গুণী অভিনেত্রী দিলারা জামান। ৬০’ দশকের শুরুতে নাটকে অভিনয়ের মধ্য নাট্যাঙ্গনে শুরু হয় তার পথচলা। প্রথম জীবনে নায়িকা, পরবর্তী সময়ে কখনো বড় বোন, মা, খালা, দাদী চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দা ও ছোট পর্দা দুই মাধ্যমেই তৈরী করেছেন নিজের শক্ত অবস্থান।
পাঁচ শতাধিকেরও বেশি নাটকে অভিনয় করে খ্যাতিমান এই অভিনেত্রী ঠাঁই করে নিয়েছেন দর্শক হৃদয়ে। পেয়েছেন একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা।
সম্প্রতি প্রতিক্ষণের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় স্বনামধন্য অভিনেত্রী দিলারা জামান ব্যক্ত করেছেন তার শৈশব, অভিনয় জীবন, নতুন প্রজন্মের নিকট তার ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সিফাত তন্ময়।
-আপনি কেমন আছেন ?
এই মুহূর্তে খুব ভাল লাগছে এবং খুব ভাল আছি ।
-আপনার অভিনয়ের হাতেখড়ি হয়েছে কিভাবে ?
হাতেখড়ি বলতে, এখন যেমন জানার-শেখার অনেক কিছু আছে, তখন এরকম কোন সুবিধা খুব একটা ছিল না, টেলিভিশনে সিনেমা দেখে মনে হতো, কিভাবে এত সুন্দর করে ওরা অভিনয় করে।
এভাবে কি পারব আমি, হয়তো বড় হয়ে পারব, আর তখন থেকেই মনে যে বীজটা গঠিত হল। বাংলা বাজার স্কুলে যখন ভর্তি হই তখন থেকে অভিনয় শুরু করলাম ।
– আপনার শৈশবের মজার কোন স্মৃতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি ।
খুবই দুষ্টু আর আমি রোগা পাতলা ছিলাম। সবাই বাতাসির মা ডাকত। একদিন বন্ধুরা আমাকে পেয়ারা গাছে উঠতে বলে, পেয়ারা পেরে দেয়ার জন্য । আমি যখন গাছে উঠি তখন হঠাৎ যার গাছ সে চলে আসে, আর আমার বন্ধুরা সবাই আমাকে রেখেই পালিয়ে যায়। গাছের মালিক আমাকে বলল, তুমি নাম মেয়ে।
তোমার খবর আছে। তারপর আমাকে ধরে আমার বাসায় নিয়ে যায়। আমার আম্মা তো খুবই লজ্জা পেয়েছেন। পরের দিন অনেকগুলো পেয়ারা বাজার থেকে কিনে এনে, আমাকে বলল দেখি তুমি কতো পেয়ারা খেতে পার, খাও এখন। লোকের গাছ থেকে পেয়ারা চুরি করে খাও! এই রকম আরও অনেক ধরনের ঘটনা আছে ।
-শিশু কিশোরদের নিয়ে আপনার কাজগুলো সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি ।
আমি এক সময় শিশু সংগঠন করতাম, খেলাঘর করেছি। শিশু সংগঠনগুলোর সাথে যতটা পেরেছি আমি যুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি। আমি হয়তো অনেক কিছু করতে চেয়েছি, চিন্তা করেছি কিন্তু করতে পারিনি। আমার সামর্থ্য আমাকে দেয়নি । কিন্তু যখন, যে আমাকে ডাকে, আপনি আসেন, পথশিশুদের জন্যে বা অন্য কোন সংগঠনের কোন কাজ হচ্ছে বা অনুষ্ঠান হচ্ছে। আমার যতো শরীর খারাপ থাকুক, যতো নাটকের শিডিউল থাকুক আমি যাবার চেষ্টা করি ।
-ভিনদেশী নাটক সিরিয়ালগুলোর প্রতি ঝুঁকে পড়ছে অনেক শিশু কিশোরেরা-এ থেকে উত্তরণের উপায় কি ?
তুমি যে একটা কঠিন প্রশ্ন করলে এবং এই প্রশ্নটা জ্বলন্ত অগ্নিগিরির মতো আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা বুঝতে পারছিনা যে, আমাদের প্রজন্ম সামনে কি ভয়ঙ্কর একটা অবস্থার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। এটি আমাদের যারা শিক্ষাবিদ আছেন, চিন্তাবিদ আছেন, যারা এই সমস্ত জাতীয় বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করেন, তাদেরকে আরও অনেক ভাবতে হবে। এইরকম একটা বিশাল থাবা থেকে কিভাবে আমরা আমাদের শিশুদেরকে বাঁচাতে পারব। এভাবে শিশুদেরকে একটা অন্ধকারের দিকে এগিয়ে দিবেন না । হঠাৎ এখন আলো দেখছি কিন্তু অচিরেই এই আলোটা কালো মেঘে ঢেকে যাবে । অভিভাবক যারা আছেন, আপনারা এখন থেকে সচেতন হন, চিন্তা করুন শিশুদের নিয়ে । আমাদের সবাইকে এই ব্যাপারে ভাবতে হবে।
-শিশু সাংবাদিকতা বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
আমি অবাক হয়ে যাই যে এতো প্রতিভাবান, এতো ট্যালেন্টেড এরা । মাইক নিয়ে ছুটে যাচ্ছে কোথায় কোথায়, কতো খবর জোগাড় করছে একদম বড়দের মতো । আমার সত্যি বড় অহংকার হয়, আমার গর্ব হয়, আমি তোমাদের সত্যি স্যালুট জানাই ।
-নতুন প্রজন্মের নিকট আপনার প্রত্যাশা কি?
নতুন সূর্য উঠেছে। তোমরা আমাদের একটা সুন্দর দিন উপহার দাও। এই জাতির জন্যে, এই দেশের জন্যে। আমরা তোমাদের নিয়ে অনেক আশা করি। আমরা যা পারিনি, তোমরা তা পারবে। তোমাদের শক্তি দিয়ে, দৃঢ় মনোবল দিয়ে। তোমাদের প্রত্যাশা নিয়ে এই দেশ আরোও এগিয়ে যাক ।
প্রতিক্ষণ/এডি /এস. টি