাঁকে বলতে পারেননি কবে, কখন বা কত সাল থেকে গ্রামে ব্যাঙের বিয়ের প্রচলন হয়েছে। এখনো বংশপরম্পরায় এটা চলছে।
প্রতিক্ষণ/আরএম/রাসিব