নেওলাইফ এমডি নূরুল আমিনের প্রতারণার অভিনব ফাঁদ
রাকিব হাসান:
বহুদিন ধরে গ্রাহকদের সাথে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার নামে অভিনব পদ্ধতিতে প্রতারণা করে যাচ্ছেন নেওলাইফ গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেড এর এমডি নুরুল আমিন। কোম্পানীর ভুক্তভোগী গ্রাহকরা তার বিরূদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ করেন।
তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিক্ষণের প্রতিবেদক রাকিব হাসান সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতা দেখতে পান।
নেওলাইফের ক্ষুদ্ধ এক ভুক্তভোগী নারী গ্রাহকের নাম উর্মি। তার কাছেই রয়েছে অজস্র অভিযোগ। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘ডাইমন্ডের কথা বলে ইনভেন্ট করাইছে। মাসে লাখ লাখ টাকা আসবে। পরে দেখা যায় কিছুই আসে না।পণ্য না দিয়ে শুধু ইনভেস্টের কথা বলে। এটা আসলে একটা ইনভেস্টেমেন্ট কোম্পানি। গাড়ি দেবে বলে প্রতিশ্রতি দেয় সেটাও দেয় না। এক গাড়ির চাবি ৩৭ জনকে দিয়ে ছবি তোলায় কিন্তু কাউকেই গাড়ির মালিকানা দেয় না। সে একটা ভন্ড-প্রতারক ’।
গাজিপুরের আরেকজন ভুক্তভোগী গ্রাহক বিজয় উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘তার মটিভেশনের কারণে গাজিপুরের বহু লোককে বিনিয়োগ করিয়েছিলাম। নূরুল আমিন বলেছিল, ডাইমন্ড সেটআপ দিলে লাখ লাখ টাকা পাবো। এখন আমিতো টাকা পাই না, আমার লোকজনও কোনো টাকা পাচ্ছে না। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কমিশনের টাকা দিতে না পারায় লোকজন ক্ষেপে আছে। এখন গাজিপুরে যেতে পারি না’।
রাজশাহির আরেক ভুক্তভোগী গ্রাহক আতিক বলেন, ‘ এমএলএম এর নাম ভাঙায়ে পণ্যের অন্তরালে এটা একটা মানিগেম কোম্পানি। সার্বার আপডেটের কথা বলে প্রোডাক্টও দেয় না, কমিশনও দেয় না। এমডি সাহেব কমিটমেন্ট না রাখলে আমি আর আমার লোকগুলো খুব বিপদে পড়ে যাবো। ভাই আপনারাই পারেন আমাদেরকে সাহায্য করতে। এই প্রতারকের হাত থেকে আমাদেরকে বাচাঁন’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেওলাইফের ভুক্তভোগী গ্রাহক মশিউর(ছন্মনাম) বলেন, ‘এই নূরুল আমিন একটা আস্ত ভন্ড লোক। আমি লাখ লাখ টাকা খাটাইছি। আর এখন লাভের বেলায় কিছুই জুটে নাই’।
নেওলাইফের ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে এমডি নূরুল আমিনের কাছে জানতে চায়লে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। কেউ প্রমাণ করে দেখাতে পারলে তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে। এত বড় কোম্পানির দু চারটা অভিযোগ থাকতেই পারে। তবে বেশিরভাগ অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে আপনি একুশে টিভির একুশের চোখ এবং বিজয় টিভির ক্রাইম সার্চ প্রোগ্রামে এমএলএম নিয়ে অনেক রিপোর্ট করেছেন। এ কারণে আমাদের পরিচিত কোম্পানির মালিকরা খুব সমস্যায় পড়ে গেছে। এমনকি কিছু কিছু কোম্পানিতো আপনার রিপোর্টের কারণে বন্ধই হয়ে গেল’।
এক পর্যায়ে প্রতিক্ষণের এই প্রতিবেদককে হুমকি দিয়ে নেওলাইফ এমডি বলেন, ‘প্রোগ্রামে গেস্ট হিসেবে দাওয়াত দিলাম আর দিন শেষে আপনিই কিনা আমাদের বুকে ছুঁড়ি মারলেন? শুনেন, আপনার কারণে যদি ঝামেলাই পড়ি; তাহলে আপনিও চুরাবালিতে হারিয়ে যাবেন। ফিল্ডের লোকের কথা শুনে আমাকেই অবিশ্বাস করেন? বিপদে পড়লে এই লোকগুলো আপনার পাশে থাকে কিনা সময়ই বলে দেবে। সময় থাকতে আমাদের পাশে থাকেন লাভবান হবেন’।
নেওলাইফের হেড অব মার্কেটিং মঞ্জুরুল ইসলাম রাসেল বলেন ‘আমরা ১০০% পণ্যভিত্তিক কোম্পানি। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না’।
প্রতিক্ষণের অনুসন্ধানে উঠে আসে আরও নতুন নতুন চমকপ্রদ তথ্য। সেরকম একজন হলেন শাখাউয়াত উল্লাহ শান্ত। যিনি বিভিন্ন মানিগেইম কোম্পানিকে ট্রেইনিং এবং লজিস্টিক সহযোগিতা দেন।মূলত তিনি ইভেন্ট মেনেজমেন্ট কোম্পানি ‘বাইস্কোপ ইভেন্ট এন্ড টুরিজম লিমিটেড’ এর কর্ণধার । তার কাছে এসব কোম্পানির প্রতারণার সহযোগী হিসেবে কেন কাজ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ নূরুল আমিন আমার খুব কাছের মানুষ। আমি তাকে খুব ভালো করে চিনি। তার বিরূদ্ধে সাংবাদিকতা ফলাতে যাবেন না। যদি তার বিরূদ্ধে কোনো রিপোর্ট করেন তাহলে আপনাকে এর চরম মূল্য দিতে হবে’।
অন্যদিকে, নেওলাইফের ডিরেক্টর এ্যাডমিন শহিদ আজমাইন বলেন, ‘আমি জয়েন করার আগে বেশকিছু প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। এগুলো কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, নেওলাইফের এমডি নূরুল আমিনের ডিরেক্টর এ্যাডমিন শহিদ আজমাইন প্রতিক্ষণকে বেশকিছু চমকপ্রদ তথ্য দেন অডিওতে । যা প্রতিক্ষণের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
এদিকে, নেওলাইফের এমডি নূরুল আমিনের বিরূদ্ধে সার্ভার আপডেট প্রতারণা, গাড়ি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, গ্যাম্বেলিং কোম্পানীর মতো ডলার কেনা-বেচা করতে বাধ্য করা, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ভ্যাট-ট্যাক্স জমা না দেওয়া এবং পণ্য বিক্রি ছাড়াই ম্যানুয়ালি ডায়মন্ড বানিয়ে দেয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে ডিসেব (ডিরেক্ট সেলিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) অথরিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তারা জানায়,‘ নূরুল আমিনের বিরূদ্ধে প্রতারণার অনেক অভিযোগ পেয়েছি। ভুক্তভোগীদের বলেছি লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে আমরা তার বিরূদ্ধে সাংগঠনিভাবে ব্যবস্থা নিব এবং আইগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকেও এ বিষয়ে অবহিত করবো’।