প্রায় বাবরি চুল। মাথাভর্তি চুলের মধ্যভাগে সিঁথি করা। চুলের পেছনটায় খানিক বাঁক নেয়া থাকত। পরনের শার্টের কলার থাকত বেশ বড়। চওড়া বুকে শার্টের ওপর ভাগের বোতাম খোলা থাকত। এটিই তার ঢং, এটিই তার স্বকীয়তা। আর এই স্বকীয়তাই তাকে অভিনয় জগতে রাজমুকুট পরিয়ে দেয়।
রাজ্জাক। নায়ক রাজ্জাক। নায়করাজ রাজ্জাক। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তিনি যে কোনো না কোনো রাজ্যের রাজা ছিলেন তা সহসাই বলা যায়। নইলে এত ভক্তি, এত ভালোবাসা মেলে কী করে!
সিনেমাপ্রেমী মানুষের হৃদমাজারে যে আসন দখল করে নিয়েছেন এই মহান অভিনেতা, সেই আসন যে আর কোনো রাজার দখল করার হিম্মত নেই, তা হলফ করেই বলা যায়।
সংস্কৃতির যে জমিনে বিচরণ করতেন নায়ক রাজ্জাক, সেই জমিনেই সোনা ফলত। নায়ক রাজ্জাক মানেই ভক্তকুলের মনের দরজায় কড়া নাড়া। রাজ্জাক মানেই প্রেমাসনে নিজেকে প্রেমিক ভাবা। ঠিক দুঃখগাথা কাহিনিতেও দর্শকের অশ্রু ঝরা।
হাসি, কান্না, প্রেম, কঠোরতা কী ছিল না তার অভিনয় চরিত্রে? যেখানে প্রেম, সেখানে তিনি শুদ্ধ প্রেমিক। যেখানে বিচ্ছেদ, সেখানে তিনি সর্বহারা। আহা! নায়ক রাজ্জাকের অভিনয় মানেই ওই চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরা।
শৈশবে ফুটবল মাঠ কাঁপাতেন। অভিনয়ের প্রেমে খেলার মাঠ ছেড়েছিলেন যৌবনের শুরুতেই। খেলার মাঠ থেকে এসে অভিনয়ের মঞ্চ কাঁপিয়েছেন জীবনের পড়ন্ত বেলায়ও।
রাজ্জাকের অভিনয়ের শুরুতেই নজর কাড়েন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হানের। জহির রায়হান রচিত হাজার বছর ধরে গল্প অবলম্বনে ‘বেহুলা’ ছবিতে নায়ক হওয়ার সুযোগ পান। ছবিতে বেহুলা চরিত্রে অভিনয় করেন সুচন্দা। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি রাজ্জাককে।
রাজ্জাক সুচন্দার পর কবরী, ববিতা, শাবানাসহ তখনকার প্রায় সব অভিনেত্রীকে অভিনয় মঞ্চে ঝড় তোলেন। তবে এর মধ্যে রাজ্জাক-কবরী হচ্ছে স্মরণকালের জুটি।
এই মহানায়কের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- ‘আনোয়ারা’, ‘সুয়োরাণী-দুয়োরাণী’, ‘দুই ভাই’, ‘মনের মতো বউ’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘ময়নামতি’, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘বেঈমান’।
স্বাধীনতার পর ‘রংবাজ’ দিয়ে অন্য এক পরিচয় মেলে ধরেন রাজ্জাক।
‘আলোর মিছিল’, ‘পিচ ঢালা পথ’, ‘স্বরলিপি’, ‘কি যে করি’, ‘টাকা আনা পাই’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘বাঁদী থেকে বেগম’, ‘আনার কলি’, ‘বাজিমাত’, ‘লাইলি মজনু’, ‘নাতবউ’, ‘মধুমিলন’, ‘অবুঝ মন’, ‘সাধু শয়তান’, ‘মাটির ঘর’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘কালো গোলাপ’, ‘নাজমা’সহ অসংখ্য ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রের নায়ক রাজ্জাক।
‘বদনাম’, ‘সৎ ভাই’, ‘চাপা ডাঙ্গার বউ’সহ ১৬টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন রাজ্জাক। অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারসহ অনেক সম্মাননা। ২০১৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন।