এই হোক নববর্ষের দৃপ্ত শপথ

প্রকাশঃ এপ্রিল ১৪, ২০১৭ সময়ঃ ১২:২০ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:২২ পূর্বাহ্ণ

বোশেখ মানে বর্ষ বরণ
কৃষ্টি স্মরণ
রৌদ্র দহন স্বপ্ন বহন
স্বপ্ন আঁকা উৎসব মাখা
দ্যুতির বিচ্ছুরণ!

সত্যিই বাঙালি বড় আনন্দপ্রিয় জাতি। রক্ত টগবগ করে উঠে আনন্দের উপলক্ষ্য পেলে। এই বাঙালিই আবার অনেক ধর্মপ্রাণ। মুয়াজ্জিনের আজানের সুমধুর আহ্বান শুনে মসজিদে ছুটে যান। আবার এই একই বাঙালিই ঢোলের শব্দে ব্যাকুল হয়ে নেচে উঠে। এখানেই কি শেষ? যখন আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়ার পায়তাড়া চলছিল; ঠিক তখনই ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে রাস্তায় মিছিল করে প্রাণ দিয়েছিল ছাত্র-জনতা। এই সেই বাঙালি যারা গভীর রাতে আপনজনদের ঘুমন্ত অবস্থায় লাশ হতে দেখে পাল্টা লড়াইয়ের খুন চেপে বসেছিল। অবশেষে বিজয়ের নিশান উঠিয়ে এই বাংলাকে মুক্ত স্বাধীন করেছিল সেই বীর যোদ্ধারা।

আজ চলতে চলতে অনেক পথ অতিক্রম হয়ে গেছে। ২০১৭ সালে এসে ঠেকেছি আমরা। আমাদের বিজয়ের গল্পগাঁথার সময়কাল বড্ড বেশি সুদূরের; আজ থেকে অনেক অনেক বছর আগের ইতিহাস। আজ সবকিছুর পট পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ যুগের নবীন বাঙালির মননের চিত্রটা ব্রহ্মপুত্রের প্রতিটি ঢেউয়ের মতো প্রতিনিয়ত অচেনা মনে হয়। তাল হারিয়ে ফেলতে হচ্ছে যখন তখন। এ সাহসের ইতিহাস যাঁদের; তাহলে  নব প্রজন্ম কি রেখে যাওয়া অন্ধগলির মশালের দায়িত্ব হাতে নেবে না। শুধু রঙিন তামাশায় বুদ হয়ে থাকবে?

পহেলা বৈশাখের এ আনন্দের ভীড়ে চিৎকার করে জানতে চাই লক্ষ জনতার কাছে, তোমরা কি গত বছর পহেলা বৈশাখে ঘটে যাওয়া মনুষ্য দৈত্তের হাতে একঝাঁক নারীর লঞ্ছনার বিচার চাইবে না? তোমরা কি এতদিন ধরে চিৎকার করে যাওয়া তনুর হত্যাকারীদের খুঁজে বের করার শপথ নেবে না? জানি না এত আনন্দ কোলাহলে এসব কথা ভুলে গেছ কিনা?

আরেকটি কথা, আজ ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়েছে চারদিকে। অথচ সময়টা এখন ইলিশ না ধরার। অবশ্য কে শোনে কার কথা! তবে এরই মধ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইলিশ বর্জনের সচেতনতা দেখে আমরা সত্যিই বেশ সস্তি পেলাম। তাঁর ডাকে অনেকেই সাড়া দিয়েছে। প্রতিক্ষণের আজকের পহেলা বৈশাখ উদযাপনও  সেই সচেতনতাকে ঘিরে। সরপুটি-তেলাপিয়ার সাথে পান্তা-কাঁচামরিচের মিশ্রণে পহেলা বৈশাখ।

ব্যতিক্রমী এ আয়োজন প্রতিক্ষণ প্রতি বছর ধরে রাখার শপথ করছে। এখন থেকে ইলিশের বংশ নির্বংশ করার পূর্ণ বিরোধিতায় নামছে প্রতিক্ষণ। ইলিশ দিয়ে আর কোনো পহেলা বৈশাখের আনন্দভোজ হবে না। এ আমাদের দৃপ্ত শপথ। চলুন ইলিশ বাঁচাই, তাহলে দেশ বাঁচবে; আমরা বাঁচবো।
আজ প্রতিক্ষণ শপথ করছে, তনু হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার। পহেলা বৈশাখের আনন্দকে যারা মাটি করে দিয়েছিল; তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ চলবে। সর্বপরি, সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা করছি। এত মানুষ একসাথে পহেলা বৈশাখের আনন্দ উদযাপন করছে। সাথে ভুলে যাবেন না, নতুন বছরে নিজের সমস্ত ভুলকে সংশোধন করার প্রতিজ্ঞার কথাটি। তবেই সার্থক হবে আমাদের এই আনন্দযজ্ঞ। চলুন সবাই মিলে এক হয়। একতার শক্তির কাছে মনুষ্য শয়তান পরাজিত হবেই। আজ আমরা সেই শপথ করতে চাই। অন্যায়ের প্রতিবাদ চলবে প্রতিক্ষণ।

শারমিন আকতার

নির্বাহী সম্পাদক, প্রতিক্ষণ ডট কম

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G