মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধের দাবি কি যৌক্তিক ?
রাকিব হাসান:
ভেবেছিলাম বিষয়টি নিয়ে লিখবো না। কিন্তু বাড়াবাড়ির সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় চুপ থাকতে পারলাম না। আমাদের মনে রাখা উচিত নুসরাতকে মধ্যযুগীয় কায়দায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যার বিষয়ে সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদমুখর হলেও কথিত সুশীল আর নারীবাদীরা গর্তের ভেতরে লুকিয়েছিলো ! কারণ নুসরাত স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলো না, সে ছিলো মাদ্রাসার ছাত্রী। নুসরাতের অপরাধ সে ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন পরিবারের মেয়ে, সে হিজাব পড়তো। সেকারণে তার মৃত্যুতে শাহাবাগে জড়ো হয়ে কথিত প্রগতিবাদী নারীরা মশাল মিছিল করার প্রয়োজনবোধ করেনি !
নিজেদের আধুনিক বিজ্ঞানমনষ্ক দাবি করে ধর্মনিরপেক্ষতা আর অসাম্প্রদায়িকতার বুলি আওড়িয়ে তারা টকশোতে গিয়ে গলাবাজি করে। অথচ তারাই আবার তাদের মতাদর্শের বিরুদ্ধবাদীদের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ করে। এই হচ্ছে তাদের অসম্প্রদায়িক- প্রগতিবাদী নমুনা !!
কয়েকদিন এসব নামধারী প্রগতিবাদীরা চুপচাপ থাকলেও আজ হঠাৎ বেশ সরব হয়েছে। তাও আবার তসলিমার ডাকে। তবে এই হম্বিতম্বি নুসরাত হত্যার বিচারের দাবিতে নয়; মাদ্রাসা শিক্ষা তুলে দেয়ার দাবিতে। একজন নারী লিখেছে ‘ছহি উপায়ে ধর্ষণ শেখানোর নামই মাদ্রাসা’। তার জ্ঞানের বহর দেখে অবাক হই !! তিনি যদি মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন কিংবা শিক্ষকদের মান বাড়ানোর বিষয়ে লিখতেন, অথবা অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানাতেন তা যুতসই হতো। কিন্তু তিনি অভিযোগ করেছেন মাদ্রাসায় নাকি ছহি উপায়ে ধর্ষণ শেখানো হয়। এই গুরুতর অভিযোগ খতিয়ে দেখার জোর দাবি জানাচ্ছি। যদি এর সত্যতা না পাওয়া যায় তাহলে এই ধরনের ভন্ড নারীবাদীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত বলে মনে করি।
আমরা জানি ভাল মানুষের পাশাপাশি খারাপ মানুষও সব জায়গায় আছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বচক্ষে বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন লম্পট শিক্ষকের স্বরুপ দেখেছি, আর মাদ্রাসায়ও এরকম বিকৃত শিক্ষক আছে বলে জেনেছি। একজন ধর্ষক- লম্পট সে যেই হোক না কেন তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু তার অপরাধের দায় অন্যান্য শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠান কেন নেবে? দুয়েকজনের জন্য ঢালাওভাবে সব মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়ার যে অযৌক্তিক দাবি করা হচ্ছে এটা নি:সন্দেহে উদ্দেশ্যমূলক এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে ইসলামী শিক্ষা বন্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র আর সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে শান্তি বিঘ্নিত করার একটি নীলনকশা ছাড়া আর কিছুই নয়। এর আগে বিভিন্নসময়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষকের নারী কেলেংকারী বা যৌন হযরানির দায়ে যেহেতু সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ার এরকম হঠকারী দাবি তারা তুলেননি, তাহলে এখন কেন তুলছেন? এই দুরভিসন্ধি বুঝা দরকার। এছাড়া স্কুল শিক্ষক নামধারী কুখ্যাত পরিমলের ছাত্রী ধর্ষণ এবং সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া নিয়েও সব স্কুল বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে কী তারা কোনো কথা বলেছেন? যদি না বলে থাকেন তাহলে মাদ্রাসার বেলায় কেন বলছেন? মাদ্রাসা ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি করে, আস্তিকতার চর্চা করে এটাই কী অপরাধ? এরা আপনাদের ন্যায় কথিত সভ্যদের লিভ টুগেদার সংস্কৃতি কিংবা সমকামিতার মতো জঘন্য কাজগুলো থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখেন তাই কী এদের বন্ধ করে দিতে হবে ??
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার ছিলো, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমরা কেউ কিছুই শিখতে পারিনি।
==========