খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা !

প্রকাশঃ অক্টোবর ১৫, ২০২০ সময়ঃ ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ

মিজান বিন মজিদ

বহুল উচ্চারিত ডায়লগ হলো, “বুদ্ধিমানরা পৃথিবীর গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে।বুদ্ধিহীন যারা, তারা পৃথিবীকে তাদের সঙ্গে তাল মিলাইতে বলে। লোকে পাগল কয়, বোকা ভাবে। কিন্তু সত্য হলো দিনশেষ এই বুদ্ধিহীনরাই জেতেন!” যে যেটা নিয়ে আছে বাঁচে তাতে তার চরম অতুষ্টি।ব্যবসায়ী বিরক্ত সাপ্লাইয়ে অর্ডারে।রাজনীতিজ্ঞ বিরক্ত ক্ষমতায়-অক্ষমতায়। ক্ষমতাবান যারা রিকোয়েস্ট আর লবিং এর ফোনে বিরক্ত! ক্ষমতাহীন যারা,তারা পরামর্শ আর লেটেস্ট নিউজের জন্যে হন্যে হয়ে উপরের ভাইরে ফোন দেন…। বলেন, কী খবর?চান উইলবো নি….।মাস্টার বিরক্ত খাতা চেক করতে করতে! ডাক্তার বেজার রাত বিরাতের ‘কলে’। ইঞ্জিনিয়ার অখুশি বাঁশ দেয়ার টিপ্পনী খেয়ে…।আরে ভাই সব ইঞ্জিনিয়ার কী বাঁশবাজ!

ছাত্র বইয়ের চাপে পরীক্ষার তাপে গোল্ডের আশে বেকারার! বাপের চাপ,মায়ের আবদার,ভাইয়ের বকা,বোনের আর্তনাদ হরদম চলছে। তুই আমাদের আশার বাত্তি।বংশের গৌরব আর জাতির ভবিষ্যৎ। তোর শিরে তারকা আছে,তুই জানিস না! পড়ালেখা,লেখাপড়ার মূল যে উদ্দেশ উদ্দেশ্য বিধেয় আধেয় সেই ‘আনন্দ অন্বেষণ ‘ এই বদ্বীপে গরহাজির। আনন্দ কারো নাম হতে পারে, শিক্ষার লক্ষ্য এই কথা দুঃখ করে কেউ বলছে না। বলবে না। শিক্ষা এখন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার পেয়াদা,বিশ্বব্যাংক এর আরদালি, বিশ্বসংস্থার ভার্যা।

পঠন পাঠন আদিম জিনিশ! পটানো ঘটানো হচ্ছে হালকালের প্যাশন। ফ্যাশনকে ধরেছি স্টাইল আর স্টাইলকে বানিয়েছি কৃত্রিমতা। ইছামাছের মত চলছি উল্টো পথে…। কত্ত আগে কবি ডেকেছেন, “এবার ফিরাও মোরে…দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর।” পথভুলে নয়,ভুলপথেই নির্বাণ জেনেছে বাঙালি। কালেজে কালেজে ই-লার্নিং সেন্টার সৃজিত হয়েছে। তরুণ যুবা যাদুর বাক্স ল্যাপটপ নিয়ে উউন্মাতাল। অন্য কোথা অন্য কোনখানে নয়,একখানা স্মার্টফোনেই খুঁজি ‘আজব স্মার্টনেস’!

ই-টাই খাইলো সব! আগে ই ছিল আদিতে। এখন অন্তে।
আগে : তোকে পড়তেই হবে। করতেই হবে
এখন : ই-লার্নিং,ই-কমার্স,ই-ফারমার্স!!

আগেরটা ছিলো প্রত্যয়, নিষ্কাম…। এক্ষণকার ই-তে অজস্র কাম…কাজই কম! মানুষের সহজাত নিষিদ্ধ জগতের চাহিদা জাস্ট ‘ আ ক্লিক এওয়ে…। হাজার মানুষের সামনে সিদ্ধ আর নিষিদ্ধ পথ রেখে চোখের আড়াল যান…মুহূর্তেই সবচে দারবিশদর্শন বালককেও হাতেনাতে পাবেন ‘নীলসাগরে’ হাবুডুবু-উবুরে!! অস্বীকার করবেন? নেট,ইন্টারনেট? কম্পিউটার? সামাজিক সাইট? পারবেন না।বলছিও না। পুরনো ধারণা বদলান।তারুণ্য কী চায় কেন চায় কতটা চায়;পরখ করুন।একাত্ম হোন। নিজেকে ওর বয়সে নিয়ে যান। এক্কেবারে ঝেড়ে ফেলুন আগের বোধবুদ্ধি! ইয়েস! ব্রেইন ভ্যাকুয়াম না হলে আমার বক্তব্য বুঝবেন না…। আমার ছবিটি ‘দীর্ঘ চল্লিশ বচ্ছরকার লালিত ‘ এনালগ লাইফের সমাপ্তির ইঙ্গিতবহ…।

কান বদ্ধ করলেই Gun বন্ধ হবে না! সেইটা বুঝানোর জন্যি হলেও কানে ওটা লাগান! গোয়েন্দাগিরি করুন! এইযুগ গোয়েন্দাগিরির…।ছেলেকে মেয়েকে খাপখোলা পাবেন না। তাদের পালস নিত্য বাঁকবদলে সিদ্ধহস্ত। এই প্রজন্ম আর আপনার জন্ম সম্পূর্ণ দুইকালের আবহাওয়াগত। তাই চর্মচক্ষু নয়,মর্মচক্ষুর জ্যোতি বাড়ান। দিনশেষ আপনার শেষ প্রত্যয়ের জয় হবে,একীভূত হলে…।ধুচ্ছাই বলে ট্রেন্ড মিস করবেন না।

 

মিজান বিন মজিদ

লেখক: শিক্ষক

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G