জয় হোক সংসারের; ক্ষয় হোক আদিখ্যেতার
শারমিন আকতার:
মিথিলা-তাহসানকে দেখলে অনেকে বলে উঠতো, ‘কে বলেছে একসাথে সুখের ঘর করা যায় না’? অন্য অনেক তারকাদের যেখানে বিচ্ছেদ আর বিয়ের মধ্যে সামান্য ব্যবধান থাকে; সেখানে তাহসান-মিথিলা জুটির ক্ষেত্রে এ সবকিছুই ছিল ব্যতিক্রম। ধরেই নেওয়া হয়েছিল এ জুটি অনন্তকালের বন্ধনে আবদ্ধ। চাইলেই যা ভাঙা যায় না। এমন উছলে পড়া সুখের সংসারকে আরও আনন্দবন্যায় ভাসিয়ে দিল তাহসান-মিথিলার ঘরে জন্ম নেওয়া এক রাজকুমারী। মনে হল মেয়েটি বড় সৌভাগ্যবান। অন্য তারকা বাবা-মায়ের হরহামেশা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে না তার বাবা-মায়ের সংসার! কিন্তু সে গুঁড়ে বালি! একটু দেরিতে হলেও মিথিলা-তাহসান প্রমাণ করলো; তারকাদের ঘর আর তাসের ঘর যেন এক সুতোই বাঁধা। যা গড়া হয় ভাঙার জন্য!
এদিকে এ জুটির বিচ্ছেদে তাদের ভক্তকূলের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে দারুণ ক্ষোভ। ফেসবুকে এ নিয়ে চলছে দ্বিমুখী তর্ক-বিতর্ক। সমস্ত ক্ষোভ-অভিমান-ভালবাসার ব্যঞ্জনায় ভরে উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কারো কাছে কাম্য ছিল না এ জুটির ভাঙন। অধিকাংশের দৃষ্টিতে, তাহসান-মিথিলার সংসার কোনো খেলাঘর নয় যে একটু ঝাঁকুনি দিলেই নড়বড়ে হয়ে উঠবে। আবার কেউ বলছেন, শেষ পর্যন্ত তাহসান-মিথিলাও প্রমাণ করলো তারা শুধুই তারকা; যা দূর আকাশে জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠতে দেখা যায়। কাছে এলেই সব মিথ্যা, দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।
একজন সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে যদি এ বিচ্ছেদের কারণ খুঁজতে যাওয়া হয়; তাহলে ড্রইংরুমে সাজিয়ে রাখা একগাদা অপ্রয়োজনীয় শোপিসের মতো বিলাসী মনের খেয়াল ছাড়া এটিকে আর কিছু মনে হবে না। যদি তাহসান-মিথিলার একমাত্র সন্তান আইরার চোখ দিয়ে দেখতে যাই তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদটিকে; তাহলে অনেকটা চোখ বুজেই পড়ে ফেলা যায় তার মনের কথা। এখানে মেইন্ড রিডারের কোনো প্রয়োজন নেই। কোনো সন্তানই চান না এমন জটিল অংকের হিসেবের খাতায় তার নামটা যোগ হোক। তা সে যত বড় তারকার সন্তানই হোক না কেন। এক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাভোগী কিংবা বঞ্চিত সব সন্তানদের মনোজগতকে নির্দ্বিধায় সাধারণীকরণ করা যায়।
ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা, স্বেচ্ছাচারী মনোভাব, ভয়ঙ্কর আত্মবিশ্বাস – ধ্বংসাত্মক এই মানসিকতারগুলোর কাছে জীবনের সুখ-দু:খ, ভুল-ভ্রান্তি মহা অপরাধ হিসেবে আসামীর কাঠগড়ায় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়। সন্তানের নিষ্পাপ অসহায় মুখও ম্লান হয়ে যায় এই ক্রোধের কাছে। তাই তারকাবহুল জীবনে সন্তান কোনো সেতুবন্ধন নয়; উচ্ছিষ্টমাত্র। একজন তারকার বোধশক্তি যত তাড়াতাড়ি জাগ্রত হবে; এ নিষ্ঠুর আদিখ্যেতার আক্রোশ থেকে আগত-অনাগত সন্তানেরা দ্রুত মুক্তি পাবে।