সুনামগঞ্জে টিলা কেটে বালি-পাথর লুট
হাবিব সরোয়ার আজাদ, সুনামগঞ্জ:
সীমান্তে দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও টিলা খেঁকো চক্রর সদস্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে অবাধে টিলা কেঁটে বনভুমি উজাড় করে ফেলছে। অবৈধভাবে কোয়ারী খনন করে বালি পাথর লুটে নিয়ে যাচ্ছে।
সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর এমন হরিলুট চললেও প্রশাসন ও বিজিবির সদস্যরা রহস্যজনক কারণে নীরব দর্শকের ভুমিকায় রয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সরেজমিনে গেলে স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ‘জেলার দোয়ারাবাজারের বাংলাবাজার ইউনিয়নের ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মেইন পিলার ১৫০ গজের ভেতরে বাশঁতলা নামকস্থানে সরকারি খাঁস খতিয়ানের প্রায় কয়েক’শ একর খাস ভুমি ও টিলা জুড়ে বালু বনভুমি ও গাছপালা কেটে গত কয়েক বছর ধরে সাবেক ইউপি সদস্য নজরুল, সাবেক ইউপি সদস্য হাছিব উদ্দিন ও সামছুর নেতৃত্বে শতাধিক কোয়ারী খনন করে প্রতিনিয়ত হ্যান্ডট্রলি ও লরি বোঝাই করে লাখ লাখ টাকার বালি পাথর লুটে নিয়ে যাচ্ছে।হতদরিদ্র শ্রমিকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে বালি পাথর লুটের টাকায় চক্রের অনেকে কোটিপতি বনে গেছে বলেও জানান তারা’।
বার বার অভিযোগের পরও স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি বলে জানান তারা। অভিযোগ রয়েছে, এসব বালি পাথর রুটের সিংহ ভাগ টাকাই বাংলাবাজার ইউনিয়নের সরকার দলীয় সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিনের ভান্ডারে জমা হচ্ছে। জনশ্রুতি রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন , বিজিবির কথিত সোর্স সামছু ও কয়েকজন কথিত সাংবাদিককে ম্যানেজও করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য নজরুল মিয়ার নেতৃত্বে সাবেক ইউপি সদস্য হাছিব উদ্দিন ও বিজিবি’র কথিত সোর্স সামছু মিয়াসহ আরো কয়েকজন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে দৈনিক ট্রলি প্রতি বখরা দিয়ে প্রকাশ্যে শতাধিক ট্রলি -লরি দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তঘেরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত একটি স্মৃতিসৌধের মাঠ ও এর আশে পাশে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে বালি পাথরের স্তুপ। এ চক্র বালি পাথর লুটের সুবিধার্থে কয়েকশ একরের ভুমিতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ,বনজ ও ঔষধি গাছ কেটে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাবাজার হকনগর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সভাপতি মো. আবদুল আহাদ জানান, ‘বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ঐ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের খাস ভুমি ও টিলা কেঁটে কোয়ারী খনন করে অবাধে বালি পাথর লুট করে নিয়ে যাচ্ছে’। তিনি আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যকে ট্রলি প্রতি নির্ধারিত হারে উৎকোচ দিয়ে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে দিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে ট্রলি লরি বোঝাই করে পাথর নিয়ে গেলেও তারা কার্যত গদাই লস্করের ভুমিকা পালন করছেন’।
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আলী আমজদ জানান, ‘এই সীমান্ত ঘেরা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অঞ্চলটুকুকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করার কথা ছিল, যদিও তা এখনো হয়ে উঠেনি এরপরও প্রতিদিন কয়েকশ দর্শনার্থী এ এলাকায় আসলে পাথর লুটকারীদের তান্ডব দেখে একটাই প্রশ্ন তোলেন এখানে আদৌ কী কোন প্রশাসন আছে? না নেই? অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ওই চক্রের সাথে আমার কোন ধরণের সংশ্লিষ্টতা নেই। ’ সুনামগঞ্জ-২৮ বর্ডারগার্ড ব্যাটালিয়নের বাংলাবাজার বিওপির হাবিলদার কবীর জানান, বিওিপির সামনে দিয়ে ট্রলি-লরি বোঝাই করে বালি পাথর নিয়ে যাবার বিসয়টি আমার জানা নেই।’
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া মঙ্গলবার সন্ধায় বলেন, ‘টিলা ও খাঁসভুমি থেকে বালি পাথর লুটের বিসয়টি আমি জানতে পেরেছি, ওখানে সার্ভেয়ার পাঠিয়েছিলাম মাপঝোঁক করে এসেছে, বালি পাথর লুটের সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
প্রতিক্ষণ/এডি/রাহা