চবির ১৮ শিক্ষার্থী শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন বিভাগ ১৮ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছে। বিভিন্ন সময় আবাসিক হল ভাঙচুর, সাংবাদিক হেনস্তা, মারামারিসহ বিভিন্ন শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত হওয়ার দায়ে ১৮ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে চবি প্রশাসন।
এছাড়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সতর্ক করেছে প্রশাসন। বহিষ্কারের আদেশ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া গতকাল মঙ্গলবার ১০ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ।
তিনি বলেন, ‘৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বহিষ্কারাদেশ সোমবার (৯ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হবে।’
বহিষ্কৃতরা হলেন- গত বছরের ১১ আগস্ট খালেদা জিয়া হলে ছাত্রীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় ইংরেজি বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের তাসফিয়া জাসারাত নোলককে দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া ২৬ সেপ্টেম্বর এক কর্মরত সাংবাদিককে শারীরিক ও মানসিক হেনস্তার ঘটনায় দুইজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এরা হলেন— লোকপ্রশাসন বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আরশিল আজিম নিলয় ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শোয়েব মোহাম্মদ আতিক।
গত বছরের ৮ অক্টোবর আলাওল হলের প্রভোস্ট কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনা সমাজতত্ত্ব বিভাগের ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের হাসান মাহমুদকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। একই ঘটনায় ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া গত ২ ডিসেম্বর এ এফ রহমান হলে দেশীয় অস্ত্র হাতে দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া, হল কক্ষ ভাঙচুরসহ মূল্যবান সম্পদ বিনষ্টকরণ ও কর্তব্যরত সাংবাদিকদের উপর হামলা হুমকি প্রদর্শন ঘটনায় ছয়জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এরা হলেন— সংস্কৃত বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের অনিক দাস, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অয়ন কান্তি সরকার, একই শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের লাবিব সাঈদ ফাইয়াজ, ইতিহাস বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সিফাতুল ইসলাম, একই বিভাগের ২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মো. মোবারক হোসেন ও একই সেশনের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের নাহিদুল ইসলাম।
এছাড়া বিভিন্ন শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার দায়ে আরও ছয়জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে প্রশাসন।
এরা হলেন— ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আমিরুল হক চৌধুরী, বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাখাওয়াত হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসেন ইলিয়াস, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ফাহিম, ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইকরামূল হক, দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নয়ন দেবনাথ।
শাটল ট্রেনে নাশকতার পরিকল্পনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সুনাম বিনষ্টের দায়ে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মো. জোবায়ের হোসেনকে দুই বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ডিসিপ্লিন কমিটির তিন সুপারিশ:
এদিকে বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ এন্ড ডিসিপ্লিন কমিটি কিছু সুপারিশ প্রদান করছেন। এগুলো হলো— আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় গোপন/সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী যেকোন মাদকাসক্ত ব্যক্তি, ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সম্ভাব্য মাদক বিক্রির স্পট ও মাদক সেবনের স্থানসমূহে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানকারী ছাত্রত্ববিহীন (প্রাক্তন/সাবেক/বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী) ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট নয়, এরূপ ব্যক্তিবর্গদের ক্যাম্পাস ত্যাগকরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথা পুলিশ, ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় গ্রহণ করা যেতে পারে এবং সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত একাধিক ঘটনায় দেখা যায় যে, কতিপয় জুনিয়র শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসদাচরণ, সন্ধ্যা পরবর্তী/রাতে সংঘর্ষে জড়ানো, অনিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন, বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অন্ধকারাচ্ছন্ন করাসহ সামগ্রিক বিষয়টি ‘ওভার সুপেরিয়টি’তে ভোগার শামিল। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগের সুপারিশ করছে।