অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছেন না তো?

প্রকাশঃ মার্চ ১১, ২০১৭ সময়ঃ ৯:০৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:৪৫ অপরাহ্ণ

শারমিন আকতার:

মায়েদের ক্ষেত্রে একথা বড় বেশি সত্য। অতি আদরের সন্তানকে কিছু বলতে না পারা। এটা একটা প্রচলিত সমস্যা। যদি সন্তান কষ্ট পায়। এই ভেবে মা কিছু বলেন না, দেখেও দেখেন না, প্রতিবেশীর অভিযোগ শুনেও শোনেন না। যদি সন্তানের মন ছোট হয়ে যায়! এরকম অপ্রাসঙ্গিক ডায়ালগ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যে মন ্অন্যায় অযুক্তিকভাবে প্রশ্রয় পেতে পেতে বড় হয়; আর কারো জীবনের চরম ক্ষতি করে দিয়ে নিশ্চিন্তে মায়ের কোলে শুয়ে আরও প্রশ্রয় পায়; সে বড় মনের কি কোনো প্রয়োজন আছে এই পৃথিবীতে? 

অন্যায়, কখনও ছোট-বড় হতে পারে না। অন্যায় অন্যায়ই, তার আবার ছোট-বড় কী। যাকে আজ আপনি তেমন কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন; কাল সেখান থেকেই জন্ম নিচ্ছে আরেকটি অন্যায়ের বীজ। আপনি আরেকটি  বীজ রোপন করতে সাহায্য করলেন। দিনে দিনে সে অন্যায়কারীর সাহস, প্রশ্রয়, সীমা সবকিছু বাড়তে থাকবে। একসময় আপনার আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে। তখন চাইলেও কিছু করতে পারবেন না; আফসোস করা ছাড়া।

অপরাধী যেই হোক না কেন অতি আদরের অথবা অনাদরের কিংবা কিছুই না; মনে রাখবেন অপরাধীর কোনো আপনজন নেই। সে তার অন্ধকার জগতে একা বাস করে। তাকে শাসন করুন, শাস্তি দিন অথবা আয়ত্বের বাইরে চলে গেলে আইনের হাতে তুলে দিন। ভুলেও ক্ষমা করবেন না।

এবার বাবা-মাকে বলছি, আপনার সন্তানের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন তো? কাজের দোহাই দিয়ে তাকে এড়িয়ে যাবেন না। এত কষ্ট করে যাকে এই পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন, এখন বড় করছেন, খাওয়াচ্ছেন, পড়াচ্ছেন; তাকে একটু নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার মতো সময় হবে না আপনার? যদি সে নষ্ট হয়ে যায় কিংবা কারো জীবন নষ্ট করে দেয়; সে দায়ভার আপনাকেও বহন করতে হবে। কারণ আপনিও সে দায়ে দায়ী।

খালা-ভাগ্নের গল্পটা জানেন তো? ভাগ্নে স্কুল থেকে এটা ওটা চুরি করে আনে কিন্তু খালা তা দেখেও দেখে না। এভাবে দিনের পর দিন ভাগ্নের চুরির পরিমাণ বাড়তে থাকে। অভিযোগের পরিমাণও বেড়ে চলেছে। কিন্তু খালা যেন বোবা-কালা। দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না। একসময় ভাগ্নে দুর্ধর্ষ ডাকাতে পরিণত হয়। আজ এর বাড়ি, কাল ওর বাড়িতে ডাকাতি করে বেড়ায়। খালা এখনও নিশ্চুপ; ঠিক যেভাবে পেন্সিল চুরির কথা শুনে চুপ করে থাকতো। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়লো খালার আদরে, আশ্রয়ে, প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠা একমাত্র ভাগ্নে।

পুলিশ যখন তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে খালার সামনে থেকে; তখন ডাকাতটি পুলিশকে অনুরোধ করলো খালার সাথে একটু কথা বলার সুযোগ দিতে। পুলিশ তার অনুরোধটি রাখতেই সে খালার কাছে গিয়ে কানে কানে কিছু বলার চেষ্টা করছিল। এরপর খালার আত্মচিৎকার। কারণ এইমাত্র ডাকাতটি তার খালার কান কামড়ে দিয়েছে। খালা যন্ত্রণায় ছঠপট করতে করতে ভাগ্নেকে বললো, ‘তুই এ কী করলি’! তখন ভাগ্নে বললো, ‘তুমি যদি সেই ছোটবেলায় পেন্সিল চুরির জন্য শাসন করতে; তাহলে আজ আমি এত বড় ডাকাত হতাম না। তোমাকে যখন সবাই অভিযোগ দিত; তখন এই কানে তুমি শুনেও শুনতে না। তোমার ঐ কান দিয়ে যদি সব শুনে আমাকে আদর না করে উল্টো শাসন করতে; তাহলে আজ আমাকে ডাকাত হতে হতো না’।

এখনও সময় আছে, আজই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আমরা সবাই এক হলে অপরাধী একা হয়ে যাবে। ভয়ে পালিয়ে যাবে অথবা ভুল সংশোধন করে সঠিক পথে ফিরে আসবে। আপনি কি তা চান না?

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G