বৃষ্টি এল গড়গড়িয়ে
শারমিন আকতার:
উদাস করা চঞ্চল বিকেলে প্রথম মেঘের আনাগোনা। একটু ঝিরিঝিরি ঠান্ডা বাতাস, দখিনা সমীরণকে মাড়িয়ে। আকাশজুড়ে মেঘ; আর তার নিচে হরেক পাখির সমাগম। কেউ গল্পে ব্যস্ত আবার কেউ বাড়ি ফেরায়। তারও নিচে জানালার ফাঁক দিয়ে মেঘমল্লারের দেখা পাওয়ার আশায় মেঘবালিকা।
উদাসীন কবি আকাশপানে তাকিয়ে; কখন ঝুমঝুম করে নামবে বৃষ্টি। আর প্রতিটি ফোঁটা থেকে বেরিয়ে আসবে কবিতার এক একটি উপমা, তাল, লয়, ছন্দ। এদিকে ভেন্না পাতা দিয়ে গড়া পাখির বাসার মতো ছোট্ট ঘরে থাকা আসমানিদের দু:চিন্তার শেষ নেই; কখন মেঘ ফুঁড়ে আকাশ ভেদ করে নামবে বৃষ্টি, আর কখন ঘর অন্ধকার করে ফাঁক ফোকর দিয়ে গড়িয়ে পড়বে পানি। সবাইকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ সমস্ত আকাশ নীল চাদরে ঢাকা পড়লো নিলাম্বরীর ইশারায়। মেঘ বালিকা হতাশ ঝাপসা আকাশ নীলাভ দেখায় বলে।
এরপর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হল। নীলের আকাশে গাঢ় কালোছায়া। পাখিরা গাছের ডালে চুপটি করে বসে আছে। পাতাগুলোও অনড়। খানিক বাদে পুনরায় সব চিত্রপট বদলে গেল এক নিমেশে। মৃদুমন্দ ফাল্গুনী বাতাস হিমেল হাওয়ার রূপে ধরা দিল। গাছের পাতাগুলো বড় বেশি নড়চড় করছে অশান্ত বাতাসের পাল্লায় পড়ে। পাখিরা জড়সড়। চারদিকের অন্ধকারকে ছাপিয়ে সাদা বিদ্যুতের ঝলকানি। আকাশে মেঘের গড়গড় গর্জন। বসন্তের দখিনা সমীরণের দেখা নেই। অবশেষে গুটগুটে অন্ধকার আকাশ ভেদ করে ঝমঝম আওয়াজে চারদিক মাতিয়ে তুললো বরষণ।
তার গম্ভীরার ঢঙে গগন বিদীর্ণ চিৎকারে সারা পাড়া অস্থির। চলার পথে হঠাৎ পাওয়া এ বৃষ্টির হুমকি উপেক্ষা করার সাধ্য ছিল না নগর জীবনের ব্যস্তজনদের। তাই যে যার মতো ছাউনি খুঁজে একটু থামলো। কেউ আবার বৃষ্টির আগমনীবার্তায় বেজায় খুশি। ইচ্ছে করে বৃষ্টিস্নানে মেতে উঠলো সব ভুলে; মায়ের বকুনি সত্ত্বেও। জ্বর, ঠান্ডা, মাথাব্যথা সবকিছু পেছনে ফেলে।
নগরের কৃত্রিম আলোকে খানিক সময় থামিয়ে দিয়ে বারান্দায় বৃষ্টি বন্দনায় ন্যস্ত কোনো এক ব্যস্ত হরিজন। কেউ আবার হঠাৎ বৃষ্টিকে উটকো ঝামেলা ভেবে বেজায় বিরক্ত। দরজা-জানালা বন্ধ করে বৃষ্টি ও তার হিমেল বাতাসকে অবরুদ্ধ ঘরে ঢুকতে দিতে নারাজ। এমন বেরসিকের ভীড়ে ভিজে টইটুম্বুর পাশের বাড়ির ছোট্ট ছেলেটি। ছাতা মাথায় নিয়ে ছাদে গেল বৃষ্টি দেখতে; সারা শরীর ভিজিয়ে ভেজা কাকের মতো জেড়োসড়ো ভঙ্গীমায় ফিরলো ঘরে অবশেষে।
এভাবেই
বৃষ্টি আসে গড়গড়িয়ে
মধ্য দুপুর ভরভরিয়ে
দুচোখ জুড়ে ঝড়ঝরিয়ে
কালো মেঘে ফরফরিয়ে
আকাশ ফুঁড়ে তরতরিয়ে
নগর জীবন করবড়িয়ে
বৃষ্টি এল সরবরিয়ে।