রোজাদার ফিলিস্তিনি পরিবারকে দেখে ইসলাম গ্রহণ করি
লরেন বুথ। পেশায় একজন মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক। তার আরেকটি পরিচয় তিনি ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের শ্যালিকা। তিনি ছিলেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী। ফিলিস্তিনিদের অধিকার বিষয়ে বুথের দৃঢ় অবস্থানের কারণে ২০০৮ সালে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি ইসমাইল হানিয়া তাঁকে ফিলিস্তিনের নাগরিকত্ব প্রদান করেন।এরপর ২০১০ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করলে খবরটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়।
নিজের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে লরেন বুথ বলেন, এক ফিলিস্তিনি পরিবার তাঁকে ইফতারের দাওয়াত দেয়। পরিবারটি খুবই দরিদ্র ও অসহায়। এমনকি তাদের কাছে ঐ দিনের খাবারও ছিল না। কিন্তু ঐ ঘরের নারীর অন্তরজুড়ে ছিল উচ্ছ্বাস, ভালবাসা। ফিলিস্তিনি নারী আমাকে তাঁর ঘরে এমনভাবে সংবর্ধনা জানান যেন তিনি গাজা উপত্যাকার কোনো গলিতে নয়, বরং আমাকে তিনি তাজমহলে প্রবেশের সংবর্ধনা দিচ্ছেন। অত্যন্ত হাস্যোজ্জ্বল মুখে তিনি আমাকে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম।’
আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি, রাফা এলাকায় সামান্য খাবারে কেমন রমজান কাটাচ্ছেন? তিনি হাসিমুখে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলেন। আমি তাঁবুর ভেতর বসে খাওয়া শুরু করি। ঘরে থাকা সামান্য রুটি ও হুমমাস খাওয়া শুরু করি। মনে মনে আমার খুবই রাগ হয়। এ কেমন সৃষ্টিকর্তা, যিনি ক্ষুধার্তদের আরো ক্ষুধার্ত হতে বলেন। পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যও রোজার বিধান করেছেন! তখন গ্রীষ্মকাল ছিল। প্রচণ্ড গরম পড়ছিল। আমি বললাম, আপনাকে সর্বোচ্চ সম্মান জানিয়ে আমি জিজ্ঞেস করব, তোমার সৃষ্টিকর্তা রোজার নির্দেশ কেন দিয়েছেন? তুমি কেন রমজানে রোজা রাখো?
আমার কথা শুনে ঐ নারী কিছুক্ষণ নীরব থাকেন। এরপর দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, বোন, আমরা দরিদ্রদের কথা স্মরণ করতে রমজানের রোজা রাখি। তাঁর কথা আমার অন্তরের গভীরে টোকা দেয়। সবাই স্তব্ধ হয়ে যায় এবং চোখ অশ্রুসজল হয়। আমি ভাবতে থাকি যে ইসলাম অনেকের ভাবনাকে অনেক বড় করে তোলে। পরের বছর আমি সাংবাদিক হিসেবে ইরানে যাই। সেখানকার বিবি ফাতেমা মসজিদ নামের একটি মসজিদ পরিদর্শন করি। আগে থেকেই অজু করতে জানতাম। অজু করে একটি চাদর গায়ে দিই এবং মহান ‘আল্লাহ’র নাম উচ্চারণ করি। আল্লাহর প্রার্থনা করি। আল্লাহ আমাকে নতুন কিছু দেবে না। আমার সব কিছু আছে। এই ভ্রমণের সুযোগ দেওয়ায় তোমাকে ধন্যবাদ। তবে তুমি ফিলিস্তিনের মানুষের কথা ভুলো না। ঐ রাত আমি অনেকের সঙ্গে মসজিদে কাটিয়ে দিই। ফজর নামাজ পড়ে বের হয়ে নতুন সূর্য অবলোকন করি। তখন আমার মাথায় কেবল ইসলামের কথা ঘুরপাক খাচ্ছিল।
লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করি। আমার মনে হচ্ছিল, বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে। লন্ডনে পৌঁছার সাত দিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে আমি কলেমা শাহাদাত পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করি। ঐ সময় আমার আট বছর ও ১০ বছরের দুই মেয়ে ছিল। মুসলিম হওয়ার পর তারা আমাকে তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, মুসলিম হওয়ার পরও তুমি কি মা হিসেবে থাকবেন? আমি বললাম, আমি আগের চেয়ে আরো উত্তম মা হব। তারা আনন্দিত হয়েিআবার জিজ্ঞেস করল, মা, তুমি কি মদ পান করবে? আমি বললাম, মুসলিম হয়ে কখনো আমি মদ পান করবো না। তাঁরা আনন্দিত হয়ে আবারও প্রশ্ন করল, মুসলিম হয়ে তোমার মুসলিম মহিলাদের মতো নিজেকে চাদর দিয়ে ঢেকে রাখবে? আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা এমন প্রশ্ন করলে কেন? তারা বলল, আপনার বক্ষ উন্মুক্ত রেখে আপনি যখন স্কুলে আসতেন, তখন আমরা খুবই লজ্জা বোধ করতাম। আমরা তা অপছন্দ করি এবং চাই আপনি আর এমন করবেন না। আমি বললাম, মুসলিম হওয়ার পর আমি পুরো দেহ ঢেকে রাখব। এ কথা শুনে তারা বলল, আমরাও ইসলাম ভালোবাসি।
সূত্র : আইসিএনএও