ক্রীড়া প্রতিবেদক
‘আল্লাহই জিতাইছে। এমন একটা ম্যাচ জেতা দরকার ছিল। বারবার এমন হারছিলাম। কাছে গিয়ে অনেক ম্যাচ হেরেছে। আজ জিতেছি, ভালো লাগছে’ – কথা গুলো বলেছেন আজ মিরপুরে একক যুদ্ধে দেশকে জেতানো নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।
আজ মিরপুরের উইকেটে ১৮৭ রানের টার্গেটে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে জেতা ম্যাচ হারের পথেই ছিল ১৩৬/৯, এ অবস্থা থেকে মিরাজ একক ভাবে সাথে মুস্তাফিককে নিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লেন। ম্যাচ সেরাও হলেন মিরাজ।
একই এলাকার দুই ক্রিকেটার, প্রসঙ্গটা টানতেই মিরাজ আজ মিরপুরে ম্যাচ সেরা হবার পর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এলাকা বলতে আমরা তো সবাই একই জায়গারই বাংলাদেশের মানুষ। মোস্তাফিজ আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড। সবচেয়ে বড় কথা মোস্তাফিজ খুব ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। একটা জিনিস আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে, ও খুব আত্মবিশ্বাসী ছিল। একটা কথা আমাকে বারবার বলছিল, আমাকে নিয়ে টেনশন করার কিছু নেই। আমি ঠেকিয়ে দিচ্ছি। আমি আউট হবো না, গায়ে বল লাগলেও সমস্যা নাই। ওর এই বিশ্বাস দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমারও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে ওর আত্মবিশ্বাস দেখে।
সাকিব ভাই তো সবসময় পারফর্ম করছে। খুব ভালো বোলিং করেছে, খুব ভালো জায়গায় করছে। এমন উইকেটে লাইন লেংথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাকিব ভাইও করেছে, আমিও করেছি। খেলা শুরু থেকে আমাদের হাতেই ছিল, রানের চাপ তেমন ছিল না। পরপর উইকেট যাওয়ার কারণে হয়তো সমস্যা হয়েছে।’
৯ উইকেট হারানো পরও কি আপনি জয়ের কথা ভাবতে পেরেছেন? জবাবে মিরাজ বলেন, ‘উত্তর হচ্ছে, আমার বিশ্বাস ছিল সত্যি কথা বলতে। অনেকে শুনলে হয়তো বলবে পাগল, হয়তো মনে করবে যে কিছু…। সত্যি বলতে আমি বিশ্বাস করছিলাম। আমার বিশ্বাস খুব ভালো ছিল। আমার কাছে একবারও মনে হয়নি ম্যাচটা হারবো। শুধু একটা কথা বারবার বলছিলাম, আমার মনে যেটা চলছিল, আমি পারবো। বারবার নিজেকে বলেছি আমি পারবো, আমি পারবো।’
৯ উইকেট পতনের পর আপনার পরিকল্পনা কি ছিল? মিরাজ বলেন,‘যখনই যে লাস্টের ব্যাটার ছিল- হাসানকেও একই কথা বলেছি যে চার-পাঁচটা বল যদি তুমি খেলতে পারো তাহলে আমার জন্য সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি যেভাবে চিন্তা করছিলাম হয়তো এবাদতকে নিয়ে ১৫ রান করবো, হাসানকে নিয়ে ২০ রান করবো। মোস্তাফিজকে নিয়ে শেষে ১৫-২০ রান যা লাগে, করবো। এভাবেই আমার চিন্তা ছিল।’
