প্রাণশক্তিতে ভরপুর এক মানব
প্রতিক্ষণ ডেস্ক:
নিক ভুজিসিক, হাত-পা বিহীন অথচ প্রাণশক্তিতে ভরপুর এক মানুষ। শত প্রতিকূলতার মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য ‘আশা’র অপ্রতিরোধ্য ও অপরিহার্য ক্ষমতার বাণী মানুষের মধ্যে বিলি করেন তিনি ।
জন্ম থেকেই নিকের কোনো হাত-পা নেই। শুধু উরুর কাছ থেকে ছোট্ট পায়ের মতো একটি অঙ্গ বেরিয়ে গেছে যা তাকে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে সোজা হয়ে থাকতে সহায়তা করে। নিকের শারীরিক এই সমস্যাকে বলা হয় টেট্রা-অ্যামেলিয়া সিনড্রোম।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বেড়ে ওঠা নিক শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতার কারণে বাল্যকাল থেকেই চরম বিষণ্ণতায় ভুগতেন। স্কুলের সহপাঠীরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। এরকম এক পরিস্থিতিতে মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
তবে এর পরের গল্পটা একেবারেই ভিন্নরকম। উপলব্ধি করেন জীবনে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তা। তাই ধীরে ধীরে জীবন নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করতে শুরু করেন নিক। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তার হাইস্কুলের এক দারোয়ান তাকে জনসমক্ষে বক্তৃতা করার জন্য উৎসাহিত করেন। আর অভাবনীয়ভাবে খুব শিগগিরই তিনি অভূতপূর্ব সাড়া পান। সবার মুখে মুখে নিক নামক এক সংগ্রামী যোদ্ধার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। তার আত্মবিশ্বাস অনেককে আত্মবিশ্বাসী করে তুললো।
নিজের সাথে নিজেই যুদ্ধ করে আত্মবিশ্বাসী নিক পেরেছেন নিজেকে সফল মানুষদের কাতারে দাঁড় করাতে। ৩২ বছর বয়সী এই জীবন যোদ্ধায় এখন বিশ্বের সেরা বক্তাদের একজন। জীবনের মানে তার চেয়ে ভালো কে জানে! মরতে মরতে বেঁচে যাওয়া ছোট্ট সেই নিক আজ সাহস যোগাচ্ছে সুস্থ-সবল অথচ নেতিবাচক -হতাশাবাদী লোকজনদের। যাদের সব আছে তবুও কিছুই নেই। সেই ‘না’ কে এখন ‘হ্যাঁ’ করার কাজ করে যাচ্ছেন একজন হাত-পা বিহীন দারুণ প্রাণবন্ত জীবনী শক্তিতে ভরপুর বক্তা; নিক।
সারা দুনিয়া ভ্রমণ করে প্রেরণাদায়ী উজ্জীবিত বক্তৃতার মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষকে অভিভূত করছেন তিনি, এতে অনেকেই পাচ্ছেন নতুন করে বেঁচে থাকার আশা, পুরোনো ভুল মাড়িয়ে খুঁজে পাচ্ছে জীবনের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী এবং ছোট্ট স্কুলগামী শিশুরাও নিকের প্রচন্ড ভক্ত ।
নিজের প্রসঙ্গে নিক বলেন, টেট্রা-অ্যামেলিয়া সিনড্রোম ছাড়াও অ্যাড্রেনাল হরমোন জনিত সমস্যা কোনো সমস্যাকেই আমি পাত্তা দেয় না । দাঁড়ানো, টাইপ করা, বল খেলা, নিয়মিত সাঁতার এবং দুঃসাহসিক স্কাই ডাইভিং করে থাকি আমি।
বর্তমানে নিক যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সুখে বসবাসও করছেন আট দশজন সাধারণ মানুষের মতো। তবে তার সহ্যক্ষমতা, জীবন দর্শন এবং বোধবুদ্ধি অনেকের চেয়ে অনেক বেশি। তাইতো শত বাধা পেরিয়ে স্বাভাবিক জীবন সংসারের আনন্দ-বেদনার সঙ্গী হতে পেরেছেন আরেকজনের।তাদের ফুটফুটে ছোট্ট সন্তান যেন ঘরটিকে আরও আলোকিত করে দিয়েছে।
Life Without Limbs এবং Attitude is Altitude নামের দুটি সংগঠনও রয়েছে নিকের। এ থেকে প্রণোদনামূলক বক্তৃতা এবং দুর্বলদের ঠাট্টাবিদ্রুপ না করার জন্য প্রচারণা চালান তিনি। নিকের আত্মজীবনী নিয়ে ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে Love Without Limits নামের একটি বই ।
আসুন জীবনের এই বেঁচে থাকাকে সার্থক করে তুলি। কী নেই আমাদের? যদি নিক পারে জীবনের সুন্দর অর্থ খুঁজে পেতে; তাহলে সুস্থ-সবল এই আপনি কেন পারবেন না।
প্রতিক্ষণ/এডি/এস.আর.এস