নিজের রাগ সন্তানের উপর দেখাচ্ছেন নাতো?

প্রকাশঃ এপ্রিল ২৪, ২০১৭ সময়ঃ ৮:৫৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:০২ অপরাহ্ণ

শারমিন আকতার:

স্বামী মারা যাবার বেশ কিছুদিন পর দ্বিতীয় বিয়ে করলেন রেশমী। আগের ঘরের সন্তান রৌশনকে মায়ের কাছে রেখে এসেছেন। এভাবে ভালোই চলছিল বেশ কিছুদিন। তারপর হঠাৎ একদিন স্বামীর সাথে চিৎকার চেঁচামেচি। আশপাশের মানুষ জড়ো হওয়ার অবস্থা প্রায়। রেশমী জানতে পারলো তার স্বামীর আরেক সম্পর্কের কথা। এ নিয়ে প্রতিদিন সংসারে প্রচন্ড অশান্তি। ঠিক এ ধরণের এক পরিস্থিতিতে হঠাৎ খবর এল রেশমীর মা মারা গেছে। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। তখন তার দুচোখজুড়ে শুধু দু:স্বপ্নের কালোছায়া। অগত্যা ছেলে রৌশনকে সৎ বাবার সংসারে আনতে হল। ছোট্ট ঘরে এ তিনজন মানুষের থাকাটা যত কষ্টের; তার চেয়ে বেশি কষ্ট অপরিচিত লোককে বাবা বলে ডাকা।

রৌশন বেশ সহজ-সরল। সারাক্ষণ শুধু দুষ্টুমিতে ব্যস্ত। জীবনের এই জটিলতা তার মাথায় এখনও কাজ করে না। মায়ের কষ্ট বোঝার চেয়ে খেলায় তার ব্যস্ততা বেশি। পড়ছেন অষ্টম শ্রেণিতে। তার এ অবুঝ মানসিকতা মায়ের দু:চিন্তাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। একদিকে স্বামীর সাথে অশান্তি, অন্যদিকে সন্তানের কিছুই বুঝতে না চাওয়া; এ দুই বিষয়ে হাঁপিয়ে উঠেছেন রেশমী। ইদানিং নিজের উপর প্রচন্ড বিরক্ত তিনি। তাই সব রাগ গিয়ে পড়ছে রৌশনের উপর। কদিন আগে প্রচন্ড রেগে গিয়ে সন্তানের গলা চেপে ধরেছিল। আর ইচ্ছেমতো চিৎকার করেছে রৌশনের সাথে। মা-ছেলের মধ্যে এখন প্রায় এ সমস্যা চলছে। একদিন রাত সাড়ে এগারোটায় ঘরে ফিরেছে রেশমী ও তার স্বামী। রৌশন দরজা খুলেই চিৎকার করে বলে উঠে, ‘এত রাতে ঘরে আসো কেন তোমরা? আমার ভয় লাগে একা একা। দেরি হলে আর আসার দরকার নাই’; বলেই দৌঁড়ে ঘরের ভেতরে চলে যায় রৌশন।

নিজের রাগ কেন তিনি সন্তানের উপর দেখাচ্ছেন? একটা সময় রৌশন হাঁপিয়ে উঠবে। তারপর একদিন বলে বসবে, ‘তোমাকে আমার অসহ্য লাগে মা’! সেটা কি রেশমীর জন্য ভালো হবে? মায়ের সাথে যে ছেলে এখনও সবকিছু শেয়ার করছে সে আস্তে আস্তে বন্ধুদের দিকে ঝুঁকে পড়বে। যেখানে বয়:সন্ধিকালীন দ্বিধাদ্বন্দ্বময় সময়টিতে তার সমবয়সী বন্ধুরাও একই সমস্যায় ভুগছে; সেখানে ভালো পরামর্শের চেয়ে টিনেজ বন্ধুদের কাছে কৌতূহলী হয়ে উঠার পরামর্শটাই বেশি থাকবে। এটাই স্বাভাবিক, তাই নয় কি?  তার চেয়ে রৌশনের এই সরলতা আর মায়ের সাথে আহ্লাদীপনাই কি ভালো নয়?

আমরা প্রায় সময় নিজেদের ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধান করতে না পারলে প্রচন্ড রেগে যায়। আর সে রাগ সচরাচর বাড়ির দুর্বল সদস্যের উপর গিয়েই পড়ে। কারণ তার প্রতিবাদ করার ক্ষমতা বা সাহস কোনোটাই তখনও তৈরি হয়নি। এ ধরণের মানসিকতা যার বা যাদের মধ্যে রয়েছে, এখনই পরিত্যাগ করুন। এতে আপনার ইমেজ যেমন নষ্ট হচ্ছে সেই ছোট্ট বাচ্চাটির কাছে; তেমনি শিশুটিও ধীরে ধীরে খিটখিটে স্বভাবের হয়ে উঠবে। আবার অনেকে এখান থেকেই নেতিবাচক ধ্যানধারণা নিয়ে বড় হতে শুরু করবে। যার পরিণাম ভয়ঙ্কর। যেকোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলা অসম্ভব কিংবা অবাস্তব নয়; কথাটি মনে রাখবেন। তাই দুর্ঘটনা ঘটার আগেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। জানেনতো, বিন্দু থেকেই ধীরে ধীরে বিশাল মহাসাগরের জন্ম হয়।  

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G