১ উইকেটে ভারতকে হারানো ম্যাচের পর মিরাজ আরো বলেন,‘কিন্তু তারপরও পরপর দুই উইকেট পড়ে গেছে। শেষ উইকেট যখন ছিল- তখন তো ডু অর ডাই। মানে হারানোর কিছু নাই। তখন তো ঝুঁকি নিতেই হবে। ঝুঁকিটা এমন নিয়েছি… মোস্তাফিজের কথা খুব ভালো লেগেছে- ওর কথা কানে বাজছিল তখন নিজের মধ্যে নিজের বিশ্বাস তৈরি হয়েছে।
আমি যদি ওই মুহুর্তে চিন্তা করি হেরে যাব। শুরুতে ঝুঁকি নিয়েছি। ১৪ রান বা ১০ রানের সময় একটু বেশি এক্সাইটেড ছিলাম, এত কাছে এসে যদি হেরে যাই। এর আগে এমন হয়েছে আমাদের সাথে। মোস্তাফিজ বলেছে, ওপর দিয়ে খেলার দরকার নাই।
ও শুধু আমাকে বলছিল, সাহস দিচ্ছিল। আমি যেন ওকে নিয়ে টেনশন না করি। “আমি ঠেকিয়ে দিব।” নিজের গেমপ্ল্যান আমি নিজে সাজিয়েছি, কোন বোলারকে মারব, কোনদিক দিয়ে মারব। যেগুলো রিচে পেয়েছি, সেগুলো অ্যাটাক করেছি। ২-৩টা ওপরে দিয়েছি, চান্সও দিয়েছি, ওরা নিতে পারেনি। ক্যালকুলেটিভ রিস্ক নিয়ে খেললে খুব ভালো হয়।
মোস্তাফিজ যদি গিয়ে বলে, আমি আউট হবো না তুই খেল। তাহলে আত্মবিশ্বাস এমনিতেই বেড়ে যায়। এমন জায়গায় তো অন্যকে নিয়েই টেনশন করে। দাদা তো মাশাআল্লাহ ভালো করেছে। খুব ভালো চেঞ্জ করেছে। যাকে যখন দরকার। প্রথম ওয়ানডে ক্যাপ্টেন্সি করেছে মনেই হয়নি। সবাই সাপোর্টও দিয়েছে ভালো। এজন্য তার জন্য আরও সহজ হয়ে গেছে।
দুইটাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটা বেশি স্পেশাল। শেষ উইকেটে মেবি ৫১ রান লাগত। আমার জন্য এটা বেশি স্পেশাল। এখানে ব্যাটিং করা কঠিন ছিল। ব্যাটসম্যানরা কনফিউজড হয়ে যাচ্ছিল। সবাই ভালো করেছে। গত কয়েক বছর অনেক ভালো করেছি ওয়ানডেতে। ভারতের সঙ্গে ক্লোজ ম্যাচ হেরেছি। ওগুলো দুর্ভাগ্য ছিল। এটা একটা শুরু হলো।
বেশ কয়েকদিন ধরেই ভালো খেলছি ওয়ানডেতে। এটা বিশ্বাসের ব্যাপার। বারবার করলে বিশ্বাস চলে আসবে। ২০১৫ সালের পর থেকে এত ভালো খেলছি, বিলিভ সিস্টেম সবার ভালো আছে। যেভাবে বড় দলের বিপক্ষে জিতেছি, আমরা অনেক ক্লিয়ার। টি-টয়েন্টি বা টেস্টে একটু কনফিউজড থাকি। বিশ্বাসটা বেশি থাকে। দিনের শেষে আমরা অনেক ভালো বোলিং করেছি। উইকেটে টার্ন ছিল। ওরা হয়তো বুঝতে একটু দেরি করেছে। সাকিব ভাই অনেক ভালো করেছে ওই মোমেন্টে। সবাই টাইট বোলিং করেছে। বেশ কিছু দিন ওয়ানডে খেলিনি, বিসিএল সহায়তা করেছে। সবাইকে হেল্প করেছে।
ওরা রান করার তেমন সুযোগ দেয়নি শুরুতে। ভালো করতে থাকলে ব্যাটোসম্যানদের ভুল করার সুযোগ থাকে। ভারতেরও দ্রুত উইকেট পড়েছে। সবারই ব্যক্তিগত পরিকল্পনা থাকে, সে অনুযায়ী খেলছে। সমস্যা নিয়ে কাজ করব পরের ম্যাচে। এমন একটা ম্যাচ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ভারতের সঙ্গে ক্লোজ ম্যাচ হেরেছি। এটার পর থেকে ইনশাল্লাহ আমরা আরও স্ট্রংলি কামব্যাক করব।