জলরঙে আঁকা সোনামোড়ল হাওর

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫ সময়ঃ ৪:২৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:২৭ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

489x334xJolrongeAka.jpg,qe5d36a.pagespeed.ic.53HTNTALnHসূর্যডোবা পথ। বড়াই নদীর ধারে চুপচাপ বসে আছে এক কানিবক। সবুজ ঘাসের চাদরে ছেয়ে আছে সে নদীর দুই কূল। কোনো ভাঙনের চিহ্ন নেই।

এক দিক তার চলে গেছে মেঘালয়ের দিকে। বিকেলের দিকেই নদীটিতে ছিল বৃষ্টির জলের রূপময় ফোঁটা। একঝাঁক দেশি হাঁস জলকেলিতে মেতেছিল তখন।

সকাল থেকে নদীই একমাত্র চলার পথ। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ থেকে ট্রলারে করে এলাম ধর্মপাশা। সেখান থেকে নৌকায় সোনামোড়ল। প্রথমে সুরমা তারপর বাউলাই নদী হয়ে ধর্মপাশার সুখাইর বাজার নামার আগেই জেনেছি, এটাই সোনামোড়ল হাওর। দেখে মনে হলো জলরঙে আঁকা ছবি। করচগাছের শৈল্পিক পাতার বিন্যাস, শীতল ছায়া ভাবনায় ফেলে দেয় মনকে।

সুখাইর এলাকাবাসীর কাছে জানা গেল, এখানে একটি বড় হিজল-করচের বাগান আছে। নাম কাট্টগোড়াবাগ। হাওরবাসী বনকে বাগ বলে। হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম কাট্টগোড়াবাগের কাছে। প্রায় ২০০ একর জায়গাজুড়ে এ বনের বেশির ভাগ গাছই হিজল। করচের সংখ্যা কম। কারণ করচ ইতিমধ্যে কাটা হয়ে গেছে।

এক লোক জানালেন, তাঁদের দাদার আমলে এ বনে বাঘ থাকত। এখন নেই। বনের পাশের একটি লম্বা জলাশয়ের কাছে দেখা মিলল দেশি মেটে হাঁস, পাতিমুরগি, শামুকখোলা পাখির। বনের পাশ ধরে হাঁটতে হাঁটতে কালাপানি গাঙ বা কাউনাই নদীর দিকে যেতেই চোখে পড়ল এক পাখি। ছেলেবেলা থেকেই কানিবক দেখে আসছি, কিন্তু এ রঙের আর দেখিনি।

পাখিটি ছিল বিপন্ন চায়নিজ পন্ড হেরন বা চীনা কানিবক। পরিযায়ী এ বকটি দেখতে আমাদের চিরচেনা কানিবকের মতো, কিন্তু মাথা, ঘাড় ও বুকের কাছের পালক গাঢ় মেরুন। উড়লে সে রং দেখা যাবে না, কেবল বসলেই দেখা যায়। কাউনাই নদীটির মাঝখানটায় জলজ আগাছা জন্মে দ্বীপের মতো একটি আকার ধারণ করেছে। হঠাৎ সেখানে উড়ে এল একটি কুড়া ইগল। লেজের রিংটি ভালোভাবেই দেখা গেল এবার।

এবারের গন্তব্য জামালগঞ্জের গোলকপুর বাজার। বৃষ্টির পর প্রকৃতি অফুরন্তভাবে আকর্ষণ করে। এখানের করচের ভেজা পাতা, ঠান্ডা বাতাসের শিহরণ, পাখিদের ডানার জল ঝাড়ার দৃশ্য কখনোই ভোলার নয়। বড়াই নদী দেখতে দেখতে একসময় চানপুরার বাগে এসে চোখে পড়ল হাজার খানেক শামুকখোলা পাখির। বরুণগাছে গাদাগাদি করে বসা ছিল পাখিগুলো।

সোনামোড়ল ছেড়ে চলে যাচ্ছি। পাখি দুটি শেষ সীমানায় এসেই বিদায় জানাল। কিছুক্ষণ পর আবার সুরমায় গিয়ে পড়লাম। সোনামোড়ল হাওর চোখ থেকে দূরে চলে গেল। নতুন এক সূর্যোদয়ের অপেক্ষায় রইল পাখি দুটি।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ, সূত্র:প্রথম আলো

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G